বৃহস্পতিবার ● ২১ জুলাই ২০২২
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » সন্তু লারমার কাছে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের আহ্বান
সন্তু লারমার কাছে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের আহ্বান
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়ে পাহাড়ের দুই নারী সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙামাটি শহরে আঞ্চলিক পরিষদের সামনে মানববন্ধন করেছে।
গতকাল ২০ জুলাই বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় দুই সংগঠনের নেতা কর্মীরা এই মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করেন। এ সময় তারা সংঘাত বিরোধী বিভিন্ন শ্লোগান দেয় এবং সন্তু, তোমার খুনের রাজনীতি বন্ধ কর, ‘খুনী সম্ভর শান্তি চাই’, ‘সন্তু, ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধ কর’, ‘সন্তু, আর কত রক্ত চাই তোমার?’, ‘সন্তু, আর কত মায়ের বুক খালি করবে তুমি?’ ইত্যাদি শ্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
এছাড়া প্ল্যাকার্ডের আরও কয়েকটি শ্লোগান ছিল সন্তু দালালি বন্ধ কর, আন্দোলনের পথ ধর’, ‘চাবাই মারমার খুনী সন্তু তোমার রক্ষা নেই’, প্রদীপ লাল, কুসুম প্রিয় চাকমার খুনী সন্তু তোমার রক্ষা নেই’, ‘সন্তু আর কত ভাইয়ের প্রাণ ঝরলে তুমি ক্ষান্ত হবে?’, জীবন ত্রিপুরার খুনী সন্তুর রক্ষা নেই’।
মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী নীতি চাকমা। সন্তু লারমার কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘চারিদিকে এত ভূমি বেদখল হচ্ছে, মা-বোন ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, লাঞ্ছিত অত্যাচারিত অপমাণিত হচ্ছে। এত নির্যাতন চলছে। তারপরও আপনি তার বিরুদ্ধে টু শব্দটি পর্যন্ত না করে কেন ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত জিইয়ে রেখেছেন, আমরা তার উত্তর চাইতে এসেছি।’
চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বললেও তার জন্য আন্দোলন না করায় নীতি চাকমা সন্তু লারমার সমালোচনা করেন এবং বলেন, ‘আপনি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলনের কথা বলেন, আবার সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করার কথা বলেন, প্রয়োজনে রক্ত দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু আপনার এসব কেবল কথার কথা, আপনি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করেন না, বরং আন্দোলনের বিরোধীতা করেন, যারা আন্দোলন করতে চায়, তাদের বাধা দেন, তাদেরকে খুন করেন।
সন্তু লারমাকে একজন সুবিধাবাদী ও সরকারের দালাল আখ্যায়িত করে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী বলেন, আঞ্চলিক পরিষদের গদি রক্ষার জন্য সরকারের সেনাবাহিনীর দালালি করেন। জুম্ম জনগণ আপনাকে চিনেছে, বিশ্ববাসী আপনাকে চিনে ফেলেছে। আপনি একজন দালাল, চরম সুবিধাবাদী। নিজের সুবিধার জন্য, নিজের গদি রক্ষার জন্য এমন কোন কুকাজ নেই আপনি করতে পারেন না। আপনি এই গদি রক্ষার জন্য শাসকগোষ্ঠীর পক্ষ হয়ে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত জিইয়ে রেখেছেন। আপনি গদি রক্ষার জন্য নিজের দলের কর্মীদের বলি দিচ্ছেন, সাধারণ জনগণকে বলি দিচ্ছেন, জন্ম জাতিকে জিম্মি করে রেখেছেন। তবে মনে রাখবেন এ জন্য ইতিহাস আপনাকে কোনদিন ক্ষমা করবে না। জুম্ম জাতি আপনাকে ক্ষমা করবে না।’
ইউপিডিএফের সাথে করা সমঝোতার শর্ত ভঙ্গের জন্য এইচডব্লিউএফ নেত্রী সন্তু লারমার সমালোচনা করে বলেন, ‘আপনি বিভিন্ন সময় ইউপিডিএফের সাথে সমঝোতা করেছেন। কিন্তু সমঝোতা লঙ্ঘন করেছেন। ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারীতে খাগড়াছড়ির হারাঙহিয়া সমঝোতা, ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম সমঝোতা এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারীর সমঝোতা জেএসএস লঙ্ঘন করে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তিনি সন্তু লারমাকে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করে ২০১৮ সালের সমঝোতার শর্ত মেনে চলতে ও সরকাররের দালালি বন্ধ করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন ‘চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য কর্মসূচি দিন। আমরা তাতে সমর্থন দেবো। ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে, নারীধর্ষণের বিরুদ্ধে, অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে ইউপিডিএফের সাথে মিলে আন্দোলনের কর্মসুচি দিন, আমরা তাতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে অংশগ্রহণ করবো।’
নীতি চাকমা তার বক্তব্যে সরকারেরও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা সন্ত্রাস দমনের কথা বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের কথা বলেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষার কথা বলেন। কিন্তু জনগণ জানে কারা সন্ত্রাস করছে, কারাসন্ত্রাসীদের লালন পালন করছে, কারা সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে। নব্য মুখোশ নামে যারা পরিচিত, তাদেরকে কারা আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে?’
সন্ত্রাসীরা কিভাবে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পের পাশে অবস্থান করে খুন, অপহরণ, গুম, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজ করে বেড়াতে পারে প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘কারা জুম্ম রাজাকারদের নিয়ে অপারেশনে যায় আর তাদেরকে সন্ত্রাসী হামলা চালাতে সহযোগিতা দেয়, প্রটেকশন দেয়? খাগড়াছড়ির স্বনির্ভরে দিন দুপুরে পুলিশ বিজিবির নাকের ডগায় ব্রাশ ফায়ার করে গণহত্যা চালানো হলো, এতে ইউপিডিএফের নেতা কর্মীসহ ৭ জন খুন হলো কই হামলাকারী নব্যমুখোশদের তো আজ পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হলো না। তাহলে আপনারা কেমন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করেন? কোন মুখে আপনারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কথা বলেন??
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাস বন্ধের জন্য নব্য মুখোশদের আশ্রয় প্রশ্রয় ও মদদ দেয়া বন্ধ করা, তাদেরকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সন্তু লারমাকে গ্রেফতারের দাবি জানান।
গত ২৪ বছরে ইউপিডিএফের ৩৩৫ জন নেতা কর্মী ও সমর্থককে হত্যা করা হয়েছে, যার মধ্যে কেবল সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএসের হাতে ২৬২ জন খুন হয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন এবং সন্তু লারমাকে প্রশ্ন করেন, ‘আর কত জনকে হত্যা করলে, আর কত রক্ত ঝরলে, আর কত মায়ের কোল খালি হলে আপনি ক্ষান্ত হবেন?’
রাঙামাটিতে পাহাড়ি কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় নিন্দা
রাঙামাটি সরকারি কলেজের পার্শ্ববর্তী এলাকায় গতকাল সন্ধ্যায় তিনজন বাঙালি সেটলার যুবক কর্তৃক এক পাহাড়ি কলেজ ছাত্রীকে (১৯) ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ।
আজ বুধবার (২০ জুলাই ২০২২) হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি রিমি চাকমা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের রাঙাামটি জেলা শাখার সভাপতি রিনিশা চাকমা সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া এক যুক্ত বিবৃতিতে এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার সময় রাঙামাটি সরকারি কলেজের পার্শ্ববর্তী টিটিসি সংলগ্ন এলাকায় ছেলে বন্ধুর সাথে বেড়াতে যাওয়া এক পাহাড়ি কলেজ ছাত্রীকে তিন জন বাঙালি সেটলার যুবক জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্ত সেটলার যুবকদের পেয়েও তাদেরকে গ্রেফতার না করে উল্টো ওই ছাত্রীর বন্ধুকে থানায় নিয়ে গিয়ে হয়রানি করেছে।
বিবৃতিতে তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে নারী ধর্ষণ-নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধি পেলেও প্রশাসন ও সরকার নির্বিকার থাকায় দুর্বৃত্তরা এ ধরনের ঘটনা সংঘটিত করতে সাহস পাচ্ছে।
সেটলার বাঙালিদের কারণে পাহাড়ি নারীদের নিরাপত্তা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে উল্লেখ করে নেতৃদ্বয় বলেন, শাসকগোষ্ঠির পক্ষপাতদুষ্টতার কারণে সেটলার বাঙালিরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ফলে পাহাড়ি নারীরা কোথাও আর নিরাপদে চলাফেরা করতে পারছে না। এ যাবত সেটলার কর্তৃক সংঘটিত পাহাড়ি নারী ধর্ষণ-নির্যাতনের ঘটনাগুলোর বিচার ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা না হওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে তারা মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় গতকাল রাঙামাটিতে সংঘটিত ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত ধর্ষণ চেষ্টাকারী সেটলার যুবকদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে যথোপযুক্ত বিচার ও শাস্তি, নারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে সেটলার বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সমতলে সরিয়ে নেওয়া এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত সংঘটিত নারী ধর্ষণ-নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানান।





কাউখালীর দুর্গম এলাকায় ইউপিডিএফের বাধা সত্ত্বেও সেনাবাহিনীর মানবিক কার্যক্রম সম্পন্ন
আট সংগঠনের স্মারকলিপি : রাঙামাটিতে জনসংখ্যানুপাতে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে জেলা পরিষদকে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম
কাপ্তাইয়ে গুজব প্রতিরোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা শীর্ষক মতবিনিময় সভা
চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে অবস্থানকারীদের সাথে কোনো জোট নয় রাঙামাটিতে হাসনাত আব্দুল্লাহ
বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটার তৈরিতে কাজ শুরুর কথা জানালেন আসিফ আকবর
আগামী কাল বিপ্লবী যুব সংহতির রাঙামাটি জেলা কাউন্সিল