বুধবার ● ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » নওগাঁ » আত্রাইয়ে নাগর নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ভেসে গেল ১৫টি পরিবার
আত্রাইয়ে নাগর নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ভেসে গেল ১৫টি পরিবার
নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি : নওগাঁর আত্রাইয়ে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। গত কয়েকদিন থেকে অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার প্রায় ৮০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর সাথে সাথে বিলাঞ্চলের পানিও ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নাগর নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ১৫টি বাড়ি পানির শ্রোতে ভেসে গেছে।
উজানের পানি নেমে আসায় আহসানগঞ্জ, সমসপাড়া, কাশিয়াবাড়ি, চকশিমলা, বুড়িগঞ্জ হাটসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে মানুষের কেনা বেচাও বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার হাটকালুপাড়া ইউনিয়নের চকশিমলা, বড়শিমলা, সন্যাসবাড়িসহ ১৪ টি গ্রামের পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। কালিকাপুর ইউনিয়নের ২৫ গ্রামের লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের দমদমা, ঘোষপাড়া, আমপুর, দাঁড়িয়াগাথী, সিংসাড়া, থাঐপাড়া, পাঁচুপুর ইউনিয়নের বাঁকিওলমা, কাঁন্দওলমা, গোপালবাটি, মধ্যবোয়ালিয়া, জয়নাথপুর, মধুগুড়নই, পাঁচুপুরসহ ৮ ইউনিয়নের ২ শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
এদিকে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে উপজেলার সাধনগর গ্রামে নাগর নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায় ১৫টি বসতবাড়ি ভেসে গেছে। এইক রাতে আত্রাই রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন ভরতেঁতুলিয়া গ্রামের রাস্তা ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এতে করে ওই গ্রামের শতশত পরিবার আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়াও বন্যাকবলিত বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ২০০ কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কাশিয়াবাড়ি স্লুইগেটে উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় আত্রাই-পতিসর সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে হাজার হাজার মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে।
এ ব্যাপারে হাটকালুপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুস শুকুর সরদার জানান, এবারের প্রথম, দি¦তীয় ও তৃতীয় ধাপের বন্যায় উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে আমার ইউনিয়নটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ এবং পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ। তারা এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং ত্রাণ তৎপরতা সচল রাখতে সকলের প্রতি তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন।
এদিকে বন্যাকবলিত মানুষদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে আত্রাই উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ছানাউল ইসলাম উপজেলার বন্যাকবলিত বিভিন্ন গ্রামে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বন্যার্ত কোন মানুষ যেন অণাহারে বা অর্ধাহারে না থাকে। সে নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা বন্যার্তদের সর্বাতœক সহযোগিতা করছি। প্রয়োজনের আরও সহযোগিতা করা হবে। সেই সাথে স্থায়ীভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
এ পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আত্রাই উপজেলার বন্যার্ত বানভাসী মানুষের মাঝে যে পরিমান ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন অসহায় বানভাসী মানুষেরা।
নওগাঁ-৬ আসনের উপ-নির্বাচনে জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনা
আত্রাই প্রতিনিধি :: আগামী ১৭অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের উপ-নির্বাচন। যাচাই-বাছাই শেষে গত ২৮ তারিখে প্রার্থীদের মাঝে প্রতিক বরাদ্দের পর থেকে মাঠে নেমেছেন সরকার দলীয় প্রার্থী আনোয়ার হোসেন হেলাল। অপরদিকে মাঠে নেমেছে বিএনপির প্রার্থী শেখ মো: রেজাউল ইসলাম রেজু। ফলে দুই উপজেলা সদর থেকে তৃণমূল সর্বত্রই বইছে নির্বাচনী হাওয়া। মূল সড়ক ও অলিগলিতে শুরু হয়েছে নৌকা-ধানের শীষের স্লোগান।
চায়ের দোকানের আড্ডার আলোচনায়ও নির্বাচন। সোমবার নওগাঁ-৬- আত্রাই-রাণীনগর সংসদীয় আসনে উপনির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে প্রতীক পাওয়ার পরপরই বিভিন্ন এলাকায় (নৌকা) প্রতীক নিয়ে আনোয়ার হোসেন হেলাল ও (ধানের শীষ) প্রতীক নিয়ে শেখ মো. রেজাউল ইসলাম রেজুসহ স্ব-স্ব দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা গনসংযোগে নেমেছে।
এছাড়াও নাশন্যাল পিপলস পার্টির প্রার্থী ইন্তেখাব আলম রুবেল আম প্রতিক নিয়ে অনিয়মিত নির্বাচনের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। দল মনোনীত প্রার্থীদের প্রতীক জানা থাকায় আগে থেকেই প্রস্তুতি ছিলেন নেতাকর্মীরা। ফলে তারা দ্রুত দলীয় প্রতীকের হ্যান্ডবিল নিয়ে প্রচার শুরু করেন।
মঙ্গলবার বিকেলে নৌকার পক্ষে এক বিশাল নির্বাচনী র্যাালী বের হয়ে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক পদক্ষিন করে। রাণীনগর রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয় থেকে উপজেলা আওয়ামীলীগ, যুবলীগের যৌথ আয়োজনে র্যালীতে উপস্থিত ছিলেন নওগাঁ-৬ আসনের নৌকা মার্কার মনোনীত প্রার্থী আনোয়ার হোসেন হেলাল।
র্যালী শেষে সন্ধ্যায় উপজেলা বাসস্ট্যান্ড গোল চত্বর এলাকায় পথসভায় আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, এই আসনের উন্নয়নসহ সারা দেশের সার্বিক উন্নয়নে এলাকাবাসি খুশি হয়ে বারবার নৌকা প্রার্থীকে বিজয়ী করেছে। ইনশাল্লাহ্ আগামী ১৭ অক্টোবর দিন ব্যাপি উন্নয়নের প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোটাররা ভোট দিয়ে আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে। আত্রাই-রাণীনগরে উন্নয়ন আর জনগণের জানমালের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমার শক্ত অবস্থান থাকবে। এলাকাবাসি সার্বিক নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সাথে নিয়ে কাজ করে যাবো। এই ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো গোষ্ঠির কাছে মাথা নত করবো না।
অপরদিকে ধানের শীষের মনোনীত প্রার্থী শেখ মো. রেজাউল ইসলাম রেজু একই দিন রাণীনগর উপজেলার কনৌজ, হরিশপুর, আতাইকুলা গ্রামসহ বিকেলে ত্রিমোহনী হাটে গণসংযোগ করেছেন। রেজু নির্বাচনী পথসভায় অভিযোগ করে বলেন সরকার দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা প্রতিক বরাদ্দের আগেই তোরন বানিয়েছে। রাণীনগর উপজেলায় বিএনপি সমর্থিতদের কোন প্রকারের নির্বাচনী কর্মকান্ড করতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রচার শুরুর পর থেকে আমার পোস্টার ছিড়ে ফেলা হচ্ছে। আমার দলের লোকদের ভয়ভীতি প্রদান করা হচ্ছে। একেমন আচরন। বিষয়গুলো প্রশাসনকে জানিয়েও আজ পর্যন্ত কোন লাভ হয়নি। গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে আমি নির্বাচনে এসেছি এই নির্বাচনে প্রচারণার ক্ষেত্রে কোনে ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে এর দায়ভার সরকার দলীয় প্রার্থীকে নিতে হবে। ভোটাররা যে ভাবে ধানের শীষের পক্ষে সারা দিচ্ছে। সাধারন মানুষরা যদি ভোট দেওয়ার সুযোগ পায় তাহলে আগামী ১৭অক্টোবর আমি বিপুল ভোটে জয়ী হবো।