শিরোনাম:
●   ঈশ্বরগঞ্জে শিক্ষামূলক লিফলেট বিতরণ ●   মিরসরাইয়ে কিশোরীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে যুবদল নেতাকে বহিষ্কার ●   প্রকৌশলী সজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আ’লীগ পূণঃগঠনের অভিযোগ ●   খাদ্যে উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ : খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার ●   জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সন্ত্রাসীদের রাজনৈতিক বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করছে ●   দিনাজপুর বন বিভাগের ৫হাজার একর জমি বেদখল ●   রাঙামাটিতে বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহারে বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন ●   নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সংকটের সমাধান করবেনা ●   শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এর রাবিপ্রবি প্রকল্প পরিদর্শন ও মতবিনিময় ●   হবিগঞ্জ সরকারি মেডিকেল কলেজ রক্ষার দাবিতে মতবিনিময় সভা ●   রাবিপ্রবিতে ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত ●   ঈশ্বরগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেফতার-৫ ●   সরকারের দ্বৈত ভূমিকায় দেশবাসী উদ্বিগ্ন ●   বিশ্বেকবির জন্ম জয়ন্তীতে নতুন রুপে আত্রাইয়ের রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি ●   ২৫ শে বৈশাখ রবীন্দ্রনাথের ১৬৪ তম জন্মদিনে সেজেছে কুঠিবাড়ি ●   ফটিকছড়িতে ২.৫ কোটি টাকার সরকারি জমি উদ্ধার ●   খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ৭৯ ভারতীয় মুসলিম পুশ ইন ●   ফটিকছড়িতে রাস্তা দখলে হামলা ●   রাঙামাটিতে সীরাত প্রতিযোগিতার পুরুস্কার ও সনদ বিতরণ ●   প্রতিবেশীকে কুপিয়ে জখম, বাবা-ছেলে গ্রেফতার ●   সিগারেটে মূল্যস্তর সংখ্যা কমানোর দাবি ●   খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে ভারত কর্তৃক পুশইনের ঘটনা রীতিমতো উসকানিমূলক ●   নারীর অসম্মান জুলাই গণ অভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী : জুঁই চাকমা ●   বেতবুনিয়াতে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান ●   বেতবুনিয়াতে বিদ্যালয়ের সেগুন গাছ বিক্রি করার অভিযোগ সভাপতি মংথুই প্রু এর বিরুদ্ধে ●   ঈশ্বরগঞ্জে ১৫ কেজি গাঁজাসহ আটক-২ ●   নারীবিদ্বেষী অশুভ তৎপরতা বহির্বিশ্বেও বাংলাদেশকে খারাপভাবে চিত্রিত করছে ●   মতবিনিময় সভা থেকে দৃশ্যমান কিছু যেন হয় সেই বিষয়ে ভূমিকা রাখবো ইনশাআল্লাহ : ডিসি রাঙামাটি ●   বাংলাদেশ কোনভাবেই ভারত - পাকিস্তান যুদ্ধ উত্তেজনার অংশ হবেনা ●   ঈশ্বরগঞ্জে যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার-১০
রাঙামাটি, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২



CHT Media24.com অবসান হোক বৈষম্যের
শনিবার ● ৫ ডিসেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » কৃষি » দেউলবাড়ী-দোবরা ভাসমান সবজি চাষ বিশ্ব স্বীকৃতী অর্জন
প্রথম পাতা » কৃষি » দেউলবাড়ী-দোবরা ভাসমান সবজি চাষ বিশ্ব স্বীকৃতী অর্জন
শনিবার ● ৫ ডিসেম্বর ২০২০
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

দেউলবাড়ী-দোবরা ভাসমান সবজি চাষ বিশ্ব স্বীকৃতী অর্জন

ছবি : সংবাদ সংক্রান্তশেখ সাইফুল ইসলাম কবির,বিলাঞ্চল থেকে ফিরে :: পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার বিলাঞ্চল দেউলবাড়ী-দোবরা, কলারদোয়ানিয়া ও মালিখালী ইউনিয়নের জলাভ‚মির বাসিন্দাদের ব্যতিক্রমী উদ্ভাবন ভাসমান বীজতলা ও সবজি চাষ। স্থানীয়দের কাছে যা ধাপ চাষ নামে পরিচিত। দু’শত বছরেরও কিছু আগে থেকে চলে আসা এ বিরল কৃষি পদ্ধতি আজ দেশ ছাড়িয়ে বিশ্ব স্বীকৃতী অর্জন করেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই স্বীকৃতিপত্র বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করেছে।
জলাভ‚মির এক সময়কার অনন্যোপায় বাসিন্দারা আপন মেধায় এ বিশেষ ধরনের কৃষি কৌশল অবলম্বন করে দারিদ্র জয়ের পাশাপাশি নিজেরা স্বাবলম্বী হয়েছেন। অপর দিকে দেশের এরূপ জলাবদ্ধ বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দাদের জীবন জীবিকার লড়াইয়ে টিকে থাকতে পথ দেখিয়েছেন। কৃষি বিশেষজ্ঞরাও বর্তমানে জলমগ্ন জলাভ‚মিতে এ ধরনের বিশেষ পদ্ধতির চাষাবাদের প্রশিক্ষনসহ কৃষকদের ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করছেন। এমনকি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের ক্রমাগত উচ্চতা বৃদ্ধিতে অদূর ভবিষ্যতে দক্ষিণ অঞ্চলসহ বাংলাদেশ ভ‚খন্ডের কৃষি ভ‚মি জলমগ্নের যে আশঙ্কা করা হচ্ছে সেক্ষেত্রে এ পদ্ধতির চাষাবাদ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার অনেকটাই নিশ্চয়তা দিচ্ছে।
নাজিরপুর উপজেলার মুগারঝোর, বেলুয়া, চিথলিয়া, উত্তর কলারদোয়ানিয়া, গাওখালী, মনোহরপুর, পদ্মডুবি, বিলডুমুরিয়া, গজালিয়া প্রভৃতি গ্রামের শত শত একর জলাভ‚মিতে বানিজ্যিকভাবে ধাপের উপর শাক সব্জির চারা উৎপাদন হয়। অর্থকরী ও লাভজনক হওয়ায় স্ব-উদ্ভাবিত এ বিশেষ পদ্ধতির চাষাবাদ এলাকার কৃষকের কাছেও অত্যান্ত প্রিয়। জানা যায়, নাজিরপুরের বিলাঞ্চলের কৃষকদের স্বরূপকাঠী উপজেলার চামী ও গগন, বানারীপারা উপজেলার বিশারকান্দি, মরিচবুনিয়া, উমারেরপার, কদমবাড়ী এবং পশ্চিম মলুহারসহ বিভিন্ন গ্রামের জলাভ‚মিতে ব্যাপক হারে ধাপ চাষ হচ্ছে। এ ছাড়া গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার বর্নীর বিল, মুকসুদ পুরের চান্দার বিল, কোটালীপাড়ার বাইগ্যারবিলসহ দেশের জলমগ্ন জলাভ‚মির কৃষকেরা এ বিশেষ পদ্ধতির চাষাবাদে মনোযোগী হয়ে উঠেছে।
জানা যায়, বছর পাঁচেক আগে নাজিরপুর উপজেলার বিশিষ্ট কয়েকজন ধাপ চাষী ও উপজেলা কৃষি বিভাগের লোকজন চট্টগ্রামের কাপ্তাই হ্রদে সেখানকার কৃষকদের ভাসমান পদ্ধতির এ চাষাবাদ হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে এসেছেন। শীঘ্রই যশোরের ভবদহ বিলেও এখান থেকে একটি টিম কৃষকদের ভাসমান বীজতলা বা ধাপ পদ্ধতির চাষের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে যাবেন।
নাজিরপুর উপজেলা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার উত্তরে বৈঠাকাটা বাজার সন্নিহিত মুগারঝোর গ্রামের জলাভুমিতে নয়নাভিরাম ব্যাতিক্রমী এ চাষাবাদের ব্যাপকতা দেখা মেলে। বর্ষার শুরু অর্থাৎ আষাঢ় থেকে কার্তিক পর্যন্ত এ পাঁচ মাস কৃষকদের ভাসমান ধাপের উপর ৪১ প্রজাতির শাকসব্জির চারা উৎপাদন ও তা বিক্রির সময়। আষাঢ়ে এসব গ্রামের নীচু জমি পানিতে প্লাবিত হওয়ার সাথে সাথে কৃষকরা নেমে পড়ে ধাপ চাষে। কচুরিপানা, দুলালীলতা, শ্যাওলা, টেপাপানা, গুড়িপানা ইত্যাদি জলজ উদ্ভিদের সাথে খড়কুটা এবং নারিকেলের ছোবড়াগুড়া মিলিয়ে স্তরে স্তরে সাজিয়ে তৈরী করা হয় ভাসমান বীজতলা বা ধাপ। যা পচে তৈরী হয় জৈবসার। ১০০-১৮০ ফুট লম্বা ৫-৬ ফুট চওড়া এবং এক-দেড় ফুট পুরু বীজতলা পানিতে তৈরী হয়, যা থাকে ৮-১০ ফুট পানিতে ভাসমান। পুরুষরা ধাপ তৈরী, চারা স্থাপন, পরিচর্যা ও চারা বিক্রির কাজ করে। নারীরা ও ছোট ছেলে মেয়েরা বাড়ীতে বসে চারা তৈরীর প্রাথমিক স্তর অর্থাৎ বীজের অঙ্কুরোদগম ঘটানোর কাজ করে। শ্যাওলা, নারিকেলে ছোবরা ইত্যাদি দিয়ে ছোট ছোট বল আকারের বস্তু তৈরী করে থাকে। স্থানীয় ভাষায় একে টেমা বা দৌল্লা বলে। এর মধ্যে বীজ রেখে অঙ্কুরোদগম ঘটানো হয়। যা পরে ভাসমান বীজতলা বা ধাপের উপর স্থাপন করে নির্দিষ্ট সময় পরিচর্যার পর চারায় পরিনত করা হয়।
এ ছাড়া ধাপের উপর সরাসরি কিছু কিছু সব্জির অংকুরোদগম ঘটানো হয়। ধাপচাষীরা লাউ, সিম, বেগুন, বরবটি, করল্লা, পেঁপেঁ, টমেটো, শশা, পুইশাক, মিষ্টি কুমড়া, চালকুমড়া, মরিচ, টমেটো ইত্যাদি শাকসব্জি ও মশলার চারা তৈরী করে ধাপের উপর। কেউ কেউ লাল শাক, ঢেড়স, হলুদ ইত্যাদিও ফলায়। দক্ষিনাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকারী ক্রেতারা এসে ক্ষেত থেকে শাকসব্জির চারা ক্রয় করে নৌপথে নিয়ে তা সব্জি আবাদকারীদের কাছে বিক্রি করে।
মুগারঝোর গ্রামের ধাপচাষী রুহুল আমীন (৩৫) জানান, অতিবৃষ্টিতে বিপর্যয় না ঘটলে (আষাঢ় থেকে কার্তিক) পাঁচ মাসে চার বার চারা উৎপাদন করে বিক্রি করা যায়।
কৃষক আলাউদ্দিন গাউস (৬০) জানান, তার বার্ষিক আয়ের প্রধান উৎস ধাপ চাষ। তিনি বছরে এই চাষ দিয়ে দু’আড়াই লাখ টাকা লাভ করেন। তিনি আরো জানান, ১০০ ফুট দীর্ঘ একটি ধাপ তৈরী এবং সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির চারা উৎপাদনে পাঁচ মাসে খরচ হয় ৬/৭ হাজার টাকা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে ঐ চারা বিক্রি হয় ১৬/১৭ হাজার টাকা। চারা তোলা শেষে কান্দির সব্জি ক্ষেতেও ধাপ ব্যবহার হয়, যা জৈবসারের কাজ করে। এই গ্রামের নবতিপর কৃষক সেকেন্দার আলী । তাঁর বয়স যখন ৪০ তখন থেকে এই ধাপ পদ্ধতি চালু হয়েছে এবং নিজে ঐ সময় থেকে এ চাষে নিয়োজিত হন। এই অঞ্চলে এরূপ বিরল ও ব্যতিক্রমী এ চাষ পদ্ধতির তিনি এজন পথিকৃত। এখন ছেলে, ছেলে বউ নাতি বউ এরা এ চাষের সাথে সংশ্লিষ্ট। এ প্রবীন কৃষক বলেন ঘরের বৌ ঝিরা এখনকার মত আগে এ কাজ করত না। বর্তমানে মহিলারা এ কাজে পুরুষদের সহায়তা করায় চাষের খরচ কমেছে ও লাভ বেড়েছে।
এদিকে এ ধাপ চাষকে কেন্দ্র করে নাজিরপুর বিল অঞ্চলে গাঁওখালী, বৈটাকাটা ও মনোহরপুর বাজারে ধাপ তৈরীর বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদের হাট বসছে এখন সবজি চাষের ভরা মৌসুম তাই সবজি চাষে ব্যবহৃত এ সকল জলজ উদ্ভিদ সংগ্রহ ও বিক্রি করেও শতশত লোকের জীবন জীবিকাও চলছে।





আর্কাইভ