

সোমবার ● ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » রাঙামাটি জেলা পরিষদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ০৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
রাঙামাটি জেলা পরিষদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ০৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
স্টাফ রিপোর্টার :: সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য, নির্বাহী প্রকৌশলী ও ঠিকাদারসহ নয় জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
আজ ৮ সেপ্টেম্বর-২০২৫ সোমবার দুপুরে রাঙামাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. আহসান তারেক এ আদেশ দেন।
আদালতের জারিকৃত গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় যাদের নাম আছে তারা হলেন : জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য সবির কুমার কুমার, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী আবদুস সামাদ ও বিরল বড়ুয়া, সহকারী প্রকৌশলী জ্যোতির্ময় চাকমা, উপসহকারী প্রকৌশলী রিগ্যান চাকমা, ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মানুনুর রশীদ, ঠিকাদার চিং হেন রাখাইন, মিলন তালুকদার ও অমলেন্দু চাকমা।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-১৭ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত বরকল উপজেলায় বিভিন্ন অবকাঠামো ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জেলা পরিষদ থেকে একাধিকবার অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু বরাদ্দের বিপরীতে মাঠ পর্যায়ে কোনো দৃশ্যমান কাজ হয়নি।
স্থানীয়ভাবে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, অনেক প্রকল্প কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে।
এঘটনায় ২০২৩ সালের ৮ জুন দুদকের রাঙামাটি সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আহমেদ ফরহাদ হোসেন বাদী হয়ে পৃথক চারটি মামলা দায়ের করেন।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে দুদক চার্জশিট জমা দিলে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেন এবং আজ সোমবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
আইনজীবী অ্যাডভোকেট জুয়েল দেওয়ান সাংবাদিকদের জানান, রাঙামাটি জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য, প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে দায়ের করা চারটি মামলায় পর্যাপ্ত প্রমাণের ভিত্তিতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। আদালত আসামিদের অপরাধ আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে বরকলসহ রাঙামাটির প্রত্যন্ত অঞ্চলের উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়ে আসছে। ফলে সরকারি অর্থ ব্যয় হলেও এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নের তেমন কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। আদালতের এ পরোয়ানা ভবিষ্যতে দুর্নীতি দমনে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে চলমান মামলাগুলোর কার্যক্রমও দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
মামলার এজহারে যা আছে :
প্রথম মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, রাঙামাটির বরকল উপজেলার ৪ নম্বর ভূষণছড়া ইউপির অন্তর্গত কামিনী চাকমার জমির ওপর মৎস্য বাঁধ ও পাকা সেচ ড্রেন নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৩ টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
এ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া, সহকারী প্রকৌশলী জ্যার্তিময় চাকমা, উপ- সহকারী প্রকৌশলী রিগ্যান চাকমা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সমৃদ্ধি এন্টারপ্রাইজ। প্রকল্পটি ২০১৭-১৮ অর্থবছর গৃহীত হয়েছে বলে জানানো হয় এজাহারে।
২য় মামলার এজাহারে বরকল উপজেলাধীন সুবলং বাজার পানীয় জলের ব্যবস্থাকরণসহ গভীর নলকূপ স্থাপন প্রকল্পর মাধ্যমে ৬ লাখ ৫১ হাজার টাকা আত্মসাৎ অভিযোগ করা হয়। এ মামলায় উপরোক্ত তিন প্রকৌশলীর পাশাপাশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাংচিং এন্টারপ্রাইজের চিংহন রাখাইনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটিও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে গৃহীত হয়।
৩য় মামলার এজাহারে বরকল উপজেলাধীন সুবলং ইউনিয়ন সুবলং কমিউনিটি সেটের ঘর ও পাকা সিঁড়ি নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। মামলায় তিন প্রকৌশলীর পাশাপাশি জেলা পরিষদের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী (বর্তমান সিলেট কর্মরত) কাজী আবদুস সামাদ, ঠিকাদার অমলেন্দু চাকমা ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য সবির কুমার চাকমার নামে মামলা হয়।
৪র্থ মামলার এজাহারে বরকল উপজেলাধীন পূর্ব এরাবুনিয়া মৎস্য বাঁধ থেকে হারুন টিলা এলাকার আহাদের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার নামক প্রকল্পের মাধ্যমে ৯ লাখ ৩৯ হাজার ৯৫৩ টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। প্রকল্পটি গৃহীত হয় ২০১৬-১৭ সালে এবং প্রকল্পে ব্যয় ছিল ১০ লাখ টাকা। তবে তদন্তে উক্ত স্থানে কোনো মৎস্য বাঁধ এবং হারুন টিলা নামের কোনো জায়গা পাওয়া যায়নি।
এ মামলার আসামিরা হলেন : নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী আবদুস সামাদ, সহকারী প্রকৌশলী জ্যার্তিময় চাকমা, উপ-সহকারী প্রকৌশলী রিগ্যান চাকমা, ঠিকাদার নাংচিং এন্টারপ্রাইজের চিংহন রাখাইন, ৪নং ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ ও জেলা পরিষদ সদস্য সবির কুমার চাকমা ।