শিরোনাম:
●   উচ্চশিক্ষার্থে নরওয়ে যাচ্ছে চুয়েটের ৮ শিক্ষার্থী ●   উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কমবে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ ●   আগামীতে কারা দেশ চালাবে ? …সাইফুল হক ●   পার্বত্যবাসীর কল্যাণে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে : পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী ●   কাউখালীতে প্রান্তিক পর্যায়ে মহিলা সমাবেশ অনুষ্ঠিত ●   চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস রেগুলেশন ১৯০০ বাতিলসহ কেএনএফের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নির্মূলে যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রাখার দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের সংবাদ সম্মেলন ●   খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে ইউপিডিএফের ডাকা আধাবেলা অবরোধ পালিত ●   শিক্ষা বিস্তারে প্রাথমিক শিক্ষকদের গুরুত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ : রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপি ●   স্কুলের মালামাল নিয়ে যাওয়ায় থানায় অভিযোগ ●   সন্দ্বীপে অগ্নিকাণ্ডে ৪টি দোকান পুড়ে ছাই ●   কুষ্টিয়াতে সামাজিক দ্বন্দে স্বজনদের হামলায় ভাতিজা নিহত ●   আবারো উত্তপ্ত রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা ●   রাজধানীতে তিন পার্বত্য জেলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ বিপনী বিতান উদ্বোধন ●   প্রেমিকার সঙ্গে বিয়ে না হওয়ায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে পল্লী চিকিৎসকের আত্মহত্যা ●   এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েও শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত পূর্ণ বিশ্বাসের ●   উপজেলা পরিষদ নির্বাচন : বিয়ানীবাজারে প্রতিক বরাদ্দ ●   রাঙামাটি লেকসিটি নার্সিং কলেজে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস পালন ●   তহসিলদার শরিফুলের ঘুষ বাণিজ্যে অতিষ্ঠ ভুক্তভোগীরা ●   ঈশ্বরগঞ্জে কোটি টাকা ইজারা বকেয়া আদায়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা ●   গুইমারায় সাজাপ্রাপ্ত তিন আসামী গ্রেফতার ●   মিল্টন সমাদ্দারের আশ্রম থেকে উদ্ধার করা সেলিমের কিডনি সচল অপুষ্টি ও রক্তস্বল্পতায় ভোগছেন ●   দাখিলেও দেশসেরা ঝালকাঠি এনএস কামিল মাদরাসা ●   সীমান্ত সড়ক পশ্চাদপদ পার্বত্য অঞ্চলকে উন্নয়নের স্রোতধারায় একীভূত করেছে ●   মিল্টন সমাদ্দারের কেয়ার থেকে উদ্ধারকৃত সেলিমের কিডনি অক্ষত ●   আইনজীবি সমিতির কার্যকরি কমিটির সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় এডভোকেট মঈনুলকে সংবর্ধনা ●   ঈশ্বরগঞ্জে টেন্ডার ছাড়াই স্কুলের মালামাল বিক্রির অভিযোগ সভাপতির বিরুদ্ধে ●   পাইন বাগান নব নির্মিত মাদরাসার ভবন ও হেফজ খানার উদ্বোধন ●   বামপন্থী নেতা হায়দার আকবর খান রনোর মৃত্যুতে বিভিন্ন সংগঠনের শোক ●   ঘোড়াঘাটে ট্রাক চাপায় মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীর মৃত্যু ●   রাবিপ্রবিতে GST গুচ্ছভুক্ত C ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
রাঙামাটি, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১



CHT Media24.com অবসান হোক বৈষম্যের
রবিবার ● ১০ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » উপ সম্পাদকীয় » সাঁওতাল পল্লীতে আগুনের অভিযোগপত্র প্রসঙ্গে
প্রথম পাতা » উপ সম্পাদকীয় » সাঁওতাল পল্লীতে আগুনের অভিযোগপত্র প্রসঙ্গে
৪৬৭ বার পঠিত
রবিবার ● ১০ নভেম্বর ২০১৯
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

সাঁওতাল পল্লীতে আগুনের অভিযোগপত্র প্রসঙ্গে

---সালেক খোকন :: সাঁওতাল সমাজে প্রচলিত একটি কাহিনী তুলে ধরছি প্রথম। এক গাঁয়ে বাস করতেন সাত ভাই। তারা খুবই শিকারপ্রিয় ছিলেন। একবার দূর দেশে যান শিকারে। বড় একটি পাহাড়। গহিন জঙ্গল রয়েছে ওই পাহাড় ঘিরে। সেখানে বিরাট আকারের একটি হিংস্র পাখির বাস। স্থানীয়রা ডাকেন ‘গরুড় পাখি’। পাখিটি শিকারিদের দেখেই হিংস্র হয়ে ওঠে। একে একে সে সাত ভাইকেই মেরে ফেলে। ফলে কেউ আর সাত ভাইয়ের সন্ধান পান না।

ভাইদের মধ্যে সংসারী শুধু বড় ভাই। তিনি রেখে গিয়েছিলেন এক পুত্রসন্তান। দিনে দিনে সে বড় হয়ে ওঠে। যুবক বয়সে মার কাছে জানতে চায় বাবা-চাচাদের কথা। মা জানান, শিকারে গিয়ে আর ফিরে আসেননি তারা। হয়তো গরুড় পাখি আক্রমণ করেছে তাদের! বেঁচে আছে, নাকি মরে গেছেন কেউ জানেন না।

সব শুনে সাঁওতাল যুবকটি শপথ নেয়। বাবা-চাচার হত্যাকারী পাখিটিকে যে করেই হোক শিক্ষা দিতে হবে। সে তীর-ধনুক নিয়ে রওনা হয় দূর দেশে, সেই পাহাড়ের গহিনে। কয়েক দিন পথ চলে আসে পাহাড়ের ওই স্থানে। যেখানে তার পূর্বপুরুষদের হত্যা করা হয়েছিল। তাকে দেখেই হিংস্র পাখিটি রাগে টগবগ করতে থাকে। অতঃপর আক্রমণ করতে ছুটে আসে তার দিকে। যুবকটিও তীর-ধনুক নিয়ে প্রস্তুত থাকে। কাছে আসতেই পাখিটির বুকে ধনুক বিদ্ধ করে। সঙ্গে সঙ্গে হুমড়ি খেয়ে পড়েই পাখিটি মারা যায়।

যুবকটি তখন দেখে সেখানকার মাটিতে পড়ে আছে সাতটি নরকঙ্কাল। এগুলো নিশ্চয়ই তার বাবা-চাচার! তা দেখে সে কান্নায় ভেঙে পড়ে। ওই সময় আসমান থেকে নেমে আসেন এক দেবতা। সাঁওতাল যুবকটিকে তিনি শান্ত করলেন। অতঃপর তার হাতে একটি জলভর্তি ঘটি আর কিছু নির্দেশনা দিয়েই আকাশে মিলিয়ে যান।

যুবকটি নরকঙ্কালগুলো কাপড়ে ঢেকে তাতে ওই জল ছিটিয়ে দেয়। অমনি কঙ্কালগুলো জীবিত হয়ে তার বাবা-চাচায় রূপ নেন। তা দেখে সাঁওতাল যুবক খুশিতে হয় আত্মহারা। তাদের নিয়ে বীরের বেসে সে ফিরে সাঁওতাল গ্রামে। আজও এমন বীরত্বের গল্পে সাঁওতাল শিশুরা নিজেকে তৈরি করে নেয় প্রকৃতজন হিসেবে।

টিকে থাকার ও ভূমির অধিকারের জন্য সংগ্রাম করা এ দেশে বসবাসরত সাঁওতালদের কাছে পূর্বপুরুষদের বীরত্বের কাহিনীগুলো আজও প্রেরণা জোগায়। প্রতিবাদের সময় তারা স্মরণ করে সাঁওতাল বিদ্রোহের নায়ক সিদু-কানুকেও। অধিকারের জন্য লড়াই করতে গিয়ে এ দেশে জীবন দিয়েছেন অনেক সাঁওতাল। কিন্তু রূপকথার মতো সেখানে আসেনি কোনো দেবতা। বরং তাদের জীবনে হিংস্র গরুর পাখি ফিরে এসেছে বারবার, নানাভাবে। ফলে এ প্রজন্মের সাঁওতালরা বাঁচিয়ে আনতে পারেননি তাদের পূর্বপুরুষদের। তাই মনের ভেতর পুষে রাখা কষ্ট নিয়ে লড়াই ও প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়া গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালরা কয়েক দিন আগেই পালন করলেন সাঁওতাল হত্যা দিবসটি, যা কখনোই প্রত্যাশিত ছিল না।

ঘটনাটি ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর তারিখের। গোবিন্দগঞ্জের রংপুর চিনিকলের বিরোধপূর্ণ জমিতে আখ রোপণকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতাল ও বাঙালিদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে রমেশ, শ্যামল হেমব্রম ও মঙ্গল মাদ্রি নিহত ও অন্তত ৩০ সাঁওতাল আহত হন। এ ছাড়া আহত হন ৯ পুলিশ সদস্যও। পরে সাঁওতালদের দুই শতাধিক ঘর পুড়িয়ে দেয় পুলিশ। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় ওই সাঁওতাল পল্লীটি। এ ঘটনাটিরই তিন বছর পূর্তি উদ্যাপন করা হলো ‘সাঁওতাল হত্যা দিবস’ নামে।

ওই ঘটনার পর একটি বিদেশি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঘটনার সময় সাঁওতালদের বসতির পাশেই দাঁড়িয়ে অনেক পুলিশ গুলি করছে এবং কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে। একপর্যায়ে তাদেরই মধ্য থেকে মাথায় হেলমেট এবং বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিহিত এক পুলিশ সদস্য সাঁওতালদের বাঁশ এবং ছনের তৈরি ঘরের কাছে গিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। মুহূর্তেই সে আগুন পাশের ছনের ঘরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় এ খবরের ভিডিওটি। ফলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় চরমভাবে। বিতর্কিত হয় পুলিশ প্রশাসনও।

এত বড় ঘটনার উপযুক্ত শাস্তি হবে এমনটাই প্রত্যাশা ছিল সবার। কিন্তু সম্প্রতি ওই ঘটনায় করা মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সেখানে ৯০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হলেও পুলিশের জড়িত থাকার বিষয়টি আসেনি একেবারেই। অথচ ওইসময় হাইকোর্টের নির্দেশে আদালতে পুলিশের আইজির তরফ থেকে একটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছিল। সেখানে সরাসরি আগুন দিয়েছে এমন দুজন পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করা এবং তাদের সাময়িক বরখাস্ত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানানো হয়, যা উঠে আসে গণমাধ্যমেও। তারপরও অভিযোগপত্রে পুলিশের সংশ্লিষ্টদের নাম না দেওয়ার বিষয়টি আবার পুলিশের ভাবমূর্তিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মনে করেন অনেকেই।

তিন বছর কেটে গেলেও কেমন আছেন গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালরা? হামলায় আহত চরেন সরেনের হাত ও পায়ে লেগেছিল পুলিশের গুলি। টাকার অভাবে ক্ষতস্থানের চিকিৎসাও তেমন করতে পারেন না এখন। আহত বিমল কিসকুও চান হামলার সুষ্ঠু বিচার। বার্নবাস টুডু ওইদিন চোখের সামনে আগুনে ছাই হতে দেখেছেন তিল তিল করে গড়ে তোলা বসতবাড়িটি। সে দৃশ্য মনে হলে আজও তার বুকের ভেতরটা খামচে ধরে। সরকারিভাবে আশ্রয়ণ প্রকল্পে আশ্রয় দেওয়ার উদ্যোগ নিলেও সাঁওতালরা চান তাদের বাপ-দাদার জমিতেই থাকতে। ওই জমি ফেরতে তারা সরকারি উদ্যোগ আশা করেন। ঘটনার পর থেকে মাদারপুর ও জয়পুরপাড়ায় ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করছেন সাঁওতালরা। সম্প্রতি চিনিকল কর্তৃপক্ষ জমি দখল করে আবার বসতি গড়ে তোলার অভিযোগ তুলেছে তাদের বিরুদ্ধে। এ নিয়েও চাপা ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে সাঁওতালদের মনে।

পিবিআইয়ের চার্জশিট প্রত্যাখ্যান এবং পূর্ণ তদন্ত করে জড়িতদের অন্তর্ভুক্তসহ সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন সাঁওতালরা। তারা বলছেন হামলার মূল পরিকল্পনাকারী সাবেক এমপি, চিনিকলের এমডি, সাবেক ওসি, পুলিশ সদস্যসহ জড়িতদের বাঁচানোর জন্য চার্জশিটে নাম আড়াল করা হয়েছে। তাই পুনরায় তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের নাম অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান তারা। পাশাপাশি চান গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্মের রিকুইজিশন করা আদিবাসী ও বাঙালিদের সম্পত্তি ফেরত দেওয়া হোক। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ পুড়িয়ে দেওয়া স্কুলটি পুনর্নির্মাণের দাবি করেন সাঁওতালরা।

এ দেশে সাঁওতালসহ অন্যান্য জাতিসত্তার মানুষ আজও পাননি তাদের ভূমির ন্যায্য অধিকারটুকু। বিশেষ করে সমতলের অধিকাংশ জমি ছিল কালেকটিভ। জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের পর সেগুলো জমিনদারি খাস হয়ে যায়। এখনো অনেক এলাকায় অন্য জাতিসত্তার মানুষ থাকছেন, চাষ করছেন এমন জমিকে সরকার খাস হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ ছাড়া ব্যক্তি মালিকানার জমিগুলোও সাঁওতালসহ অন্যান্য জাতির মানুষ দখলে রাখতে পারছেন না। প্রশাসনের এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার সহযোগিতায় জমিগুলো দখল করে নিচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালী বাঙালিরা। এ নিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটছে হরহামেশাই। তাই সমতলের জাতিগুলোর অধিকার রক্ষায় আলাদা কার্যকর ভূমি কমিশন গঠন করা এখন জরুরি। সেই সঙ্গে জমির ওপর তাদের প্রথাগত মালিকানারও স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।

বর্তমান সরকার ও প্রধানমন্ত্রী অন্য জাতিসত্তার মানুষদের অধিকারের বিষয়ে আন্তরিক এমনটাই বিশ্বাস করেন তারা। কিন্তু যখন শিশু ধর্ষিত হয়, ভিন্ন জাতির নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়, উচ্ছেদের নামে গুলি করে হত্যা করা হয় সাঁওতাল যুবককে তখন আস্থার সংকট তৈরি হতে থাকে সরকারের প্রতিও। তাই রাষ্ট্রকেই আন্তরিক হতে হবে সাঁওতালসহ অন্যান্য জাতিসত্তার মানুষের দাবিগুলোর বিষয়ে। সৌজন্য : দেশ রুপান্তর

লেখক : লেখক ও আদিবাসীবিষয়ক গবেষক
contact@salekkhokon. net





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)