

বৃহস্পতিবার ● ২৬ জুন ২০২৫
প্রথম পাতা » সকল বিভাগ » নবীগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা
নবীগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা
নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি :: নবীগঞ্জ উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার ২৬ জুন দুপুরে উপজেলা পরিষদ হলরুমে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন নবীগঞ্জ থানার ওসি শেখ মো. কামরুজ্জামান, উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার পাল হিমেল, নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছনি আহমেদ চৌধুরী, দীঘলবাক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছালিক মিয়া, বাউসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাদিকুর রহমান শিশু, উপজেলা প্রকৌশলী সাব্বীর আহমেদ, সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদ উল্লাহ, শিক্ষা কর্মকর্তা রিপন চন্দ্র সরকার, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম মো. আসাদুজ্জামান অনুজ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. রাকিবুল ইসলাম, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জাকারিয়া, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নুসরাত ফেরদৌসী, পরিবার পরিকল্পনা অফিসের সহকারী কর্মকর্তা মনোরঞ্জন দাশ, ক্ষুদ্র কৃষি উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি উজ্জল কুমার সিংহ, আনসার ও ভিডিপি প্রশিক্ষক রাজন আহমেদ এবং বিভিন্ন ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাবৃন্দ।
সভায় দীঘলবাক ইউপি চেয়ারম্যান ছালিক মিয়া ও বাউসা ইউপি চেয়ারম্যান সাদিকুর রহমান শিশু তাদের এলাকায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও মাদকের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পুলিশি টহল বাড়ানোর দাবি জানান। মামলা দায়ের হলেও আসামিরা ধরা না পড়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
উপজেলা হিন্দুবৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার পাল হিমেল সম্প্রতি ঘটে যাওয়া চুরি-ডাকাতির ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে শুক্রবার নবীগঞ্জের রথযাত্রায় সবাইকে আমন্ত্রণ জানান এবং অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট বাহিনীর সহযোগিতা কামনা করেন।
নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছনি আহমেদ চৌধুরী বলেন, প্রতি মাসে সভায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়, সিদ্ধান্ত হয়— কিন্তু সেগুলোর বাস্তবায়ন না থাকায় পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। তিনি নবীগঞ্জ শহরের এক ব্যবসায়ীর বাসায় চুরি, আউশকান্দি বাজারে ডাকাতি, বনগাঁও গ্রামে সিএনজি চুরিসহ নানা ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।
তিনি অভিযোগ করেন, মাদক ও জুয়ার সঙ্গে জড়িতদের তথ্য দেওয়া হলেও পুলিশ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অন্যদিকে, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর নামে রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় কর্মী-সমর্থক ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হলেও অতীতে সাধারণ মানুষের ওপর নিপীড়ন নির্যাতন চালানো অপরাধীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। তিনি এ অভিযানের নামে পুলিশের বিতর্কিত ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তবে চলন্ত বাসে তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামি গ্রেফতার করায় পুলিশকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
সভায় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছনি আহমেদ চৌধুরী, নবীগঞ্জ-রুদ্রগ্রাম, পানিউমদা-শমসেরগঞ্জ, করগাঁও-গুমগুমিয়া, কান্দিগাঁও-মোহাম্মদপুর, বাংলা বাজার-গহরপুর সড়কগুলোর বেহাল দশার কথা উল্লেখ করেন এবং তিনি বলেন এসব সড়ক এখন ‘মৃত’। বহুবার আলোচনার পরও এলজিইডি কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি অথচ বিভিন্ন সড়কে নিম্নমানের কাজের বিল ছাড় করতে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগও উঠে আসে।
ওসি শেখ মো. কামরুজ্জামান বলেন, বিগত সভায় প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাকে হুমকি ও বিভিন্ন সামাজিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফেসবুকে অপপ্রচারের বিষয় নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। আমরা আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেবো। তিনি জানান, চুরি-ডাকাতি দমনে কাজ চলছে, সিএনজি চোর চক্রের বড় একটি সিন্ডিকেটকে ধরতে পুলিশ তৎপর। মাদক ও জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযানও চলমান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সম্প্রতি অভিযান চালিয়েছে। তিনি বলেন, ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করা হবে বলেও জানান তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে ইউএনও মো. রুহুল আমিন বলেন, সিএনজি চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক ও জুয়ার বিরুদ্ধে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে আরও কার্যকর হতে হবে। পাহাড় কাটার ঘটনায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। নবীগঞ্জ-রুদ্রগ্রামসহ ভাঙা সড়কগুলো দ্রুত মেরামত বা পুনর্নির্মাণের জন্য ঢাকায় প্রস্তাবনা পাঠাতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
সভায় জনতার বাজার পশুর হাটে ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর হামলার ঘটনার মামলার আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারেরও আহ্বান জানানো হয়।