

শুক্রবার ● ২৭ জুন ২০২৫
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার বক্তব্য সংবিধান বিরোধী অবস্থান
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার বক্তব্য সংবিধান বিরোধী অবস্থান
বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ‘আদিবাসী’ পরিচয়ের দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার বক্তব্যকে নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিশ্লেষক ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বক্তব্য সরাসরি সংবিধানের ৬ (২) অনুচ্ছেদ বিরোধী এবং ভবিষ্যতে জাতিগত উত্তেজনা উসকে দিতে পারে।
উল্লেখ্য, ২৩ জুন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন, ২০১০’ সংশোধন করে ‘নৃ-বৈচিত্র্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান অধ্যাদেশ, ২০২৫ (প্রস্তাবিত)’ প্রণয়নের বিষয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এতে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সু প্রদীপ চাকমা।
বৈঠকে দেশের সাতটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের নাম পরিবর্তন করে ‘জাতি বৈচিত্র্য ইনস্টিটিউট’ রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ।
সভার আলোচনায় সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, “আমরা আদিবাসী শব্দটি চাচ্ছি শুধু আমাদের আইডেন্টিফিকেশনের জন্য। আমরা পাহাড়ি-বাঙালি একসাথে থাকতে চাই। কারণ বাঙালিরা না থাকলে আমাদের উন্নয়ন সম্ভব নয়।” এই বক্তব্যে রাষ্ট্রীয় সহাবস্থানের বার্তা থাকলেও, একইসঙ্গে তিনি স্পষ্টভাবে ‘আদিবাসী’ পরিচয়ের দাবিকে সামনে এনে সংবিধান বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রফেশনালসের পরিচালক ও সংবিধান বিশ্লেষক ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন বলেন, “এই বক্তব্য শুধু সাংবিধানিক পরিভাষার লঙ্ঘন নয়, বরং ভবিষ্যতে জাতিগত রাজনীতি ও সাংগঠনিক আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টার অংশ। ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে একটি শ্রেণি কৌশলগতভাবে নিজেদের জাতিসত্তার বিশেষীকরণ করতে চায়, যা বাংলাদেশের একক ও অভিন্ন জাতিসত্তার ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”
তিনি আরো বলেন, “আলোচ্য সভায় ৭ (ঘ) ধারা সংশোধনের মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীভুক্ত ৬ জন প্রতিনিধি রাখার প্রস্তাব স্পষ্টভাবে সাংগঠনিক একচেটিয়াকে প্রণোদনা দেয়। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব আরও সংকুচিত হবে। এটি সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট করে দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি করছে।”
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সংবিধানের ৬ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: “রাষ্ট্রের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি এবং নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের নাগরিক হইবে।” অথচ সু প্রদীপ চাকমা নিজেই রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা হয়ে এই সাংবিধানিক ধারা অস্বীকার করে জাতিগত স্বতন্ত্রতা প্রতিষ্ঠার ভাষায় কথা বলেছেন, যা একজন দায়িত্বশীল পদধারীর জন্য সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈষম্যহীন রাষ্ট্রব্যবস্থায় জাতিগত বৈচিত্র্যকে সম্মান জানানো যায়, তবে সেটিকে সংবিধানবিরোধী রাজনৈতিক দাবিতে রূপ দেওয়া হলে তা দমন করতে হবে আইনি ও নীতিগতভাবে। নইলে পার্বত্য অঞ্চলে সহাবস্থানের পরিবর্তে বিভাজনের রাজনীতি প্রাধান্য পেতে পারে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বসবাসরত বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষায় সরকার ইতোমধ্যে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে এসব উদ্যোগ যেন বিভাজন সৃষ্টির হাতিয়ার না হয়-সে বিষয়ে জাতীয়ভাবে সতর্ক থাকা প্রয়োজন বলে মনে করছেন নীতি নির্ধারকরা।