

বুধবার ● ১৬ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » ঢাকা » শহীদদের রক্তের দাগ না শুকাতেই ভাগ বিভাজনের হিংসাশ্রয়ী রাজনীতি প্রবল হয়ে উঠেছে
শহীদদের রক্তের দাগ না শুকাতেই ভাগ বিভাজনের হিংসাশ্রয়ী রাজনীতি প্রবল হয়ে উঠেছে
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, জুলাই- আগস্ট গণ- অভ্যুত্থানের বীর শহীদদের রক্তের দাগ না শুকাতেই ক্রমেই ভাগ বিভাজনের হিংসাশ্রয়ী রাজনীতি আবার প্রবল হয়ে উঠছে। অভ্যুত্থানের শহীদেরা বৈষম্যহীন মানবিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য আত্মাহুতি দিয়েছিলেন গত এক বছরে দেশ তার বিপরীত দিকে হেটেছে। গত এক বছরে বৈষম্য আরও বেড়েছে, পয়ত্রিশ লক্ষ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্য সীমার নীচে নেমে এসেছে, বেডেছে বেকারত্ব।
একবছর পার হলেও এখনও শহীদ ও আহতদের পূর্ণাংগ তালিকা হয়নি, শহীদ ও আহত পরিবারসমূহের উপযুক্ত পুনর্বাসন হয়নি।
তিনি বলেন, গণ -অভ্যুত্থানে শ্রমজীবী মেহনতিরা সবচেয়ে বেশী জীবন দিলেও সরকারে তাদের কোন প্রতিনিধি রাখা হয়নি; বরং অনেক ক্ষেত্রে তাদের সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে।
তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের বিজয়ের পর দেশকে অনেকে গানিমাতের মাল বিবেচনা করছেন। রাজনৈতিক দল ও জনগণের অভূতপূর্ব সমর্থনকে সরকার কাজে লাগাতে না পারায় এবং তাদের প্রজ্ঞা ও কার্যকারিতা না থাকায় দেশে আধা নৈরাজ্যিক অবস্থা চলছে। এই পরিস্থিতির সুযোগ গ্রহণ করছে রাজনৈতিক লুম্পেন ও মাফিয়া সন্ত্রাসীরা। মানুষের জানমাল নিরাপদ হয়নি।
তিনি বলেন গণ -অভ্যুত্থানে নারীরা ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও এক বছরের মাথায় নারীরা আরও নিরাপত্তাহীন, নারী বিদ্বেষী তৎপরতাকে রাজনৈতিক মদদ যোগানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, গত এক বছরে দেশের নিরাপত্তা ঝুঁকি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সংস্কার ও নির্বাচন বিলম্বিত হলে এই নিরাপত্তা ঝুঁকি আরও বাড়ার আশংকা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তিনি সরকারকে তাদের এজেন্ডা ছোট করে এনে যাবতীয় বিতর্ক থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে বাস্তবে তত্বাবধায়ক সরকারের আদলেই কাজ করতে হবে এবং প্রয়োজনে সরকারের কলেবরকে ছোত করে আনতে হবে।
তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার আহবান জানান।
ছাত্র শ্রমিক জনতার জুলাই - আগস্ট গণ অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তীতে শহীদ আবু সাঈদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির দুই শহীদসহ সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আজ সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত শহীদ স্মরণ অনুষ্ঠানে তিনি উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন।
স্মরণ অনুষ্ঠানে পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী বলেন, গত বছরের জুলাই আগস্টের গণ - অভ্যুত্থান ছিল এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় গণজাগরণ - গণ প্রতিরোধ। পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি জনগণের এই অভ্যুত্থানকে দাংগা হিসাবে আখ্যায়িত করে তার গৌরবকে হেয় করতে চায়। তিনি বলেন, হাজারো শহীদের রক্তেভেজা এই গণ অভ্যুত্থান এক নতুন সম্ভাবনায় ভবিষ্যতের রাস্তা খুলে দিয়েছে। তাকে কোনভাবেই নষ্ট করা যাবেনা।
আকবর খান বলেন, গত ১৭ বছর বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইকে বিপ্লবী ধারায় এগিয়ে নিতে জানবাজি লড়াই করেছে পার্টি কর্মীরা শহীদ হয়েছে, মারাত্মক ভাবে আহত হয়েছে।এই আত্মত্যাগকে কারো হটকারিতায় আমরা বিফলে যেতে দেবনা।
পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই শহীদ স্মরণসভায় আরও বক্তব্য রাখেন পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীর রেজাউল আলম, কেন্দ্রীয় সংগঠক আবুল কালাম আজাদ, বাবর চৌধুরী, জামাল সিকদার, আহত জুলাই যোদ্ধা ফায়েজুত রহমান মুনির
প্রমুখ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের আহবায়ক শেখ আবদুর নূর।উপস্থিত ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য সাইফুর রেজা মামুন, স্নিগ্ধা সুলতানা ইভা, মহানগর কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন, জোনায়েদ হোসেন, চুন্নু সিকদার প্রমুখ।
শহীদ স্মরণ অনুষ্ঠানের পর বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে শহীদ আবু সাঈদ, শহীদ বদিউজ্জামাল ও আবদুল লতিফসহ গণ -অভ্যুত্থানের সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পার্টির ঢাকা মহানগর কমিটি, বিপ্লবী ছাত্র সংহতি,বিপ্লবী যুব সংহতি, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদ ও বিপ্লবী পাদুকা শ্রমিক সংহতির পক্ষ থেকে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
এরপর পার্টির সাধারণ সম্পাদক জননেতা সাইফুল হক এর নেতৃত্বে পার্টির নেতা কর্মীরা সম্মিলিতভাবে মুষ্টিবদ্ধ হাতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
এরপর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে পার্টির উদ্যোগে শহীদ স্মরণ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।
আজ সকালে রংপুরে শহীদ আবু সাঈদ, শহীদ বদিউজ্জামাল ও আবদুল লতিফ এর কবরে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আনছার আলী দুলালের নেতৃত্বে পার্টির নেতা কর্মীরা এই সময় উপস্থিত ছিলেন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা ও উপজেলা স্তরেও শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।