

বুধবার ● ১৬ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » ময়মনসিংহ » ঈশ্বরগঞ্জে ডাক্তারের অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যু
ঈশ্বরগঞ্জে ডাক্তারের অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যু
উবায়দুল্লাহ রুমি, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :: ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার ইমিউন প্রাইভেট হাসপাতালের ডাক্তারের অবহেলায় এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। নিহত ওই নারী উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের পস্তাইল গ্রামের মৃত হারুন মিয়া মেয়ে মনজিলা খাতুন (৩০)। গত ২০০৯ সাথে শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার মাটিয়াকুড়া গ্রামের শহীদুল ইসলামের সাথে বিয়ে হয়।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার মধ্য রাতে প্রসব ব্যথা ওঠায় মনজিলাকে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার ইমিউন প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার আগেই বাড়িতে স্বাভাবিকভাবে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। হাসপাতালে আনার পর দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর আরেকটি পুত্র সন্তানের স্বাভাবিক প্রসব হয়। তবে দ্বিতীয় নবজাতকের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় রাতেই তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।
স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর পুরো রাতজুড়ে কোনো চিকিৎসক প্রসূতির অবস্থা খোঁজ নেননি। রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিলেও মনজিলার ভাই হাফেজ আব্দুস শহীদ উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, তারা সকালে রক্ত নেবেন। তার আগেই ভোর ৫টায় মনজিলা মৃত্যুবরণ করেন।
আব্দুস শহীদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ডাক্তারের অবহেলাতেই আমার বোন মারা গেছে। আমি রক্ত দিতে চাইলেও তারা সকালে নেবে বলে জানায়। কিন্তু সকাল হবার আগেই আমার বোন চলে গেল। আমি আমার বোনের মৃত্যুর বিচার চাই।
জানা যায়, ইমিউন হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফরহাদ হোসেন তার ছেলে ফয়সাল আরেফিন এবং গাইনী চিকিৎসক পুত্রবধূ ডা. নাঈম সুলতানা সানী—এই তিনজনই হাসপাতালের অধিকাংশ অপারেশন পরিচালনা করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, এটি প্রথম কোনো মৃত্যুর ঘটনা নয়। অতীতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু প্রভাবশালী হওয়ার কারণে প্রতিবারই তা ধামাচাপা দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী পরিবার ৯৯৯-এ ফোন করে বিষয়টি অবহিত করলে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি পরিদর্শন করে পুলিশ।
এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফরহাদ হোসেন বলেন, ডাক্তারের অবহেলার অভিযোগ সঠিক নয়। আমার ছেলে ফয়সাল আরেফিন সারারাত ডিউটিতে ছিল।
ডা. ফয়সাল আরেফিন বলেন, হাসপাতালে আনার পর আমরা রোগীকে সর্বোচ্চ সেবা দিয়েছি। রোগীর মৃত্যু হওয়ায় স্বজনরা আবেগ প্রবণ হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে আভিযোগ করছেন। তবে এই বক্তব্যে ক্ষুব্ধ পরিবার বলছে, বাচ্চা প্রসবের পর থেকে রোগীর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কোন ডাক্তার তার খোঁজ নেননি।
ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম খান বলেন, ইমিউন হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ওবায়দুর রহমান বলেন, ৯৯৯ এর কল পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে একজন পুলিশ অফিসার ঘটনাস্থলে পাঠাই। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।