

বুধবার ● ১৬ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » দিনাজপুর » মধ্যপাড়া খনির পাথর পরিমাপ স্কেল নষ্টের কারনে : রেলওয়ের ৭১৩ কোটি টাকার প্রকল্প ভেস্তে
মধ্যপাড়া খনির পাথর পরিমাপ স্কেল নষ্টের কারনে : রেলওয়ের ৭১৩ কোটি টাকার প্রকল্প ভেস্তে
রুকুনুজ্জামান, পার্বতীপুর প্রতিনিধি :: পার্বতীপুর মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি প্রকল্প পাথর পরিমাপ স্কেল নষ্ট এবং নানান জটিলতার কারনে বন্ধ হয়ে যায় পাথর পরিবহন ফলে বাংলাদেশ রেলওয়ের ৭১৩ কোটি ১৬ লাখ ৭৪ হাজার টাকা প্রকল্প ভেস্তে।
সূত্র পর্যালোচনা করে জানা যায়, রেলপথে কঠিন শিলা (গ্রানাইট পাথর) ও কয়লা পরিবহন ছাড়াও রাজস্ব আয়ের বিষয়টি মাথায় নিয়ে ১৯৯৫ সালের দিকে কঠিন শিলা প্রকল্পে রেলপথের কার্যক্রম শুরু হয়। ভবানীপুর থেকে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি ও ভবানীপুর থেকে পার্বতীপুর জংশন পর্যন্ত ৩৯ কিলোমিটার রেলপথ বসায় রেল কর্তৃপক্ষ। রেললাইন স্থাপনের কাজ সমাপ্ত করে ২০০৫ সালে রেল কর্তৃপক্ষ তা খনি কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করে।
খনি সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে মধ্যপাড়া থেকে ৫৭ হাজার ৯৩১ টন পাথর শুধু রাজশাহী ও চট্টগ্রামে নেওয়া হয়। এর পর থেকে ওই রেলপথে আর কোনো পাথর নেওয়া হয়নি। অথচ রেলপথে পাথর পরিবহনে প্রতি টনে খরচ পড়ে মাত্র ৬০০ টাকা। সড়কপথে ওই পরিমাণ পাথর পরিবহন করতে লাগে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। এই হিসাব ধরা হয় মধ্যপাড়া থেকে ঢাকার দূরত্বে। অন্যদিকে, রেলপথ থাকার পরও পাথর পরিবহন না করায় সরকারের এককালীন মোটা অঙ্কের টাকার অপচয় এবং অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। বেসরকারিভাবে ক্রেতারা সড়কপথে খনি থেকে প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে তিন হাজার টন পাথর নিয়ে যায় দেশের নানা প্রান্তে।
এদিকে পাথর পরিমাপ স্কেল নষ্ট হলে বন্ধ হয়ে যায় পাথর পরিবহন। সেই সঙ্গে নানান জটিলতার কারনে ভেস্তে গেছে রেলপথে কঠিন শিলা ও কয়লা পরিবহনের উদ্যোগ। কোন মহলের নিরুৎসাহে রেলপথে পাথর পরিবহন বন্ধ হলো? যার ফলে রেল ও খনি কর্তৃপক্ষ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত, তার সদুত্তর কোনো পক্ষের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
রেলপথে পাথর পরিবহন বন্ধ হয় সঠিক পরিকল্পনার অভাব ও খনি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় কারনে। রেলপথে পাথর পরিবহন বন্ধের ফলে রেল ও খনি কর্তৃপক্ষ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে কোন পক্ষের নিটক থেকে সদুত্তর মিলেনি। সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিন এ রেলপথ অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকায় রেললাইনের ফিস প্লেটসহ অনান্য উপকরণ চুরি ও লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। অবকাঠামো ও রেললাইন সংলগ্ন জমি স্থানীয় ভূমিদস্যুরা কব্জায় নিয়েছে। পরিত্যক্ত থাকায় এ রেলভূমির উপর উদ্বাস্তুদের বাড়িঘর নির্মিত হয়েছে। উজাড় হয়েছে রেলভূমির গাছপালা। অবস্থা যা হয়েছে, তাতে আর কিছুদিন গেলে এ রেলপথের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।
খনির ও রেলওয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, খনির সীমানায় রেলপথের দায়িত্ব খনি ও তার বাইরের অংশের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রেল কর্তৃপক্ষের। তবে কার অবহেলা ও দায়িত্বহীনতায় কোটি টাকার সম্পদ চোখের সামনে হারিয়ে যাচ্ছে। তার দায় কে নিবে?
রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত পার্বতীপুরের পি ডাবলু আই আল আমিন বলেন, এ রেলপথ অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকায় প্রতিনিয়তিই চুরির ঘটনা ঘটছে। তার দপ্তরের যে ক’জন লোক রয়েছে, তা দিয়ে তো এ দীর্ঘ রেলপথ পাহারা দিয়ে রাখা সম্ভব নয়। রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জনবলের চাহিদা দিয়ে দেড় বছর ধরে চিঠিপত্র দিয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ ডি এম ফরিদুজ্জামানের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে প্রতিবারই ব্যস্ততার অজুহাতে এড়িয়ে গেছেন।
পশ্চিম রেলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, গ্রানাইট পাথর ও কয়লা পরিবহন চালু থাকলে রেলপথের এ অবস্থা হতো না। এর নানাবিধ কারণ রয়েছে। সে কারণে এ পাথর ক্রয়ে তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। জনবল সংকট অচিরেই কেটে উঠতে আমারা সক্ষম হব। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে এসব নেওয়া হলে মধ্যপাড়ার রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যা কেটে যাবে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানা যায়, নতুন করে এ পরিত্যক্ত রেলপথটি সংস্কার করতে আবারও বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় হবে।