

মঙ্গলবার ● ১৫ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » পার্বত্য চুক্তির ফলে ২৭ বছর ধরে পাহাড়ের বড়ুয়া’রা চরম ভাবে বৈষম্যের শিকার
পার্বত্য চুক্তির ফলে ২৭ বছর ধরে পাহাড়ের বড়ুয়া’রা চরম ভাবে বৈষম্যের শিকার
স্টাফ রিপোর্টার :: “বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যে অবসান চাই” শ্লোগান নিয়ে প্রায় ১ যুগ পরে আজ ১৫ জুলাই-২০২৫ ইংরেজি তারিখ মঙ্গলবার আরপি-৪২, রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল এলাকায় বেলা ১২টায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠন এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠন এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সভার সভাপতিত্ব করবেন সংগঠনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ বাদল বরণ বড়ুয়া।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো বেগবান,গতিশীল ও বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর যুব সমাজের প্রতিনিধি যুক্ত করার লক্ষ্যে এ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এবারের সাধারণ সভায় বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর আরো শ্লোগান ছিলো “কোন জনগোষ্ঠী যখন জাগে তখন ইতিহাস বদলায়”।
উক্ত সাধারণ সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ভদন্ত অদিতানন্দ মহাথেরো।
গত ৮ জুলাই-২০২৫ ইংরেজি রোজ মঙ্গলবার বড়ুয়াদের প্রতি বৈষম্যের অবসানের দাবিতে ঢাকা জাতীয় প্রেস ক্লাব জহুরুল হোসেন চেীধুরী হলে সংবাদ সম্মেলন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠন যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার বিষয় বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনের সকল বিষয়ে সাধারণ সভায় আলোচনা শেষে সর্বসম্মতি ক্রমে গত ৮ জুলাই-২০২৫ ইংরেজি তারিখের সংবাদ সম্মেলনের সকল বিষয় অনুমোদন করা হয়।
সাধারণ সভায় বক্তব্য রাখেন, ভদন্ত অজিতানন্দ মহাথেরো, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ বাদল বরণ বড়ুয়া, নির্মল বড়ুয়া মিলন, জিনপদ বড়ুয়া, শ্যামল চৌধুরী, প্রকাশ কুসুম বড়ুয়া, ইঞ্জিনিয়ার বুলবুল চৌধুরী, খোকন কান্তি বড়ুয়া, নিপুন বড়ুয়া জিকু অপু বড়ুয়া, বিপ্লব বড়ুয়া বাপ্পি, জুয়েল বড়ুয়া, দেবাশীষ বড়ুয়া, স্বাধীন বড়ুয়া নিশু, পলাশ বড়ুয়া, রুবেল বড়ুয়া, সাধন চন্দ্র বড়ুয়া, সমর জিৎ বড়ুয়া, নয়ন বিকাশ বড়ুয়া, তেমিয় বড়ুয়া, দেবদত্ত মুৎসুদ্দী, ডাঃ প্রকাশ বড়ুয়া, তপু বড়ুয়া, নেলী বড়ুয়া ও শান্তা বড়ুয়া প্রমূখ।
এসময় বড়ুয়া জনগোষ্ঠির নেতৃবৃন্দ বলেন, চুক্তির পর ২৭ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাসরত বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর সদস্যরা প্রতিটি স্তরে স্তরে বৈষম্যের শিকার। পার্বত্য চুক্তি বা শান্তি চুক্তির ফলে ২৭ বছর ধরে পাহাড়ের বাঙ্গালিরা (মুসলমান, হিন্দু ও বড়ুয়া) চরম ভাবে বৈষম্যের শিকার।
বক্তরা বলেন, আরো পরিষ্কার করে যদি বলা হয়, চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর সদস্য ব্যতীত মুসলমান, বড়ুয়া, হিন্দু, তনচঙ্গা, সাঁওতাল, অহমিয়া, গুর্খা, কুকি, পাংখোয়া, লুসাই (মিজু), চাক, খুমি, খিয়াং ও ম্রো জনগোষ্ঠীর সদস্যদের পিছিয়ে রাখা হয়েছে।
পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে মুসলমান, বড়ুয়া ও হিন্দু জনগোষ্ঠীর সদস্যদের বাঙ্গালি জনগোষ্ঠী তফসীল ভুক্ত করা হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, রাঙামাটি,খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদে মুসলমান ও হিন্দু জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হলেও বিগত ২৭ বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর কোন প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
পার্বত্য চুক্তির পর আঞ্চলিক পরিষদ, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানগণের সাথে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বৈঠক করা হয় অন্য সকল জনগোষ্ঠীর ন্যায় বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর আঞ্চলিক পরিষদ, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের কমপক্ষে ১জন করে প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য, তারা কেবল প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, রাঙামাটি,খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানগণ এবং সিনিয়র রাজনৈতিক নেতারা, তারা তাদের দেয়া কথা রক্ষা করেনি।
বিগত স্বৈরাচারের শাসনকালিন ১৭ বছর ধরে পাহাড়ে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর কিছু পদলেহনকারী স্বঘোষিত নেতার কারণে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে কথা বলা সুযোগ পর্যন্ত ছিলো না।
তারা বলেন, ৫ আগস্ট-২০২৪ তারিখে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠনের পর পার্বত্যবাসী আশায় বুক বাধে পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন যাবত বৈষম্যের শিকার বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর সদস্যরা ও বাঙালিদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং পিছিয়ে থাকা প্রত্যকটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সম্প্রদায়ও তাদের ন্যায্য অধিকার পাবে।
পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে নিয়োগ, শিক্ষা উপবৃত্তি ও উন্নয়ন কর্মকান্ডে দীর্ঘ সময় ধরে চলা বৈষম্যনীতির অবসান হবে। কিন্তু বর্তমান বৈষম্য বিরোধী চেতনাকে ধারণ করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক নতুনভাবে গঠিত তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে পূর্বের ন্যায় বৈষম্য অব্যাহত রয়েছে। যা বর্তমান সরকারের বৈষম্য বিরোধী চেতনা বিরোধী এবং জাতির কাছে কোনভাবে কাম্য নয়।
বক্তারা বলেন, ১৯৯৭ সালে ২রা ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তিটি বৈষম্যে ভরা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠন এর দাবি সমুহ :
(১) পার্বত্য চুক্তিটি সংশোধনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সহ তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা।
(২) পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংসদীয় কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মূল্যায়ন কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহায়তাকারী উপদেষ্টা কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন,পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এর বোর্ড সভায়, তিন পার্বত্য জেলা প্রশাসনে আইন শৃংখলা কমিটিতে, তিন পার্বত্য জেলার ২৬টি উপজেলা প্রশাসনে আইন শৃংখলা কমিটিতে, তিন পার্বত্য জেলার পৌরসভার শহর উন্নয়ন কমিটিতে বিশেষ বিবেচনায় বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা।
(৩) জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর শুমারির তথ্যে অধ্যায় ৩ রাঙামাটি জেলার শুমারির ফলাফল ৩.১.৪ এর ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যা ছকে বা খানায় বৌদ্ধ বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর সদস্যদের পরিচিতি আলাদা ভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এ শুমারি সম্পর্কিত অধিকতর তথ্য-উপাত্ত আলাদাভাবে ছকে বা খানায় বৌদ্ধ “বড়ুয়া” জনগোষ্ঠীর পরিচিতি সংযুক্ত করা।
(৪) রাষ্ট্রীয় ভাবে বৌদ্ধ “বড়ুয়া” জনগোষ্ঠীর সদস্যরা বৈষম্যের শিকার বিধায় তিন পার্বত্য জেলা বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে সংসদ সদস্য পদ সংরক্ষিত করে পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিকে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ করে দেয়া।
(৫) বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি হিসাবে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা থেকে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা।
(৬) ঢাকার বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বসবাসরত অন্য সকল জনগোষ্ঠীর ন্যায় বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর ছাত্র-ছাত্রীদের এবং সদস্যদের সকল সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেয়া।
(৭) রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাতীয় দিবস এবং শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের সাথে সাক্ষাৎকালিন পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বসবাসরত বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর সদস্যদের নিজস্ব সংগঠনের মাধ্যমে উল্লেখিত দিবসে আমন্ত্রণ জানানো।
(৮) বৈষম্য বিলোপ কমিশন গঠন করা।
বড়ুয়া নেতৃবৃন্দ বলেন, আমাদের দাবি সমূহ মানা না হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠন এর পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় সংবিধানের অধীনে গণতান্ত্রিক পন্থায় বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠন এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সভায় সভাপতি নির্মল বড়ুয়া মিলন, সহ সভাপতি জিনপদ বড়ুয়া, শ্যামল চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কুসুম বড়ুয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার বুলবুল চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক খোকন কান্তি বড়ুয়া, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক নিপুন বড়ুয়া জিকু, অর্থ সম্পাদক অপু বড়ুয়া, যুব বিষয়ক সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বাপ্পি, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক জুয়েল বড়ুয়া, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক স্বাধীন বড়ুয়া নিশু, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নেলী বড়ুয়া, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক পলাশ বড়ুয়া, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক রুবেল বড়ুয়া, দপ্তর সম্পাদক দেবাশীষ বড়ুয়া, সদস্য খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ও বান্দরবান প্রতিনিধি । ১৭ সদস্য বিশিষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠন এর কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়।
এছাড়া ভদন্ত অজিতানন্দ মহাথেরোকে প্রধান উপদেষ্টা, সংগঠনের বিদায়ী সভাপতি বীরমুক্তি যোদ্ধা ডাঃ বাদল বরণ বড়ুয়া উপদেষ্টা, সমর জিৎ বড়ুয়া, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ও বান্দরবান প্রতিনিধিকে উপদেষ্টা করে ৫ সদস্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠন এর কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়।
সমবত কষ্ঠে জাতীয় পরিবেশন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সভা শুরু করা হয়। সমবত কষ্ঠে জাতীয় পরিবেশন অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিপ্লব বড়ুয়া বাপ্পি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সভা শুরু করার আগে জুলাই-২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয় এবং আহতদের দ্রুত রোগমুক্তি কামনা করা হয়। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ভদন্ত অজিতানন্দ মহাথেরো
পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সভা অনুষ্ঠানটি সঞ্চলনা করেন বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক নির্মল বড়ুয়া মিলন।