

বুধবার ● ১৬ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » রাবিপ্রবিয়ে ‘জুলাই শহিদ দিবস’ উদযাপন
রাবিপ্রবিয়ে ‘জুলাই শহিদ দিবস’ উদযাপন
রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ ১৬ জুলাই ২০২৫ তারিখ ‘জুলাই শহিদ দিবস’ উপলক্ষে সকাল ০৯:০০ ঘটিকায় রাবিপ্রবি’র নির্মাণাধীন জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতিম্তম্ভে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ আতিয়ার রহমান। অতঃপর সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীবৃন্দ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ আবু সাঈদসহ সকল জুলাই শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন এবং তাঁদের রুহের মাগফেরাত ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের সুস্থতা কামনা করে দোয়া করেন। এ দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন-১ এর সভাকক্ষ-২ এ একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভার সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ও সহযোগী অধ্যাপক জনাব মোহাম্মদ জুনাইদ কবির, প্রধান অতিথি ও গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ আতিয়ার রহমান ও Western Norway University of Applied Sciences, Bergen, Norway এর প্রফেসর ড. এস এম আব্দুল কুদ্দুস।
সভায় গেস্ট অব অনার প্রফেসর ড. এস এম আব্দুল কুদ্দুস ‘জুলাই স্পিরিট: ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের স্বপ্নগাঁথা’ এ বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনের ফলে আমাদের মনস্তত্বে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সমূহের সেবা প্রদানের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন সূচিত হয়েছে, এ দৃষ্টিভঙ্গিকে চেতনায় ধারণ করে আরো বেগবান করতে হবে। নারীদের অংশগ্রহণ জুলাই আন্দোলনকে অনন্যতা দান করেছে। ইতোপূর্বের আন্দোলনে এরুপ দেখা যায়নি। এখান থেকে আমাদের শিক্ষণীয় আছে। রাষ্ট্রকে তা উপলব্ধি করতে হবে। তিনি আরো বলেন, নতুন বাংলাদেশে মেধার মূল্যায়ন হচ্ছে এবং মেধাবীরা দেশে ফিরছে ও দেশ গঠনে তারা সম্পৃক্ত হচ্ছে। শিক্ষার পরিবেশ সর্ম্পকে বলেন, ক্যাম্পাস হবে জ্ঞান উৎপাদন, গবেষণা ও উদ্ভাবনের জায়গা। শিক্ষার্থীদের জন্য মুক্ত চিন্তার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। জুলাই আন্দোলনে Gen Z এর দাবি ছিল বৈষম্যহীন-মেধাভিত্তিক সমাজ, যেখানে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকবে না। সর্বত্র সবাই সমান সুযোগ পাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ আতিয়ার রহমান জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি-চেতনা ধারণ করে ‘ফিরে দেখা ১৬ই জুলাই’ শিরোনামে একটি স্মারক বক্তব্য উপস্থাপন করেন। মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর বলেন, এ আন্দোলন ষোল বছরের ফ্যাসিজমের অবসান ঘটিয়েছে। আমরা ৫২ কে, ৭১কে যেভাবে মনে রেখেছি , ধারণ করেছি তেমনি জুলাই আন্দোলনকে আমাদের মাঝে ধারণ করবো। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যতদিন আছি ততদিন ট্রান্সফরমেটিভ লিডারশীপ এপ্রোচে কাজ করে যাবো। তিনি তাঁর বক্তব্যে জুলাই ২০২৪ থেকে পরবর্তী ৩৬ দিন কিভাবে শিক্ষার্থী তথা সাধারণ মানুষের সাথে জুলাই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছেন তার ধারাবাহিক বর্ণনা তুলে ধরেন। ১৫ জুলাই ২০২৪ তারিখে নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষক ঐক্য ব্যানারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে একজোট হয়ে শিক্ষার্থীদের উপর নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতিবাদ করেন তার বর্ণনা করেন। নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আবু সাঈদ, মুগ্ধ, আসিফ, রাফি, ওয়াসিম, আদনান, মিতা-সহ জুলাই আন্দোলনে শহিদ ও পঙ্গুত্ববরণকারী ছাত্র জনতার আত্মত্যাগকে স্মরণ করে এগিয়ে যেতে হবে এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে ৩১শে জুলাই ২০২৪ তারিখে প্রায় শতাধিক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতিবাদ সমাবেশের কথা উল্লেখ করেন এবং সচিত্র উপস্থাপনা তুলে ধরেন। জীবনের উপর হুমকি উপেক্ষা করে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নে জুলাইয়ের প্রতিটি মুর্হূত কাজে লাগিয়েছেন কখনো সামনে থেকে কখনো লেখনীর মাধ্যমে। নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও জনসাধারণকে নিয়ে জুলাই আন্দোলন সফল করেছেন তা তুলে ধরেন। তিনি আরো বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত ছয় মাসে যে পরিবর্তন আপনারা দেখেছেন তা গতিশীল রাখতে শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দলবদ্ধভাবে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে কাজ করে যেতে হবে। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে প্রত্যয় ও শহিদদের প্রতি আমাদের যে অঙ্গীকার তা ছড়িয়ে দিতে ও কাজে পরিণত করতে জুলাইয়ের চেতনায় পেশাদারিত্ব গড়ে তোলার বিষয়ে তিনি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়কে সেশনজট মুক্ত করতে পরীক্ষা গ্রহণের ১৫ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য শিক্ষকদের প্রতি আহবান জানান।
উক্ত সভায় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে হাসিবুর রহমান মিশকাত ও রিফাহ তাসনিয়া নিখিতা এবং কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে কম্পিউটার প্রোগ্রামার জনাব এ.এম.শাহেদ আনোয়ার জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও তৎপরবর্তী নতুন বাংলাদেশের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব-করণীয় নিয়ে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সুপ্রিয় চাকমা এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) ও ফিশারিজ এন্ড মেরিন রির্সোসেস টেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ মিজানুর রহমান বক্তব্য প্রদান করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জনাব মোহাম্মদ জুনাইদ কবির সভাপতি হিসেবে সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বলেন, আমরা যে শহিদদের রক্তের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি সেই দেশকে নতুনভাবে গঠন করার সময় আমাদের এসেছে। আমরা একটি দুর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যহীন এবং স্বৈরাচরমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবো এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।