মঙ্গলবার ● ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » রাবিপ্রবি’তে যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘মহান বিজয় দিবস উদযাপন
রাবিপ্রবি’তে যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘মহান বিজয় দিবস উদযাপন
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস-২০২৫ উদযাপন করা হয়েছে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও আবসিক হলসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। আজ সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. আতিয়ার রহমানের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসের বিজয় স্মৃতিস্তম্ভে সকল শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনস্বরুপ পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয় এবং শহিদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে ভাইস-চ্যান্সেলর বলেন, আমরা ২০২৪ এর বাংলাদেশে প্রত্যাশা করছি যে আমরা আর কখনো ফ্যাসিবাদের চর্চা করবো না। ১৯৪৭ কে মনে রাখা প্রয়োজন, ১৯৪৭ না হলে আমরা ১৯৭১ পর্যন্ত আসতে পারতাম না। ১৯৪৭ না হলে ১৯৫২ আসতো না, ১৯৫২ না আসলে ১৯৭১ হতো না। ১৯৭১ না হলে, আমরা স্বাধীন হতে পারতাম না; স্বাধীনতার এই দীর্ঘ যাত্রায় যে রাজনৈতিক সংকট তার অবসানের লক্ষে আমাদের জুলাই’২৪। প্রত্যেকটি অধ্যায়ের আলাদা মর্যাদা ও তাৎপর্য রয়েছে। তিনি সবাইকে বিভ্রান্তিমূলক আলোচনা ও তথ্য প্রচার থেকে দূরে থাকার জন্য আহবান করেন।
মহান বিজয় দিবস ২০২৫ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন-১ এর সম্মেলন কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) জনাব মোহাম্মদ জুনাইদ কবির এর সভাপত্বিতে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ আতিয়ার রহমান এবং প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন ও সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রহিম উদ্দিন।
‘মহান বিজয় দিবস-২০২৫: সুযোগ ও সম্ভাবনার বাংলাদেশ’ বিষয়ক এ আলোচনা সভার প্রধান অতিথি হিসেবে মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর ১৯৪৭ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বাংলাদেশ গড়তে যারা শহিদ হয়েছেন তাদের সবার রূহের মাগফেরাত কামনা করেন। তিনি উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এগিয়ে যাওয়ার চিত্র তুলে ধরে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে শিক্ষার্থীদেরকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে দেশের সেবায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করার আহবান জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের ছাত্র বন্ধুরা তোমরাই আগামীর বাংলাদেশ।ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে দাঁড় করাবার জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে যোগ্য ও সৎ নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে। আমরা যেই অর্থে নেতৃত্ব বেছে নেবার কথা বলছি, সেই অর্থে নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার নানা প্রলোভন থাকবে, গাড়ি, বাড়ি, বিদেশে সেটেল হওয়ার প্রলোভন থাকবে। সে সকল প্রলোভনকে জয় করে, সমাজের জন্য ইতিবাচক নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে। সততার ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়ার কোনো জায়গা থাকবে না। যদি তাই হয়, বাংলাদেশ যতবার পথ হারাবার উপলক্ষ পাবে, ততবারই ঘুরে দাঁড়াবার জন্যে যুবকরাই এগিয়ে আসবে।’ এছাড়াও তিনি দেশের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেয়ার জন্য শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, নিবেদিতপ্রাণ, সৎ, যোগ্য, দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা ও সামাজিক নেতৃত্ব গড়ে তোলার বিষয়ে উৎসাহিত করেন। সকল চ্যালেঞ্জ যেমন বেকারত্ব, দুর্নীতি, বৈষম্য মোকাবিলা করে সুশাসন, নৈতিক শিক্ষা ও দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ নাগরিক হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশকে সম্ভাবনার প্রান্তে নেয়ার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান। এছাড়া তিনি শিক্ষার্থীসহ সকলকে জীবনদর্শন, নীতিবোধ ও জীবনবোধ গড়ে তোলার কথা বলেন। তিনি বলেন, যার উপর আমার অধিকার নেই তার মূল্য যতই হোক, তা আমার কাছে মূল্যহীন। মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ আতিয়ার রহমান মহোদয় তার এ আলোচনার প্রথমেই গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদীর দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং বলেন জুলাই’২৪ এ আমরা যে আশা আকাঙ্ক্ষা ও চেতনা নিয়ে লড়াই করেছিলাম সে ঐক্যবদ্ধ শক্তির মধ্যে এক দূরত্ব দেখতে পাচ্ছি যা কাম্য নয়। তিনি ’৪৭ থেকে ’৭১ এবং তৎপরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের আলোকে জুলাই’২৪ পূর্ববর্তী সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি, গুম খুনের রাষ্ট্রীয় চিত্র তুলে ধরেন এবং আগামীর বাংলাদেশের সম্ভাবনার বিভিন্ন ক্ষেত্র যেমন পোষাক শিল্প, আধুনিক কৃষি, পর্যটন, প্রবাসী আয়, প্রযুক্তি ঔষধ শিল্পের কথা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
আলোচনা অনুষ্ঠানে ‘মহান বিজয় দিবস-২০২৫: সুযোগ ও সম্ভাবনার বাংলাদেশ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রহিম উদ্দিন। প্রবন্ধে তিনি ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক পরিবর্তনের বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি শিক্ষাখাতে বাজেট বৃদ্ধি, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় বিনিয়োগ, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন নির্ভর অর্থনীতি, কৃষি খাতে প্রথাগত কৃষি প্রযুক্তির স্থলে ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ফলন বৃদ্ধি, বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দেশজ উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের পাশাপাশি রপ্তানিমুখী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে পৃষ্ঠপোষকতা এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি ’৪৭ এর প্রেক্ষাপট ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয়ভাবে সৃষ্ট সাংস্কৃতিক সংকট, অর্থনৈতিক শোষণ ও রাজনৈতিক সংকটের বিশদ আলোচনা ও জুলাই’২৪ পরবর্তী বাংলাদেশের সামনে সুযোগ ও সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলো এভাবেই তুলে ধরেন। এছাড়া তিনি উন্নত দেশের মতো শিক্ষা খাতে বাজেট বৃদ্ধিসহ আধুনিক শিক্ষানীতির কথা বলেন। দুর্নীতি থেকে মুক্তির বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেন এবং সৎ নেতৃত্বের অভাবের কথা বলেন।
সভাপতির বক্তব্যে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ জুনাইদ কবির সকল শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং বলেন, সকল স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে সকলে একসঙ্গে কাজ করতে পারলে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সকল ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার যে ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে তা প্রতিষ্ঠা করা ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে। আমরা সবাই আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য একসঙ্গে কাজ করবো এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে কাঙ্ক্ষিত লক্ষে এগিয়ে নিয়ে যাবো এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আলোচনা সভায় উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
এছাড়াও মহান বিজয় দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ছাত্রীদের আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের মাঝে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয় এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য দুপুরের খাবার পরিবেশন করা হয়। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রশাসনিক ভবনসহ সকল হলে আলোকসজ্জা করা হয়।
অতঃপর মহান বিজয় দিবসের আলোচনা সভা শেষে একাডেমিক ভবন-১ এর সভাকক্ষে দুপুর ১২টায় শারীরিক শিক্ষা বিভাগের আয়োজনে বার্ষিক এ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতা-২০২৫ এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো, আতিয়ার রহমান উপস্থিত ছিলেন। বার্ষিক এ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতা-২০২৫ এর বিভিন্ন ইভেন্টসমূহে- দৌড় (১০০মি. ২০০মি. ও ৪০০মি.), চাকতি নিক্ষেপ, গোলক নিক্ষেপ, বর্শা নিক্ষেপ, উচ্চ লাফ, লং জাম্প, দাবা, লুডু, ক্যারম, ব্যাডমিন্টন – বিজয়ী শিক্ষার্থীরা ভাইস-চ্যান্সেলর কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন। এছাড়াও শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে আয়োজিত প্রীতি ফুটবল ম্যাচ বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার প্রদান করা হয়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত), বিভিন্ন অনুষদের ডীন, চেয়ারম্যান, প্রক্টর, শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক (অ.দা.)সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।





রাঙামাটিতে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ এর সমাধিস্থলে বিজিবির শ্রদ্ধা
রাঙামাটিতে মহান বিজয় দিবসে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির শ্রদ্ধাঞ্জলী
ছাত্রদলের শাওন এর নেতৃত্বে রুফটপ রেস্টুরেন্টে ম্যানেজার গিরি দত্ত চাকমা’র ওপর হামলা
মাদ্রাসার এতিম ছাত্রদের মাঝে রাঙামাটি সদর জোন এর শীতবস্ত্র বিতরণ
স্কাউট জাম্বুরী’তে যোগ দিতে ফিলিপাইন গমন করলো মিরসরাইয়ের রাহিম