সোমবার ● ৩ মার্চ ২০২৫
প্রথম পাতা » কুষ্টিয়া » আবারো রক্তের হোলিখেলায় মেতে উঠেছে কুষ্টিয়ার জনপদ
আবারো রক্তের হোলিখেলায় মেতে উঠেছে কুষ্টিয়ার জনপদ
কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি :: এক সময় চরমপন্থী অধ্যুষিত এলাকা হিসাবে পরিচিত ছিল কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, যশোর সহ বেশ কয়েকটি জেলা। প্রতিদিন ওলিত গোলিতে লাশ পড়ে থাকতে দেখা যেত, মেতে উঠেছিল রক্তের হোলি খেলায়। দীর্ঘ ২২/২৩ বছর পর আবার তারা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে তারা। বর্তমানে আতংকের নাম হয়ে উঠেছে জাসদ গণবাহিনীর ৯০ দশকের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সামরিক প্রধান কুষ্টিয়ার শীর্ষ সন্ত্রাসী কালু। ১৯৯০ থেকে ২০০০ সালে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সবচেয়ে অশান্ত ও চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের জনপদ হিসেবে পরিচিত ছিল কুষ্টিয়া জেলা। এরপর ২০০৪ সালের পর থেকে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপে র্যাব ও পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত হয় চরমপন্থী সংগঠনের অনেক শীর্ষ নেতা। কিছু সংখ্যক চরমপন্থী সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতারা ভারতে পালিয়ে যায়। কিন্তু কালু ভারতে বসেই তার বাহিনী দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন দীর্ঘদিন কুষ্টিয়ায় রাজনৈতিক কয়েকজন বড় বড় নেতাদের ছত্র ছায়ায় কিছু সংখ্যক চরমপন্থী সংগঠন পরিচালিত হলেও ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তারাও দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। বর্তমানে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জেলা গুলোতে আতংকের নাম হয়ে উঠেছে জাসদ গণবাহিনীর সামরিক প্রধান শীর্ষ সন্ত্রাসী কালু। চলতি বছরের গত ১৫ জানুয়ারি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ভাদালিয়ায় অবস্থিত জেটিআই ইন্টারন্যাশনাল (জাপান টোব্যাকো) বাংলাদেশ লিমিটেডে বোমা ও গুলি বর্ষন করে জাসদ গণবাহিনীর প্রধান কালুর লোকজন। তারপর ২ ফেব্রুয়ারী কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জাতীয়তাবাদী শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের কর্মী সম্মেলন চলছিল। দুপুর ২টার দিকে চরমপন্থী সন্ত্রাসী কালুর লোকজন সীমানা প্রাচীরে উঠে অফিস প্রাঙ্গণের দিকে এলোপাথাড়ি গুলি করে। এরপর গত ১৮ ফেব্রুয়ারী কুমারখালীর কয়া ইউনিয়নের সৈয়দ মাসউদ রুমী সেতুর নিচে বালুর ঘাটে কালুর লোকজন ভারি অস্ত্রের মুখে ফিল্মি স্টাইলে জিম্মি করে টাকা পয়সা লুটে নেয় ১ জনের পায়ে গুলি করে ও ২ জনকে ধরে নিয়ে যায়। অস্ত্রসহ বালুর ঘাটে হানা দেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর বেশ আতংকের সৃষ্টি হয়েছে। এর আগেও শিলাইদহ ও খোকসা বালুর ঘাটেও ভাড়ি অস্ত্র দিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে টাকা পয়সা লুট করেছে সন্ত্রাসী কালুর লোকজন। কুষ্টিয়ার জেলার মধ্যে সব জায়গায় জাসদ গণবাহিনীর সন্ত্রাসী কালুর লোকজন ছড়িয়ে আছে বলে মানুষের মাঝে আতংকের সৃষ্টি হয়েছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী কালুর সম্পর্কে জানা যায়, কালু কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ইবি থানাধীন আব্দালপুর এলাকার বাসিন্দা। সে জাসদ গণবাহিনীর সামরিক প্রধান। ১৯৯৮ সালে কুষ্টিয়া সদরের পার্শ্ববর্তী এলাকা মিরপুর উপজেলার কলাবাড়িয়ায় ৫ জনকে জবাই করে হত্যা করে এই কালু। ১৯৯৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে আলামপুর ইউনিয়নের দহকুলা গ্রামের তমছের ও মানা ২ জনকে প্রকাশ্য দিবালোকে নওয়াপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে গুলি করে হত্যা করে কালু। ওই একই সালে ঝিনাইদহ শহরের চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে কুষ্টিয়ার পশ্চিম আব্দালপুরের রায়হান ও মজিদ মিয়াকে প্রকাশ্যে দিনে দুপুরে গুলি করে ও জবাই করে হত্যা করে কালু। ১৯৯৯ সালে কুষ্টিয়া সদরের কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের জোতপাড়া গ্রামের শুকুর মালিথাকে গুলি করে ও জবাই হত্যা করে কালু। ২০০২ সালে পূর্ব আব্দালপুরের তাছের কে জবাই করে হত্যা করে কালু। ২০০৩ সালের ৪ ডিসেম্বর ঝিনাইদহের শৈলকুপার ত্রিবেনী গ্রামের মাঠে শেখপাড়া গ্রামের শহিদ খা, ত্রিবেনী গ্রামের শাহনেওয়াজ, একই গ্রামের ফারুক, নুরু কানা ও কুষ্টিয়ার ভবানীপুর গ্রামের কটাকে গুলি করে ও জবাই করে একই সাথে ৫ জনকে হত্যা করে সন্ত্রাসী কালু। ২০০৯ সালের ৮ আগস্ট তিনজনকে হত্যা করে কুষ্টিয়া শহরের সাদ্দাম বাজার এলাকায় গণপূর্ত কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ব্যাগের ভেতর তিনটি মানুষের মাথা ঝুলিয়ে রেখে যায় এই কালু। ২০১১ সালের ১৫ মার্চ রাত ১ টার দিকে ভারতের নদীয় জেলার চাপড়া থানার ছোট আন্দুলা গ্রামে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পশ্চিম আব্দালপুরের চেয়ারম্যান আনুকে স্বাসরোধ করে জবাই করে হত্যা করে কালু। ২০১২ সালে কুষ্টিয়ার ঝাউদিয়া ইউনিয়নের আজিবার চেয়ারম্যানকে ভারতের নদীয়া জেলার ধানতোলা থানা এলাকায় জবাই করে হত্যা করে কালু। একই সালে কুষ্টিয়া ইবি থানাধীন লক্ষীপুর বাসস্ট্যান্ডে আব্দালপুর এলাকার রহমান ও হাসেম নামের দুই জনকে গুলি করে ও জবাই করে হত্যা করে কালু। এরপর থেকেই আতংক হিসেবে কালুর নাম কুষ্টিয়ার আশেপাশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পরে। দীর্ঘদিন কালু বাহিনীর হাতে নিহতের সংবাদ না পাওয়া গেলেও। গত ২১ শে ফেব্রুয়ারী ২০২৫ তারিখ রাত আনুমানিক ১০:৩০ টার দিকে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার রামচন্দ্রপুর মাঠের মধ্যে পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা হানিফ আলীসহ তিনজনকে গুলি করে হত্যা করেছে কালু ও তার বাহিনীর লোকজন। হত্যার বিষয়ে চরমপন্থী সংগঠন জাসদ গণবাহিনীর নেতা কালু নিজেই দায় স্বীকার করে গণমাধ্যমকর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠিয়েছেন। চরমপন্থী নেতা কালু পরিচয় দিয়ে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, এতদ্বারা ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, যশোর, খুলনা বাসীর উদ্দেশ্যে জানানো যাইতেছে যে, পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নামধারী কুখ্যাত ডাকাত বাহিনীর শীর্ষ নেতা অসংখ্য খুন, গুম, দখলদারি, ডাকাতি, ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হরিণাকুন্ডু নিবাসী মোঃ হানিফ তার দুই সহযোগী সহ জাসদ গণবাহিনীর সদস্যদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। অত্র অঞ্চলে হানিফের সহযোগীদের শুধরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হলো অন্যথায় আপনাদের একই পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে। কালু- জাসদ গণবাহিনী। ইতিমধ্যে কালুর দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে কুষ্টিয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ফয়সাল মাহমুদের সাথে মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমাদের এই বিষয়ে গোয়েন্দা তৎপরতা চলছে এবং আমাদের অভিযানও চলছে।
এবিষয়ে কঠোর পদক্ষেপের নির্দেশনা পুলিশ সুপার মহোদয় দিয়েছে। এ ধরনের সংশ্লিষ্ট যারা আছে তাদের গ্রেফতারের জন্য আমাদের বিশেষ অভিযান অব্যাহত আছে।





কুষ্টিয়া গণপূর্ত অফিসেই ১৮ বছর’ আ’লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত অনুপ কুমার সাহা
কুষ্টিয়া সিভিল সার্জনে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে দুদক
চুয়াডাঙ্গার শিক্ষা প্রকৌশলী কমিশন বাণিজ্যে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়
কুষ্টিয়ায় হাসপাতালের পুকুর থেকে যুবতীর লাশ উদ্ধার
কুষ্টিয়ায় বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত
কুষ্টিয়া চেম্বারের ‘এ’ গ্রুপের পরিচালক পদে নির্বাচন সম্পন্ন
জাকির এর উদ্যোগে কুষ্টিয়া শহর নতুন রূপে সেজেছে
কুষ্টিয়ার আদালতে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে পালাল নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ
ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে কুষ্টিয়ার ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি
কুষ্টিয়ায় স্ত্রী হত্যার দায় স্বীকার করল আটককৃত স্বামী