

মঙ্গলবার ● ৬ মে ২০২৫
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » নারীর অসম্মান জুলাই গণ অভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী : জুঁই চাকমা
নারীর অসম্মান জুলাই গণ অভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী : জুঁই চাকমা
আজ মঙ্গলবার ৬ মে-২০২৫ বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি রাঙামাটি পার্বত্য জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জুঁই চাকমা গণমাধ্যমে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে হেফাজত-জামাতসহ উগ্র ধর্মান্ধ মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর নারী বিদ্ধেষী উস্কানীমূলক বক্তব্য এবং সংস্কার কমিশনের সদস্যদের “বেশ্যা” ইত্যাদি অশ্লীল গালিগাজের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, জুলাই আগষ্টের গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের জন্য ১১টি কমিশন গঠন করেন। এর মধ্যে নারী সংস্কার কমিশন একটি। প্রতিটি কমিশন ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল দল এবং বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের কাছ থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুপারিশ চেয়েছেন। তার ভিত্তিতে কমিশন একটি সুপারিশ প্রণয়ন করে প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। নারী সংস্কার কমিশনও তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়ার পর থেকে হেফাজত- স্বাধীনতা বিরোধী জামাতসহ দেশের বিভিন্ন উগ্র ধর্মান্ধ মৌলবাদী দল ও গোষ্ঠী নারী বিদ্বেষী উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে, যা চরম অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিস্ট মনোভাবেরই প্রকাশ। ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর এধরনের বক্তব্য নারীর প্রতি চরম অবমাননাকর ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাংখা বিরোধী।
তিনি আরো বলেন,গত পরশু হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশে বিভিন্ন বক্তা নারী প্রশ্নে যেসব অশ্লীল বক্তব্য দিয়েছেন তা শুধু অগ্রহণযোগ্য নয়, বরং অন্ধকার যুগে ফিরে যাওয়ার সামিল। দেশের জনগোষ্ঠীর ৫০% নারীর গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক অধিকারকে অস্বীকার করে বৈষম্যহীন সমাজ দূরে থাক, একটা আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র -সমাজ বিনির্মাণ কোনভাবেই সম্ভব নয়।
তিনি তাঁর বিবৃতিতে জানান, নারী কমিশনের প্রস্তাব কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়, এই প্রতিবেদনের কোন কোন সুপারিশের ব্যাপারে কেউ একমত, কেউ দ্বিমত বা ভিন্নমত পোষণ করতেই পারে। শুধু নারী কমিশন নয় সবকটি কমিশনের রিপোর্ট নিয়েই প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়েছে। ইতিমধ্যে ঐকমত্য কমিশন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে কমিশনসমূহের রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা চলছে সেখানেই সবাই তাদের নিজস্ব মতামত জানাতে পারে।
নারীর সমানাধিকারকে অস্বীকার করা ’১৯৫২, ’১৯৬২, ’১৯৭১,এবং ’২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণকেই অস্বীকার করা। তারা নারীকে ঘরে বন্দী করে রেখে ভোগ্যপণ্য হিসেবে ব্যাবহার করার মধ্যযুগীয় দৃষ্টিভঙ্গিতেই নারীকে দেখে।
আমাদের দেশে নারীরা পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে এখনো অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যের শিকার। তাই, ২০২৪ এর গণআকাঙ্খাকে বাস্তবায়ন এবং আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় হেফাজতে ইসলামি-জামাতসহ উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর এই নারী বিদ্ধেষী অপতৎপরতা বন্ধে অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করার আহ্বান জানান তিনি।
জুঁই চাকমা আরো বলেন, মৌলবাদীরা গত পরশু রাজু ভাস্কর্যের সামনে নারী প্রতিকৃতিতে জুতা মেরে বস্ত্র হরণ করে সমগ্র নারী সমাজকে অসম্মান করেছে। এটা চরম অসভ্যতা ও বর্বরতা-যা সভ্য দেশে গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন মানুষের কাছে কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। কমরেড জুঁই চাকমা নারী অবমাননা, নারী বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবী জানান।
এছাড়া বান্দরবানের থানচিতে এক খেয়াং নারীকে (২৯) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে ধর্ষকদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে জুঁই চাকমা।