মঙ্গলবার ● ১০ জানুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কেমন ছিলো ?
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কেমন ছিলো ?
মুতাসিম বিল্লাহ, বরগুনা প্রতিনিধি :: (২৬ পৌষ ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.৩০মি.) ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে নয় মাসের সশস্ত্র
মুক্তিযুদ্ধ, শহীদের রক্তস্রোত, মা বোনের সম্ভ্রম এবং স্বতন্ত্র জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায়
বাঙালির দীর্ঘ সংগ্রাম সবকিছু, মিলেমিশে এক হয়ে যায়- লাল সবুজের প্রিয় পতাকায়। ‘স্বাধীনতা’ নামক শব্দটি একান্ত আপন হয়ে ধরা দেয় এ জনপদের সাড়ে সাত কোটি মানুষের কাছে। এক কথায়-বাঙালি জাতি তার হাজার বছরের কাংখিত বিজয় অর্জন করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখনো পাকিস্তানের কারাগারে। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকার-সদ্য স্বাধীন দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে। তখনো মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে অস্ত্র। মিত্র বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশে। মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি রাজাকার, আলবদর আল শামসরা আত্মসোপনে। ভারত, ভুটান, রাশিয়া, জাপান ছাড়া বিশ্বের শক্তিধর বেশিরভাগ রাষ্ট্র তখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। যুদ্ধবিধস্ত সদ্য স্বাধীন একটি রাষ্ট্রের জন্য যা খুবই জরুরি ছিল। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরেও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব
শুরু হয়। সবকিছু মিলিয়ে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির এগিয়ে চলার
পথ-খুব একটা নিশ্চিত ছিল না। অন্যদিকে ভারতে আশ্রয় নেয়া এক কোটি শরনার্থী
তখনো দেশে ফেরেনি। এক কথায়-বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষ তখন অপেক্ষায় ছিলো-সেই মহানায়কের জন্য, সেই মহান নেতার জন্য-যার আহ্বানে সাড়া দিয়ে তারা একদিন অস্ত্রহাতে যুদ্ধে নেমেছিল, স্বাধীনতার জন্য বির্সজন দিয়েছিলো বুকের তাজা রক্ত। ১৯৭২ এর বিদ্যমান বাস্তবতায় তখন বঙ্গবন্ধুর দেশে ফেরা অনিবার্য হয়ে উঠেছিল।
আন্তজার্তিক চাপে পাকিস্তান সরকার ৮ জানুয়ারি ১৯৭২ মুক্তি দিতে বাধ্য হয় বিশ্বের অধিকারবঞ্চিত মানুষের দাবি আদায়ের অনন্য সাধারণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান থেকে লন্ডনে যাত্রা বিরতি নেন। লন্ডন থেকে ১০ জানুয়ারি আসেন দিল্লি। দিল্লিতে ভারতবাসীর ভালোবাসায় সিক্ত হন বঙ্গবন্ধু।
দিল্লি থেকে একটি বিশেষ বিমানে ঢাকায় অবতরন করেন। বিমানবন্দর থেকে
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। বাঙালি উষ্ণ ভালোবাসায় বরণ করে নেয়- তাদের প্রিয়
নেতা, প্রিয় মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বঙ্গবন্ধু কাঁধে তুলে নেন- স্বাধীন
বাংলাদেশের দায়িত্ব। আন্তজার্তিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায় করেন একে একে।
বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। অপরদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা হাতে নেন। বাংলাদেশ ঘুরে দাড়াতে শুরু করে।
বঙ্গবন্ধু সময় পান মাত্র সাড়ে তিন বছর। সাড়ে তিন বছরেই বাংলাদেশের উন্নয়নের
রোড-ম্যাপ তৈরি করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে
নির্মমভাবে নিহত হন তিনি। তবে সাড়ে তিন বছরে তিনি যে কর্ম পরিকল্পনা হাতে নেন- বাংলাদেশ সেই পথ ধরেই সামনে এগাতে থাকে। স্বাধীনতার সাড়ে চার দশকে
বাংলাদেশ উন্নয়নের যে পর্যায়ে উপনীত হয়েছে, মূলত তা বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা ও
স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়েই। তাইতো, ৭২ এর বিদ্যমান বাস্তবতায় বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কতটা অনিবার্য ছিলো তা বলবার অপেক্ষা রাখেনা।