বুধবার ● ২৯ জানুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » কৃষি » চলনবিল এখন মধুর বিলে পরিণত দুই হাজার টন মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা
চলনবিল এখন মধুর বিলে পরিণত দুই হাজার টন মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা
মো. নূরুল ইসলাম, পাবনা জেলা প্রতিনিধি :: মৎস খ্যাত চলনবিল যেন বর্তমান সময়ে মধুর বিলে পরিণত হয়েছে। চলনবিলের মাঠ গুলোতে এখন মাঘী সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। হলুদ ফুলে-ফুলে, নেচে- নেচে, ছুটে-ছুটে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে খামারীদের মৌমাছি। বিখ্যাত কবি নবকৃষ্ণ ভট্রাচার্য তার কাজের লোক কবিতায় লিখেছিলেন “মৌমাছি, মৌমাছি, কোথা যাও নাচি’ নাচি দাঁড়াও না একবার ভাই।” “ওই ফুল ফোটে বনে, যাই মধু আহরণে দাঁড়াবার সময় তো নাই।” নবকৃষ্ণ ভট্রাচার্য অনেক বছর পূর্বে তার কবিতায় যে চরণগুলো লিখেছিলেন চলনবিল এলাকার বর্তমান প্রেক্ষাপটে মিলছে তার সত্যতা। কাজের লোক মৌমাছির দাড়াবার যেন কোন সময় নেই। মৌমাছি সরিষার ফুলে ফুলে ছুটে যে মধু সংগ্রহ করছে মৌখামারীরা সে মধুগুলি সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য ক্রেতার অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন। মধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সক্রিয় থাকায় চলনবিল এলাকায় প্রচুর পরিমানে মধু উৎপাদন হলেও মৌচাষীরা মধু বিক্রি করতে পারছেন না। চলতি মৌসুমের শুরুর দিকে চলনবিলাঞ্চল থেকে এ মৌসুমে প্রায় দুই হাজার মেট্রিকটন মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে এমনটা ধারণা করা হলেও বিরুপ আবহাওয়ার কারণে এখন ধারণা করা হচ্ছে এক হাজার টন মধু উৎপাদন হতে পারে। মধু প্রক্রিয়াজাত করণের ব্যবস্থা না থাকায় কম দামে হলেও স্থানীয় বাজারে মধু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন খামারীরা।
জানা গেছে, প্রতি বছর পৌষ/মাঘ মাসে চলনবিল এলাকার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, তাড়াশ, সিংড়া, উল্লাপাড়ার পশ্চিমাংশসহ এর আশপাশ এলাকার মাঠগুলো ছেয়ে যায় হলুদ সরিষা ফুলে। জমি থেকে বর্ষার পানি নেমে যাবার সাথে সাথে এ এলাকার কৃষকেরা উদ্বৃত্ত ফসল হিসেবে মাঘী সরিষার বীজ ছিটিয়ে দেন। মাঘ মাসে সরিষা তুলে এসব জমিতে বোরো চাষ করেন তারা। পৌষের শুরু থেকে পাবনা নাটোর সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার মৌখামারীদের পাশাপাশি সাতক্ষিরা, খুলনা, বাগেরহাট, নড়াইল, গাজীপুর, রংপুর, দিনাজপুর, চাপাইনবাবগঞ্জ, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাও, নীলফামারীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মৌখামারীরা মধু সংগ্রহের জন্য চলনবিল এলাকার মাঠ গুলোতে অস্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন। খামারের মৌবক্স গুলো তারা সরিষা খেতের পাশে স্থাপন করেন এবং কয়েক দিন পর পর মধু সংগ্রহ করেন।
চাটমোহর-মান্নাননগর সড়কের ধরমগাছা গ্রামের পাশে স্থাপনকৃত শিকদার মৌখামারে কর্মরত সোহেল রানা জানান, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারীর শেষভাগ পর্যন্ত চলনবিলে মৌবক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করেন তারা। এবছরে তারা ৪৫ টি মৌবক্স স্থাপন করেছেন। আশা করছেন প্রতি সপ্তাহে ২ মন মধু সংগ্রহ করতে পারবেন। এপি, এনপি, স্কয়ার, প্রাণসহ কিছু কোম্পানী এ এলাকা থেকে মধু সংগ্রহ করে থাকেন।
সেজুতি মৌখামারের সত্ত্বাধিকারী আমিনুর রহমান জানান, ২০১৫ সালে মৌচাষ শুরু করেন তিনি। বর্তমান তার খামারে একশ টি মৌবক্স রয়েছে। কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে নেয়া দেড়লাখ টাকাসহ প্রায় ৫ লাখ টাকা ইতিমধ্যে মৌখামারে বিনিয়োগ করেছেন। গত ২ বছর লাভ করতে পারেন নি। মে থেকে ডিসেম্বর মৌচাষীদের জন্য অফ সিজন। এসময় মৌমাছিকে খাবার দেয়া হলেও মধু উৎপাদন হয় না। এবছর ও লোকসানের আশংকা প্রকাশ করে তিনি জানান, আশানুরুপ মধু উৎপাদন হচ্ছে না। চলতি মৌসুমে তার খামারে ২ টন মধু উৎপাদন হতে পারে বলে তিনি জানান। বর্তমান সামান্য কিছু পাইকার মধু কিনছেন একশ টাকা কেজি দরে। খুচরা বাজারে ২শ ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে মধু। মজুদদার চক্র সিন্ডিকেট তৈরী করে পূর্ণ মৌসুমেও মধু কিনতে আসছেন না। ঋণের কিস্তি শ্রমিকদের পারিশ্রমিক দিতে বাধ্য হয়ে কম দামে মধু বিক্রি করতে হচ্ছে আমাদের।
এ ব্যাপারে পাবনা মৌচাষী সমবায় সমিতির সভাপতি ও উত্তরবঙ্গ মৌচাষী সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রায় সাত থেকে আটশত খামারী চলনবিলের বিভিন্ন মাঠে মধু সংগ্রহ করছেন। প্রায় সারা দেশের মৌচাষীরা মধু সংগ্রহের জন্য আসেন চলনবিল এলাকায়। কে কোথায় মৌবক্স স্থাপন করবে এজন্য খামারীদের এলাকা ভাগ করে দেয়া হয়। এ মৌসুমের উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা দুই হাজার টন ধরা হলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে তা অর্ধেকে নেমে আসতে পারে। পাইকারী দেড়শ টাকার কিছু কম বেশি দামে প্রতি কেজি মধু বিক্রি হয়।





ঈশ্বরগঞ্জে নবান্ন উৎসবের আমেজে গ্রামীণ জনপদ
আত্রাইয়ে পাট চাষে দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা
কাউখালীতে কৃষি অধিদপ্তরের পার্টনার ফিল্ড স্কুল কংগ্রেস অনুষ্ঠিত
কাউখালীতে জাতীয় ফল মেলা অনুষ্ঠিত
ঝালকাঠিতে আম বাগান হয়ে উঠেছে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত
বাগেরহাটে লবণাক্ত পতিত জমিতে মাঠজুড়ে সূর্যমূখীর হাঁসি ঝিলিক
আত্রাইয়ে বেড়েছে পেঁয়াজের বীজ চাষ
শরীরের জন্য পুষ্টি, তাপ ও শক্তি যোগাতে পুষ্টিকর খাবারে কোনো বিকল্প নেই : মনিরুজ্জামান খান
ফটিকছড়িতে বোরো চাষে নারী শ্রমিকরা
রাউজানে সরিষা ক্ষেতে হলুদের হাতছানি