রবিবার ● ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » ইউপিডিএফ প্রতিষ্ঠার ২৫তম বার্ষিকীতে মৈত্রী জোরদারের আহ্বান
ইউপিডিএফ প্রতিষ্ঠার ২৫তম বার্ষিকীতে মৈত্রী জোরদারের আহ্বান
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মূল) এর প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের নিরন চাকমা প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ‘বড়দিনের শুভেচ্ছা’ ও ‘পাহাড়-সমতলে সংগ্রামী মৈত্রী জোরদারের’ আহ্বান জানিয়ে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মূল) এর প্রতিষ্ঠার ২৫তম বার্ষিকীতে দলের সভাপতি প্রসিত খীসা এক বার্তা দিয়েছেন।
আজ রবিবার ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ সংবাদ মাধ্যমে প্রচারের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত বার্তায় ইউপিডিএফ-মূল সভাপতি প্রসিত খীসা পার্টি প্রতিষ্ঠার ২৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশে এবং দেশের বাইরে অবস্থানরত কর্মী-সমর্থক-জনগণ ও ভ্রাতৃপ্রতিম দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মী-শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি শুভেচ্ছা ও সংগ্রামী অভিবাদন জানিয়েছেন। বার্তায় গুরুত্বের সাথে বড়দিনের শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন দেশের খৃস্টান সম্প্রদায়কে।
পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ও বাইরে নাড়া দেয়া ১১ ডিসেম্বর পানছড়িতে বিপুল-লিটন-সুনীল ও রুহিন হত্যার প্রতিবাদে সোচ্চার সকল বন্ধুপ্রতিম দল-সংগঠন, ছাত্র-শিক্ষক-মানবাধিকার কর্মী ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের প্রতি ইউপিডিএফ-এর পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে প্রসিত খীসা বলেছেন, বিবৃতি, দেয়াল লিখন, পোস্টার-হ্যান্ডবিল প্রচার, গান-আবৃত্তি, সভা-সমাবেশের মাধ্যমে দেশের বিবেক গণতান্ত্রিক শক্তি খুনী ও তাদের মদদদাতাদের বিরুদ্ধে যেভাবে সোচ্চার হয়েছেন, তা সরকার-সেনা-শাসকগোষ্ঠীর প্রতি বীতশ্রদ্ধ পার্বত্যবাসীদের মনে আস্থার ক্ষেত্র তৈরি করেছে, এর মাধ্যমে পাহাড় ও সমতলের গণতন্ত্রকামী মানুষের সংগ্রামী মৈত্রী গড়ে উঠছে।
দীর্ঘ বার্তায় প্রসত খীসা বলেন, “স্বাধীনতা সপক্ষের দল” দাবিদার দেশের লুটেরা নিপীড়ক শাসকগোষ্ঠী পাহাড়ি জনগণের ওপর দমন-পীড়ন, হত্যা-ধর্ষণ—ভূমি বেদখল, বন-প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংস করলেও দেশের প্রকৃত গণতান্ত্রিক শক্তি তা অনুমোদন করেন না, বিপুল-লিটন-হত্যার প্রতিবাদে তারা সোচ্চার হয়েছেন, তা স্মরণকালের ভয়াবহ লোগাঙ গণহত্যা (১০ এপ্রিল ১৯৯২), কল্পনা অপহরণ (১২ জুন ১৯৯৬) ও ইউপিডিএফ-এর প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ভণ্ডুল করার (২৬ ডিসেম্বর ১৯৯৯) প্রতিবাদে দেশের গণতান্ত্রিক শক্তি যেভাবে পাহাড়ি জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে, তা মনে করিয়ে দেয়।
পাহাড়ি ও চট্টগ্রামবাসীদের সাথে সুদূর অতীতের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের কথা স্মরণ করে প্রসিত খীসা বলেন, আশির দশকে ফৌজি শাসকদের জ্বালাও-পোড়াও হত্যা-ধর্ষণ, বেআইনী সেটলার পুনর্বাসন, পাহাড়িদের ভিটেবাড়ি—জমি জমা বেদখল ও দাঙ্গা বাধিয়ে বিদ্বেষ ও হিংসা জাগিয়ে তোলার পূর্বে পাহাড়ি ও বাঙালি (চট্টগ্রামবাসী) সম্পর্ক বৈরী ছিল না। ব্রিটিশ আগ্রাসন প্রতিরোধ লড়াই (১৭৭২—১৭৯৮) ও রাণী কালিন্দীর সময়ে (১৮৪৪—১৮৭৩) পাহাড়ি ও বাঙালিদের (চট্টগ্রামবাসী) সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ও সংহতি প্রবাদপ্রতিম হয়ে রয়েছে। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার অধিবাসীদের পূর্বপুরুষগণ আজও সে সব দিনের কথা স্মৃতিচারণ করে থাকেন।
গত বছর জুনে সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ডে উদ্ধার অভিযানে (জুন ২০২২) পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনজনের জীবনদানের কথা স্মরণ করে ইউপিডিএফ নেতা বলেন, দেশের প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও যে কোন কঠিন সময়ে পাহাড়ের যুবশক্তি জীবনবাজি রেখে ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত সেটা তারই আভাস দেয়। কিন্তু “স্বাধীনতা সপক্ষের শক্তি” বেশ ধরে “স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার” জিগির তুলে চিহ্নিত চক্রটি ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে অতীতে বিভিন্ন সময়ে পাহাড়ের ছাত্র-যুবকদের ভিন্নভাবে চিত্রিত করে দূরে সরিয়ে রেখেছে, তাদের শক্তি সম্ভাবনা ধ্বংস করার নীলনক্সা জারি রেখেছে। তাতে গোটা দেশেরই ক্ষতি হচ্ছে।
বার্তায় তিনি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে সোহাগী জাহান তনু ধর্ষণ ও হত্যা (২০ মার্চ ২০১৬) প্রতিবাদে ইউপিডিএফভুক্ত সংগঠনসমূহের সোচ্চার হওয়া এবং ফিলিস্তিন সংহতি দিবসে (২৯ নভেম্বর ২০১৫) খাগড়াছড়িতে পুলিশের হামলায় জখম হয়ে দুই নারী সহযোদ্ধার কারাভোগের প্রসঙ্গও টানেন।
পাহাড় ও সমতলের জনগণের সংগ্রামী মৈত্রী জোরদারের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের ন্যায্য দাবি পূর্ণস্বায়ত্তশাসন ও দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম হবে বলে বার্তায় প্রসিত খীসা মন্তব্য করেছেন।