

রবিবার ● ২৯ জুন ২০২৫
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » ফটিকছড়িতে মায়া হরিণ সাবক উদ্ধার ; চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় হস্তান্তর
ফটিকছড়িতে মায়া হরিণ সাবক উদ্ধার ; চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় হস্তান্তর
ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি :: চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির সুয়াবিল ইউনিয়নের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে মা হারা একটি মায়া হরিণ এর সাবক উদ্ধার হয়েছে। পরে সাবকটি চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
জানা যায়, ২৯ জুন সকালে উপজেলার সুয়াবিল শোভনছড়ি বন থেকে মায়া হরিন সাবকটি লোকালয়ে আসলে স্থানীয় সচেতন তরুণ আব্দুল কুদ্দুছ সাবকটি
উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী হারুয়ালছড়ি ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন চৌধুরী এর সহায়তায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক চৌধুরী পরবর্তীতে প্রাথমিক পরিচর্যা শেষে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভর সাথে যোগাযোগ করলে হরিণ শাবকটি এমুহূর্তে মাহীন অবস্থায় প্রাকৃতিক পরিবেশে ছাড়লে জীবন বিপন্ন হতে পারে মতামত দিলে চিকিৎসা এবং রক্ষণের জন্য চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসন থেকে চিড়িয়াখানায় প্রেরণ করা হয়েছে।
সচেতন তরুণ আব্দুল কুদ্দুছকে ধন্যবাদ জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন,
বন্যপ্রাণী রক্ষায় উপজেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
এআই প্রতিষ্ঠানে ফটিকছড়ির সন্তান মোহাম্মদ ইরফানের চাকরিলাভ
ফটিকছড়ি :: চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির কৃতি কৃতি সন্তান ও চুয়েট এর শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইরফান বিশ্বের প্রযুক্তিকেন্দ্র যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রতিষ্ঠান অ্যাস্টেরা ল্যাবসে চাকরি পেয়েছেন।
৯ ধাপে ইন্টারভিউ দেওয়ার পর গত ২১ মে তিনি নিয়োগপত্র হাতে পান। ইলেকট্রিক্যাল প্রোডাক্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আগামীকাল সোমবার (৩০ জুন) যোগদান করবেন ইরফান। তিনি বছরে বেতন পাবেন ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া কোম্পানি সাইনিং বোনাস হিসেবে প্রথম বেতনের সঙ্গে প্রায় ৩০ লাখ টাকা পাবেন।
মো. ইরফান উদ্দীন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডস্থ কমিটি বাজার সংলগ্ন হাবিলাস গোমস্তার বাড়ির নিবাসী মোহম্মদ নেজাম উদ্দীনের প্রথম পুত্র।
উপজেলার ধর্মপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। উভয় পরীক্ষাতেই জিপিএ ছিল ৫.০০। এরপর চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) থেকে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।স্নাতক শেষ করেন ২০১৬ সালে, তবে সিজিপিএ ছিল মাত্র ২.৯৮।দেশে থাকতে চাকরি খুঁজে কিছুদিন বেকার ছিলেন, পরে ওয়ালটনে চাকরি পেয়ে হাতে কলমে কাজ শিখতে থাকেন।
দেশেই ক্যারিয়ার গড়তে চাইলেও ইরফানের ভেতরের স্বপ্নটা ছিল বড়—সিলিকন ভ্যালিতে কাজ করার। সেই স্বপ্ন নিয়েই ব্যক্তিগত কারণে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কম সিজিপিএ আর কোনো গবেষণাপত্র না থাকা। তাই বিকল্প পথ বেছে নেন, গ্র্যাজুয়েট রেকর্ড এক্সামিনেশন (জিআরই) ভালোভাবে দেন এবং ৩৩১ স্কোর তোলেন। এই স্কোরই তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াইয়োমিংয়ে ফুল ফান্ডিং স্কলারশিপে মাস্টার্সে পৌঁছে দেয় ২০২৩ সালের আগস্টে।
মাস্টার্সের শেষ সেমিস্টারে ঢুকে যায় চাকরি খোঁজার বাস্তবতা। জানুয়ারি থেকে একের পর এক আবেদন, কিন্তু সাড়া মিলছিল না। ক্লাস, পরীক্ষা আর গবেষণার ভিড়ে প্রতিদিনই দুই ঘণ্টা বরাদ্দ রাখতেন চাকরির জন্য। এক পর্যায়ে ফেব্রুয়ারি থেকে ইন্টারভিউ কল আসা শুরু হয়। তবুও প্রথম চাকরির অফার পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে মে মাস পর্যন্ত। এক হাজারেরও বেশি আবেদন জমা দিয়ে অবশেষে সেরা সুযোগটি পান—সিলিকন ভ্যালির এআই প্রতিষ্ঠান অ্যাস্টেরা ল্যাবসে ইলেকট্রিক্যাল প্রোডাক্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি।
এই চাকরি পেতে তাঁকে ৯ ধাপের ইন্টারভিউ দিতে হয়েছে, যার মধ্যে একদিনে টানা ৭টি ইন্টারভিউ দিতে হয়েছে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে। অনসাইট ইন্টারভিউয়ের জন্য ওয়াইয়োমিং থেকে ক্যালিফোর্নিয়া যেতে হয়েছে তাঁকে। এই দীর্ঘ ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বুঝে গেছেন, বাংলাদেশের কাজের অভিজ্ঞতা বা দক্ষতাও বিদেশে চাকরি পেতে বড় সহায়ক হতে পারে।
সবশেষে অ্যাস্টেরা ল্যাবসের চূড়ান্ত অফার বার্ষিক সাড়ে তিন কোটি টাকা বেতন, সঙ্গে প্রথম বেতনের সঙ্গে ৩০ লাখ টাকার সাইনিং বোনাস, শেয়ার ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। জীবনের শুরুতে গ্রামের স্কুল থেকে শুরু হওয়া এই যাত্রা অবশেষে তাঁকে নিয়ে গেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি জোন সিলিকন ভ্যালিতে।
তাঁর এ অর্জনে গ্রামের বাড়ি ফটিকছড়িতে আনন্দের বন্যা বইছে।
তাঁর ক্লাসমেট মাহাফুজল ইসলাম বলেন, আমাদের বন্ধু ইরফান ছাত্রাবস্থায় হতে খুব মেধাবী ছিল। তার সাফল্যে আমরা বন্ধুরা খুব আনন্দিত।
ধর্মপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একরাম উল্লাহ বলেন , ইরফান শুধু আমাদের বিদ্যালয়ের জন্য নয়, এখন পুরো দেশের জন্য গর্ব। তার আরেক ভাই আমাদের এই স্কুলেরই ছাত্র বর্তমানে এম বি বি এস কমপ্লিট করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে আছে।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন,
মোহাম্মদ ইরফান এর এ অর্জন ফটিকছড়িবাসীর জন্য আনন্দের ও গর্বের। তার প্রতি অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা রইল।
বাংলাদেশ থেকে সিলিকন ভ্যালিতে যাত্রা সম্পর্কে গণমাধ্যমকে মো. ইরফান উদ্দীন বলেন, চুয়েটে স্নাতক শেষ করার পর ঠিক করেছিলাম দেশেই ক্যারিয়ার গড়ব। আমি চাকরি খুঁজছিলাম, কিন্তু পাচ্ছিলাম না, এবং বেশ কিছুদিন বেকার ছিলাম। অবশ্য পরবর্তীতে চাকরি পাই এবং সর্বশেষ ওয়ালটনে চাকরি করি। সেখানকার অভিজ্ঞতা আমার বর্তমান চাকরি পেতে অনেক কাজে লেগেছে। ব্যক্তিগত কারণে বিদেশে উচ্চশিক্ষার সিদ্ধান্ত নিই। এরপরই আমি যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। ২০২৩ সালের আগস্টে বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আসি। যে কোনো ইঞ্জিনিয়ারের মতো আমারও স্বপ্ন ছিল একদিন সিলিকন ভ্যালিতে চাকরি করা। আজ আমার সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
‘কারবালা কেবল একটি যুদ্ধ নয় এটি ন্যায়বিচার ঈমান এবং ত্যাগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত’
ফটিকছড়ি :: শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) ট্রাস্ট নিয়ন্ত্রণাধীন মহিলাদের আত্মজিজ্ঞাসা ও জ্ঞান অনুশীলনমূলক সংগঠন ‘আলোর পথে’র ব্যবস্থাপনায় “পবিত্র শোহাদায়ে কারবালার দর্শন ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা” শীর্ষক মাসিক মহিলা মাহফিল ২৮ জুন শনিবার ট্রাস্টের নিজস্ব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
সৈয়দা আকলিমা ফাতেমা ও মাশরেখা সুলতানা মুক্তার সঞ্চালনায় মাহফিলে নির্ধারিত বিষয়ের উপর আলোচনা করেন উম্মুল আশেকীন মুনাওয়ারা বেগম এতিমখানা ও হেফজখানার প্রধান হাফেজ মুহাম্মদ আবুল কালাম।
তিনি আহলে বাইতে রাসুল (দ.)-এর মর্যাদা ও আত্মত্যাগ পবিত্র কোরআন ও হাদিসের রেফারেন্সের আলোকে তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন, কারবালা কেবল একটি যুদ্ধ নয় এটি ন্যায়বিচার, ঈমান এবং ত্যাগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কারবালা হচ্ছে সত্য ও মিথ্যার প্রভেদকারী। যেখানে সত্য সেখানে হোসাইন, যেখানে ত্যাগ সেখানেই হুসাইন। আহলে বাইয়াত রাসুল (দ.)’র মর্যাদা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসমানের আমানতদার যেমন তারকারাজি তেমনি জমিনের আমানতদার হলেন আহলে বাইয়াত রাসুল (দ.)।
আহলে বাইতের ভালোবাসা আমাদের ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তাঁদেরকে ভালোবাসা আমাদের জন্য ফরজ। যেদিন কোন আহলে বাইয়াত থাকবে না সেদিন দুনিয়াও থাকবে না। আল্লাহ্র প্রিয়ভাজন বান্দারা সর্বাবস্থায় খোদার ইচ্ছাশক্তির উপর নিজেকে সমর্পণ করে দেন। তিনি কারবালার ময়দানে আহলে বাইয়াত পরিবারের মহীয়সী মহিলাদের আত্মত্যাগের গৌরবময় ভূমিকাও তুলে ধরেন। যারা আহলে বাইতের সাথে সম্পর্ক রাখে তাদেরকে সবসময় কারবালার ন্যায় সত্য- মিথ্যা ও ধৈর্যের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়। এ প্রসঙ্গে বক্তা উম্মুল আশেকীন আম্মাজান মুনাওয়ারা বেগমের অপরিসীম ধৈর্য ও আত্মত্যাগের বাস্তব উদাহরণও তুলে ধরেন।
মাহফিলে কোরআন তেলাওয়াত করেন সিদরাতুল মুনতাহা, নাতে রাসুল (দ.) ও মাইজভাণ্ডারী কালাম পরিবেশন করেন উম্মে সায়মা সাদিয়া ও নিপা মনি।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নোয়াপাড়া ডিগ্রী কলেজ, রাউজান এর ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক শেখ বিবি কাউসার।
পরিশেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহ্র শান্তি কামনা করে মোনাজাতের মাধ্যমে মাহফিলের পরিসমাপ্তি ঘটে।