

বৃহস্পতিবার ● ৩১ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » ময়মনসিংহ » ঈশ্বরগঞ্জে ছেলেকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা
ঈশ্বরগঞ্জে ছেলেকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা
উবায়দুল্লাহ রুমি, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :: ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে মোবারক হোসেন (১০) নামে এক শিশুকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত বাবা নূরুল আমিনকে (৩৫) আটক করেছে পুলিশ। বুধবার উপজেলার সোহাগী ইউনিয়নের বৃ-কাঁঠালিয়া গ্রামে এ মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে। অভিযুক্ত নূরুল আমিন ওই গ্রামের ইছব আলীর ছেলে।
স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, নিহত মোবারক হোসেন সোহাগি বাজারের পাশে স্বপ্নসিঁড়ি নামে একটি কিন্ডারগার্টেনের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলো। অভিযুক্ত বাবা নূরুল আমীন রাজধানী ঢাকার মিরপুরে কাঁচামালের ব্যবসা করতেন। তবে দুই মাস আগে তিনি পেশা ছেড়ে নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। ঘটনার দিন বিকেলে নূরুল আমীন বাড়ির সামনে বৃষ্টিতে ভিজতে ছিলেন। এ সময় তার ছেলে মোবারক হোসেন ছাতা নিয়ে বাবার কাছে এগিয়ে গেলে, হঠাৎ পাশেই থাকা কুড়াল দিয়ে ছেলের মাথায় সজোরে কোপ দেন। পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়রা উদ্ধার করে দ্রুত ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। মোবারকের অবস্থা গুরতর হওয়ায় সেখানকার চিকিৎসক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। কিন্তু হাসপাতালে নেয়ার পথেই মোবারক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
অভিযুক্ত নূরুল আমিনের পিতা ও নিহত শিশুর দাদা ইছব আলী বলেন, নূরুল আমিন দীর্ঘদিন যাবৎ মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। এর পূর্বে চিকিৎসা করানোর পর ভালো হয়ে গিয়েছিলো। সপ্তাহখানেক ধরে আবারও সমস্যা দেখা দিয়েছে।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার থানার অফিসার ইনচার্জ ওবায়দুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহত শিশুর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত নূরুল আমিনকে আটক করা হয়েছে। নূরুল আমিন অসুস্থ থাকায় ঈশ্বরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পুলিশ হেফাজতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
ময়মনসিংহে ২বছর পর চুরির রহস্য উদঘাটন করলো পিবিআই
ময়মনসিংহ :: ময়মনসিংহ জেলা শহরের ছোট বাজার এলাকা থেকে ২০২২ সালে শামছুল আলমের (৬৫) ব্যাগ থেকে চার লাখ টাকা চুরির ঘটনায় দুই বছর পর মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ময়মনসিংহ জেলা। ২৯ জুলাই ঢাকার চকবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত হান্নান মিয়া (৬২)ঢাকার কোতোয়ালী থানার মৃত আলী মিয়ার ছেলে।
ময়মনসিংহ পিবিআই সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ৯ নভেম্বর দুপুর আনুমানিক ১টায় শামছুল আলম ময়মনসিংহ নগরীর পূবালী ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে জনতা ব্যাংকে লেনদেন করেন। জনতা ব্যাংক থেকে বের হয়ে ছোট বাজার লিমা প্রিন্টিং প্রেসের সামনে আসার পর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তার কাপড়ে ময়লা ছিটিয়ে দেয় এবং একজন তাকে জানায় তার কাপড়ে ময়লা লেগে আছে। শামছুল আলম তখন তার পাশে ব্যাগে থাকা ৪ লাখ টাকা রেখে কাপড় পরিষ্কার করতে শুরু করলে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা ব্যাগসহ টাকা চুরি করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় তিনি কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। কোতোয়ালী থানা পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করলে আদালতের নির্দেশে পিবিআই ময়মনসিংহ মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে এবং এসআই মোহাম্মদ বিল্লাল মিয়া তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে তদন্ত শুরু করেন।
অ্যাডিশনাল আইজিপি পিবিআই মোস্তফা কামাল এবং পিবিআই ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার রকিবুল আক্তারের তত্ত্বাবধানে মামলাটির রহস্য উদঘাটনে একটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়। এই টিম ঘটনার তারিখ ও সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে চোরের চেহারা শনাক্ত করে। তথ্য-প্রযুক্তি ও এআই-এর সহায়তায় সিসি ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পিবিআই ময়মনসিংহের অভিযানিক দল মঙ্গলবার রাতে চুরির ঘটনায় জড়িত মোঃ হান্নানকে ঢাকার চকবাজারের ৯৬ নম্বর নাজিম উদ্দিন রোডস্থ বাসা থেকে গ্রেফতার করে।
পিবিআই-এর জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী হান্নান ৪ লাখ টাকা চুরির বিষয়টি স্বীকার করেন। পরে ৩০ জুলাই তাকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় নিজের অপরাধের দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
এ বিষয়ে পিবিআই ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার মোঃ রকিবুল আক্তার জানান, প্রকাশ্যে দিবালোকে জনবহুল এলাকায় অভিনব কায়দায় চুরির এই ঘটনাটি সিসি টিভি ফুটেজের মাধ্যমে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছিল। জনাকীর্ণ এলাকায় সংঘটিত হওয়ায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে প্রকৃত চোরকে শনাক্ত করা কঠিন ছিল। প্রায় দুই বছর ধরে সিসি টিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এবং তথ্য-প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আসামী হান্নান মিয়াকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামী ৪ লাখ টাকা চুরি করার কথা স্বীকার করেছে। জানা গেছে, আসামী আন্তঃজেলা চোর দলের সদস্য এবং সে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জেলায় একই কায়দায় চুরি করে থাকে। তার নামে পূর্বের একাধিক মামলাও রয়েছে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, “আসামী হান্নান বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে, ন্যায়বিচার নিশ্চিতের লক্ষ্যে আমরা সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব নিয়ে কাজ করছি। মামলার তদন্ত অব্যাহত আছে, ঘটনার সাথে অন্য কেউ জড়িত আছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”