

বুধবার ● ১৩ আগস্ট ২০২৫
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » রাঙামাটিতে দীর্ঘ ২৩ বছর আইনী লড়াইয়ের পর জমির স্বত্বধিকার ফিরে ফেলেন সুপ্রিয় বড়ুয়া
রাঙামাটিতে দীর্ঘ ২৩ বছর আইনী লড়াইয়ের পর জমির স্বত্বধিকার ফিরে ফেলেন সুপ্রিয় বড়ুয়া
স্টাফ রিপোর্টার :: রাঙামাটি যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মনীষা মহাজন গত ০৭ জুলাই ২০২৫ ইংরেজি তারিখ মামলা নং- সিভিল - ১৯৫/২০২১ রায় ঘোষণা করেন।
মামলার আরজীর সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কোতয়ালী থানাধীন রাঙামাটি সদর পৌর এলাকায় অন্তর্ভুক্ত ফিসারী এলাকার কাঠাতলী সাকিনস্থ বাজার ফান্ড প্রশাসনের আওতাধীন বাজার ফান্ড প্লট নং- ২(বি) এর ১৯০০ বর্গফুট জায়গাসহ তৎস্থিত স্থাপনা মূলে রেকর্ডীয় মালিক ছিল বাদী, বিবাদী ও মোকাবেলা বিবাদীগণের মৃত পিতা জৈনক রবিন্দ্র লাল বড়ুয়া (গোবিন্দ) বাদীগণ, বিবাদীগণ ও মোকাবেলা বিবাদীগণের পিতা জীবমানে সাকুল্যভূমি মিউটেশন মামলা নং- ০৪/২০০২-২০০৩ মূলে বাদী বিবাদী ও মোকাবেলা বিবাদীগণের অপর ভ্রাতা পলাশ বড়ুয়া এবং মাতা- প্রভা রানী বড়ুয়া বরাবরে দানপত্র মূলে সাকুল্য ১৯০০ বর্গফুট জায়গা হস্তান্তর করার পরবর্তীতে জৈনক রবিন্দ্র লাল বড়ুয়া (গোবিন্দ) মৃত্যুবরণ করেন।
তৎপরবর্তীতে বাদীগণ বিবাদীগণ ও মোকাবেলা বিবাদীগণের মাতা প্রভা রানী বড়ুয়া বাদী, বিবাদী ও মোকাবেলা বিবাদীগণকে উত্তরাধিকারী ওয়ারীশ পুত্র কন্যাগণ হিসাবে বিদ্যমান রাখিয়া জৈনক প্রভারানী বড়ুয়া মৃত্যু বরণ করেন।
তৎপর পরবর্তীতে বাদী ও মূল বিবাদীগণ বাদী হয়ে তাদের অপর ভাই পলাশ বড়ুয়া ও মাতা প্রভারানী বড়ুয়া নামীয় দানপত্র দলিলসহ বাজার জমাবন্দি রেকর্ডসহ বন্ড নং- ২৫৮/৩৪ তাং-২০/০৯/২০০৩ সর্বসাকুল্য বাতিলের দাবী করে যুগ্ম জেলা জজ আদালত রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় সিভিল স্যুট মামলা নং- ৩৫৮/২০১৩ দায়ের করেন।
মামলাটি পরিচালনা করে অত্র মামলার বাদী সুপ্রিয় বড়ুয়া।
সিভিল স্যুট ৩৫৮/১৩নং মামলাটি চলামান অবস্থায় মামলার একমাত্র বিবাদী জৈনক পলাশ বড়ুয়া নাশিলা ভূমিতে বাদী এবং মূল বিবাদীগণ এবং মোকাবেলা বিবাদীগণকে বিত্তভোগী উত্তরাধিকারী রেখে অবিবাহিত অবস্থায় চিকিৎসাধীন থেকে মৃত্যু বরণ করেন।
প্রভারানী বড়ুয়া এবং পলাশ বড়ুয়ার মৃত্যুর পর অত্র মামলা বাদী, মূল বিবাদীগণ এবং মোকাবেলা বিবাদীগণ নালিশী ভূমিতে এজমালীতে বিত্তভোগী ওয়ারীশ হিসাবে মালিকানা ভাগ করে এবং এজমালীতে ভোগদখলে নিয়ত আছে। অত্র মামলার মূল বিবাদীগণ নালিশা এজমালিভূক্ত জায়গা জমি কোন প্রকার বিভাগ বন্টন না করে যার যার মতে ভোগ দখল করতে থাকে এবং মূল বিবাদীগণ জোর পূর্বক ঘর মেরামতসহ মূল জায়গা জবর দখল করার জন্য বাদীকে প্রায়শ হুমকি-ধমকি প্রদান করে আসছে। মূল বিবাদীগণ তাদের ইচ্ছা মত মূল্যমান জায়গা জবর দখল করে ঘর নির্মাণ সহ ঘর মেরামতের কাজ করছে। মূল বিবাদীগণ পলাশ বড়ুয়া নামীয় পেট্রোলিয়াম লাইসেন্স নং- ২৪৩-০৩ (জ)-০০৩৪ কলাকৌশলে হাত করে ২নং বিবাদী তা এককভাবে অবৈধ পন্থায় ব্যবহার করে আসছে এবং একক ভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছে। এ সকল কারণে বাদী নালিশী জমি ও তেলের পলাশ এন্টারপ্রাইজ ব্যবসায় স্বত্ব ঘোষণার ডিক্রি প্রার্থনা করেন ।
বিবাদীপক্ষ অত্র মোকদ্দমায় লিখিত জবাব দাখিল করে বলেন, নালিশী বাজার ফান্ড প্লট নং ২(বি) এর ১৯০০ বর্গফুট জমিতে বাদী-বিবাদীগন এজমালিতে ভোগ দখলে মাল গুজার আছে। পক্ষান্তরে জ্বালানী তেলের লাইসেন্স নং ২৪৩-৩(ঝ)-০০৩৪ মালিক অলোক প্রিয় চৌধুরী বিধি মোতাবেক বছর বছর নবায়ন করিয়া এককভাবে মূলধন বিনিয়োগ করিয়া ব্যবসা পরিচালনা করিতেছে বিধায় উক্ত জ্বালানী তেলের ব্যবসায় বাদীর ন্যূনতম স্বত্ব-স্বামীত্ব কিংবা অধিকার নাই বা থাকিতে পারে না।
এমতাবস্থায় বাদীর স্বত্ব-ঘোষনার মামলা আইনগত ও তথ্যগত ভাবে চলে না। এই সকল কারণে এই বিবাদীপক্ষ বাদীর মোকদ্দমা খারিজের প্রার্থনা করেন ।
আরজী, জবাব এবং সাক্ষ্য পর্যালোচনায় অত্র মোকদ্দমার সঠিক সিদ্ধান্তের প্রয়োজনে নিম্নলিখিত বিচার্য্য বিষয় সমূহ পুর্নগঠন করা হল : বিচার্য বিষয় সমূহ :-
(১) বাদীর মোকদ্দমাটি আনীত আকারে ও প্রকারে আইনতঃ রক্ষনীয় কিনা?
(২) নালিশী তফসীলোক্ত সম্পত্তিতে বাদীর স্বত্ব- স্বার্থ ও দখল আছে কিনা?
(৩) নালিশী পলাশ এন্টারপ্রাইজের ব্যবসায় বাদীর স্বত্ব প্রমাণিত হয়েছে কিনা?
(৪) বাদী প্রার্থীত মতে ডিক্রী পেতে পারেন কিনা?
আলোচনা ও সিদ্ধান্ত : বাদী পক্ষে ১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য উপস্থাপন করা হয়।
বিবাদীপক্ষে ৩ জন সাক্ষী আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
পরস্পর সম্পর্ক যুক্ত হওয়ায় সকল বিচার্য বিষয় সমূহ একত্রে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য নেয়া হয় ।
নালিশী বাজার ফান্ডের জমিতে বাদীর স্বত্ব প্রমানিত হলে ও পলাশ এন্টারপ্রাইজ এর ব্যবসায় বাদী তার স্বত্ব প্রমান করতে সক্ষম না হওয়ায় বাদী ডিক্রী পেতে পারে মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বাদীর মোকদ্দমাটি আইনত রক্ষনীয় মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় । বাদী পক্ষ এ মামলাটির ডিক্রী পায় ।
এ মামলায় বাদী সুপ্রিয় বড়ুয়ার পক্ষে ছিলেন এডভোকেট গফুর বাদশা এবং এডভোকেট মোহাম্মদ শাহ আলম।
বিবাদী মিন্টু চৌধুরী (পিন্টু) গং পক্ষে ছিলেন এডভোকেট মোখতার আহম্মদ।
এই রায়ে মামলার বাদী সুপ্রিয় বড়ুয়া বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ, রাঙামাটি পার্বত্য জেলার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
বাদী বলেন দীর্ঘ ২৩ বছর পর আইনী লড়াই এর পর তিনি তার জমি স্বত্বধিকার ফিরে ফেলেন।