শিরোনাম:
●   প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির বৈঠক ●   পার্বতীপুরে শ্লীলতাহানির অভিযোগে, সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানীর ডিজিএম গ্রেপ্তার ●   মিরসরাই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন নুরুল আমিন ●   কুষ্টিয়া গণপূর্ত অফিসেই ১৮ বছর’ আ’লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত অনুপ কুমার সাহা ●   চিৎমরম বৌদ্ধবিহারে কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পন্ন ●   বেণুবন উওমানন্দ ধর্মবন বৌদ্ধ বিহারে কঠিন চীবর দানোৎসব ও সংবর্ধনা ●   প্রেমের টানে পাকিস্থানি তরুণী বাংলাদেশে ●   আগামীকাল ৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের সাথে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎকার ●   ঝালকাঠি-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন ইলেন ভুট্টো ●   বনরূপা ব্যবসায়ী সমিতির নতুন কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ ●   দিনাজপুর-৫ মনোনয়ন প্রত্যাশী নূরুল হুদা বাবু’র সাংবাদিকদের সঙ্গে নির্বাচনী মতবিনিময় ●   কাপ্তাইয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শনে বিভাগীয় কমিশনার জিয়াউদ্দিন ●   বাজুস এর নতুন সভাপতি নির্বাচিত হলেন এনামুল খান দোলন ●   বাজুস এর নতুন সহ-সভাপতি হলেন ইকবাল হোসেন চৌধুরী ●   পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠনের ১৫ সদস্য বিশিষ্ট রাঙামাটি পৌরসভার ০৮ নং ওয়ার্ড কমিটি পূর্ণগঠন ●   মুসমানের সেকুলারিজম হওয়ার কোন সুযোগ নেই ●   ভোটে কোটি টাকা খরচকারীদের চক্র ভাঙ্গতে হবে : ব্যারিস্টার ফুয়াদ ●   রাজাভুবন বিদ্যালয় পরিদর্শনে হুমাম কাদের চৌধুরী ●   মিরসরাইয়ে পারিবারিক কলহের জেরে বড় ভাইয়ের হাতে ছোট ভাই খুন ●   বেতবুনিয়া সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু ●   তীরে এসে তরি ডোবাবেন না : সাইফুল হক ●   ঈশ্বরগঞ্জে মাদক ও সন্ত্রাসবিরোধী মামলার আসামিসহ গ্রেফতার-৬ ●   আত্রাইয়ে ৫৪ তম জাতীয় সমবায় দিবস উদযাপন ●   বৃহত্তর বনরূপা ব্যবসায়ি কল্যাণ সমবায় সমিতি এর শুভেচ্ছা বিনিময় ●   কাপ্তাইয়ে জাতীয় সমবায় দিবস পালন ●   কাউখালীতে ৫৪ তম জাতীয় সমবায় দিবস পালন ●   পাচারকালে ১ হাজার ৯শত পিস ইয়াবাসহ মিরসরাইয়ে গ্রেফতার-২ ●   রাঙ্গুনিয়ায় শ্রমিক নেতাকে হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদে মানববন্ধন ●   ঈশ্বরগঞ্জে চা বিক্রেতাকে পিটিয়ে টাকা ছিনিয়ে নিল মাদকচক্র ●   কাপ্তাইয়ে সাপছড়ি বৌদ্ধ বিহারে কঠিন চীবর দান উৎসব সম্পন্ন
রাঙামাটি, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২



CHT Media24.com অবসান হোক বৈষম্যের
বৃহস্পতিবার ● ৩০ নভেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » আবার পুরাতন পণ্য নতুন মড়কে : পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে পিসিজেএসএস
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » আবার পুরাতন পণ্য নতুন মড়কে : পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে পিসিজেএসএস
বৃহস্পতিবার ● ৩০ নভেম্বর ২০১৭
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

আবার পুরাতন পণ্য নতুন মড়কে : পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে পিসিজেএসএস

---ষ্টাফ রিপোর্টার :: (১৬ অগ্রহায়ন ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৪.৫১ মি.) পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে ! আবার পুরাতন পণ্য নতুন মড়কে উপস্থাপন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি-পিসিজেএসএস (সন্তু লারমা)।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী সকল কার্যক্রম প্রতিরোধ করাসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলন সংগঠিত করার ঘোষণা দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি-পিসিজেএসএস (সন্তু লারমা)।

গতকাল ২৯ নভেম্বর বুধবার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির উদ্যোগে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দুই দশকপূর্তি উপলক্ষ্যে রাজধানীর সুন্দরবন হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন পিসিজেএসএস সভাপতি ও পার্বত্য চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরকারী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)।
তিনি তাঁর ঘোষনায় বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের স্বার্থে চুক্তি-পরিপন্থী ও জুম্ম স্বার্থ বিরোধী যে কোন ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করতে জুম্ম জনগণ আজ দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাই ২০১৬ সালে ঘোষিত দশদফা কর্মসূচির ভিত্তিতে অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাওয়া; পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী সকল কার্যক্রম প্রতিরোধ করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলন সংগঠিত করা- এই তিনদফা আন্দোলনের ঘোষণা দেন তিনি। নিজে উগ্র সাম্প্রদায়িক সংগঠনের নেতা হয়ে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য দেশের গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিও আহ্বান জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরার সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য তুলে করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরকারী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)।
সংবাদ সম্মেলনে যারা উপস্থিত ছিলেন তারা কেউ পার্বত্য চট্টগ্রামের নাগরিক নয়, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট কলামিষ্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, মানবাধিকার কর্মী নুমান আহমেদ খান ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক এন্ড্রু সলোমার প্রমুখ।
উল্লেখ্য শনিবার ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২০তম বর্ষপূর্তি হয়ে ২১ বছরে পা রাখবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল সম্প্রদায়ের আত্মসামাজিক উন্নয়নের কথা বলে ১৯৯৮ সালে ২রা ডিসেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসাধারণের কোন উপকারে আসেনি। এই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি কেবল মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করেছে, হাজার হাজার অবৈধ ভূমি দখলদার বেড়েছে, সাধারন পাহাড়িদের প্রতি শোষণ-নিপীড়ন বেড়েছে, একটি মহল রাতারাতি কোটি কোটি কালো টাকার মালিক বনে গেছে এবং পার্বত্য অঞ্চলে সর্বস্তরে বৈষম্যের জন্ম হয়েছে।
এই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির কারনে পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাসরত স্থায়ী বাসিন্দারা সংবিধানে রক্ষিত নাগরিক অধিকার টুকু হারিয়েছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি একটি বৈষম্যমুলক এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারন জনগণের প্রতিকুলে ।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারন জনগণ এবং সকল সম্প্রদায়ের সচেতন নাগরিকরা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিটি যুগোপযোগি আধুনিক চিন্তা চেতনার ভিত্তিতে সংশোধন করে পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাসরত সকল স্থায়ী নাগরিকদের সম-মর্যাদা এবং সম-অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২০তম বর্ষপূর্তিতে।

নিচে সংবাদ সম্মেলনে মুল বক্তব্য হুবহু প্রকাশ করা হলো :
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সংবাদ সম্মেলন
২৯ নভেম্বর ২০১৭, বুধবার, সকাল ১১টা, হোটেল সুন্দরবন, ঢাকা
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দুই দশক পূর্ণ হতে চলেছে। কিন্তু অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে, এই দীর্ঘ সময়েও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ বিষয়ই অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়ে গেছে। ২০০৯ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার বলেছিলেন যে, চারদলীয় জোট সরকারের ৫ বছর এবং ড. ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২ বছর মোট ৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকায় চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়ার সুযোগ ছিল না। তাই ২০০৯ সালে সরকার গঠনের মাধ্যমে চুক্তির প্রতিটি ধারা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করা হবে বলে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে। কিন্তু বিগত ৯ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন থাকা সত্ত্বেও বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ বাস্তবায়নে কোন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ফলে চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ পূর্বের মতোই অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে। আরো উদ্বেগের বিষয় যে, শেখ হাসিনা সরকার কেবল চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ অবাস্তবায়িত অবস্থায় ফেলে রেখে দেয়নি, পক্ষান্তরে একের পর এক চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছে। ফলশ্রুতিতে-
– পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান হয়নি।
– পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম (উপজাতীয়) অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য তথা জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব সংরক্ষণ নিশ্চিত হয়নি।
– পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সাথে সঙ্গতি বিধানকল্পে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রযোজ্য আইনসমূহ সংশোধন করা হয়নি।
– পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ সম্বলিত বিশেষ শাসনব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেনি।
– পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি-বাঙালি স্থায়ী অধিবাসীদের প্রত্যক্ষ ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠিত হয়নি।
– তিন পার্বত্য জেলার সাধারণ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা, পুলিশ, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, বন ও পরিবেশ, পর্যটন, মাধ্যমিক শিক্ষা, উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়গুলো এখনো তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে হস্তান্তর করা হয়নি।
– পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন কার্যকর হয়নি। আঞ্চলিক পরিষদকে অথর্ব করে রাখা হয়েছে।
– সেটেলার বাঙালি, অস্থানীয় ব্যক্তি ও কোম্পানী, সেনাবাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ভূমি বেদখল বন্ধ হয়নি এবং বেদখলের ফলে উদ্ভূত পার্বত্যাঞ্চলের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি।
– ‘অপারেশন উত্তরণ’সহ সকল অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহারের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে বলবৎ সেনাশাসনের অবসান হয়নি।
– ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণ জুম্ম উদ্বাস্তুদের স্ব স্ব জায়গা-জমি প্রত্যর্পণ র্প্বূক যথাযথ পুনর্বাসন প্রদান করা হয়নি।
– পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল চাকুরিতে পাহাড়িদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়োগ সুনিশ্চিত হয়নি।
– সেটেলার বাঙালিদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসন করা হয়নি।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
গত ২০১৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের বিরোধাত্মক ধারা সংশোধনের পর এক বছরের অধিক সময় অতিক্রান্ত হলেও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির কাজ শুরু হয়নি। ভূমি কমিশন আইনের ১৮নং ধারায় “এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার, যথাশীঘ্র সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বিধি প্রণয়ন করিবে” মর্মে উল্লেখ রয়েছে। তদনুসারে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের বিধিমালার খসড়া গত ১ জানুয়ারি ২০১৭ ভূমি মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সরকার সেই বিধিমালা চূড়ান্ত করেনি। এই বিধিমালা চূড়ান্ত না হওয়ার কারণে কমিশনের ভূমি বিরোধ সংক্রান্ত মামলার শুনানী বা বিচারিক কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন গঠিত হলেও কমিশনের নেই প্রয়োজনীয় জনবল ও তহবিল। খাগড়াছড়ি জেলায় কমিশনের প্রধান কার্যালয় স্থাপিত হলেও এখনো রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলায় শাখা কার্যালয় স্থাপন করা হয়নি। আরো উল্লেখ্য যে, ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আনোয়ার-উল হকের মেয়াদ গত ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে শেষ হয়েছে। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে একজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে (অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি) এখনো চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে সকল অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহারের বিধান থাকলেও এখনো চার শতাধিক ক্যাম্প পার্বত্যাঞ্চলে বিদ্যমান রয়েছে। অধিকন্তু ২০০১ সালে ‘অপারেশন উত্তরণ’ নামে সেনাশাসন জারি করে। এই ‘অপারেশন উত্তরণ’-এর বদৌলতে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রশাসনিক, আইন-শৃঙ্খলা, উন্নয়নসহ গুরুত্বপূর্ণ সকল বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনা কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত-নির্ধারণী ভূমিকা পালন করে চলেছে এবং চুক্তি বাস্তবায়নে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে। উক্ত সেনাশাসনের কারণে সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে অবাধে যত্রতত্র সেনা অভিযান, তল্লাসী, ধরপাকড়, মারপিট, দমন-পীড়ন এবং বাক-স্বাধীনতা ও সভা-সমাবেশের উপর হস্তক্ষেপ ইত্যাদি চালিয়ে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্যসহ আন্দোলনরত কর্মীদেরকে চাঁদাবাজি, অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী, বিচ্ছিন্নতাবাদী ইত্যাদি সাজানো অভিযোগে অভিযুক্ত করে মিথ্যা মামলা দায়ের, ধরপাকড়, জেলে প্রেরণ, ক্যাম্পে আটক ও নির্যাতন, ঘরবাড়ি তল্লাসী ইত্যাদি নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অবাস্তবায়িত বিষয়সমূহ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের কোন উদ্যোগ নেই। বরঞ্চ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের পরিবর্তে সরকারকে চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী ভূমিকায় সক্রিয় থাকতে দেখা যায়। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দোহাই দিয়ে চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রমের মাধ্যমে জুম্মদের সংস্কৃতি ও অস্তিত্ব ধ্বংস, জুম্মদের ভূমি জবরদখল, তাদের চিরায়ত ভূমি থেকে উৎখাত, প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং বনজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করে চলেছে। যেমন-
● পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সাথে সঙ্গতি বিধানকল্পে ১৮৬১ সালের পুলিশ এ্যাক্ট, পুলিশ রেগুলেশন, ১৯২৭ সালের বন আইন ও ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশনসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রযোজ্য অন্যান্য আইন সংশোধন করার জন্য অব্যাহতভাবে দাবি জানানো হলেও সরকার আজ অবধি কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্যবাসীর বিরোধিতা সত্ত্বেও নিজেদের দলীয় সংকীর্ণ স্বার্থে সরকার অতি দ্রুততার সাথে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন ২০১৬ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন ২০১৪ জাতীয় সংসদে পাশ করে থাকে।
● “পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের প্রধান কার্যালয়, বাসভবন ও এতদসংশ্লিষ্ট কমপ্লেক্স নির্মাণ শীর্ষক” প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ ও অর্থ বরাদ্দ ‘প্রক্রিয়াধীন’ রয়েছে মর্মে দোহাই দিয়ে বিগত দুই দশক ধরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। ২০ বছরেও আঞ্চলিক পরিষদ কমপ্লেক্সের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। অথচ পার্বত্যবাসীর প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ সরাসরি স্থাপন করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান নাজুক পরিস্থিতিতে কলেজসহ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার প্রতি নজর না দিয়ে সরকারের তথাকথিত উচ্চ শিক্ষার আয়োজনের পশ্চাতে গভীর ষড়যন্ত্র ও রাজনেতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে বিবেচনা করা যায়।
● পর্যটন (স্থানীয়) বিষয়টি তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের আওতাধীন অন্যতম বিষয় হলেও ২৮ আগস্ট ২০১৪ পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট উক্ত বিষয়টি অসম্পূর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণভাবে হস্তান্তর করা হয়। ফলে পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক নিজস্ব অর্থায়নে গৃহীত পর্যটন ছাড়া অন্য কোন পর্যটন তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের এখতিয়ারে রাখা হয়নি। পক্ষান্তরে চুক্তি লঙ্ঘন করে সেনাবাহিনী, বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনকে পর্যটনের প্রধান দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, যা বিধিসম্মত নয়। জুম্মদের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি ও জীবনধারা, ভূমি অধিকার এবং পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য বিবেচনায় না নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে নির্বিচারে ব্যাপক হারে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন করে ব্যাপক এলাকা জবরদখল করা হচ্ছে। এসব জায়গা-জমি হচ্ছে জুম্মদের মৌজা ও জুম ভূমি। বন, ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের উপর জুম্মদের অধিকার হরণ করা হচ্ছে এবং এসব এলাকায় জুম চাষ, বাগান-বাগিচা গড়ে তোলা, মৌসুমী ক্ষেত-খামারে জুম্মদেরকে বাধা দেয়া হচ্ছে। এর ফলে জুম্মদের জীবন-জীবিকা ও খাদ্য নিরাপত্তা, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য বিপন্ন হয়ে পড়ছে।
● পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ১নং ধারায় পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করে এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ এবং এই অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন অর্জন করার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু উক্ত বিধান মোতাবেক সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ কোন আইনী ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। পক্ষান্তরে ‘উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য’কে ক্ষুণ্ন করার লক্ষ্যে সেটেলার বাঙালিদের পুনর্বাসন; সেটেলারদের গুচ্ছগ্রাম সম্প্রসারণ; বহিরাগতদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তকরণ; ডেপুটি কমিশনার কর্তৃক বহিরাগতদেরকে স্থায়ী বাসিন্দার সনদপত্র প্রদান এবং চাকুরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান; অবাধে ভূমি বেদখল; বহিরাগতদের নিকট ভূমি বন্দোবস্তী ও ইজারা প্রদান; জুম্ম জনগণকে সংখ্যালঘু করার লক্ষ্যে নতুন করে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ঘটানো ইত্যাদি কার্যক্রম অব্যাহতভাবে চলছে, যার মূল লক্ষ্য হলো অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করা।
● পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সেটেলার বাঙালিদেরকে যথাযথ ও সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসনের পরিবর্তে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় সমতল জেলাগুলো থেকে বহিরাগত অভিবাসন অব্যাহত রয়েছে। সেটেলার বাঙালিরা রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রত্যক্ষ সহায়তায় জুম্মদের জায়গা-জমি জবরদখল, নারীর উপর সহিংসতা, পার্বত্য চুক্তির বিরোধিতা ও সাম্প্রদায়িক তৎপরতা ক্রমাগত চালিয়ে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, বর্তমান সরকারের আমলে ১১টি সাম্প্রদায়িক হামলাসহ পার্বত্য চুক্তি-উত্তর সময়ে অন্তত ২০টি সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘটিত হয়েছে, যার মূল লক্ষ্য হলো জুম্মদেরকে তাদের স্বভূমি থেকে উচ্ছেদ করা এবং জাতিগতভাবে নির্মূল করা।
চুক্তির ‘খ’ খন্ডের ৩৪(ক) ধারা মোতাবেক ‘ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা’ বিষয়টি পার্বত্য জেলা পরিষদের আওতাধীন অন্যতম একটা বিষয়। এই খন্ডের ২৬নং ধারায় তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের পূর্বানুমোদন ব্যতীত জায়গা-জমির বন্দোবস্ত, ক্রয়, বিক্রয়, হস্তান্তর ও অধিগ্রহণ করা যাবে না বলে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু আজ অবধি উক্ত বিষয় পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট হস্তান্তর করা হয়নি। পক্ষান্তরে ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধির দোহাই দিয়ে ডেপুটি কমিশনারগণ অবৈধভাবে নামজারি, অধিগ্রহণ, ইজারা ও বন্দোবস্ত প্রদানের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন। বনায়ন ও সেটেলারদের গুচ্ছগ্রাম সম্প্রসারণ, সেনা ক্যাম্প ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন ও সম্প্রসারণ এবং পর্যটনের নামে হাজার হাজার একর জমি বেদখল ও অধিগ্রহণ করা হচ্ছে যা সরাসরি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি লঙ্ঘন।
● পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি, পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সংক্রান্ত এক ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ২০১০ সালের এপ্রিলে হাই কোর্টের প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে আপীল আবেদন করা হয়। কিন্তু আজ অবধি এই আপীলের কোন সুরাহা হয়নি। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে ইহা ক্রমাগত জটিলতর ও অনিশ্চিত হয়ে উঠছে।
● পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ফলে স্থাপিত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ পূর্বের মতো “শান্তি চুক্তির শর্তানুযায়ী চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ইতোমধ্যে ৪৮টি ধারা সম্পূর্ণ, ১৫টি ধারা আংশিক এবং অবশিষ্ট ৯টি ধারার বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান আছে” বলে মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ৭২টি ধারার মধ্যে মাত্র ২৫টি ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে এবং এখনো দুই-তৃতীয়াংশ ধারা অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে। চুক্তি বাস্তবায়নের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে জনসংহতি সমিতির সভাপতির পক্ষ থেকে গত ১ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে “পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যেসব বিষয় বাস্তবায়িত হয়নি তার বিবরণ” সম্বলিত ১৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন এবং তৎসঙ্গে সহায়ক দলিল হিসেবে ১৬টি পরিশিষ্ট সংযুক্ত করে প্রধানমন্ত্রীর নিকট জমা দেয়া হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন বিষয়ে গোয়েবলসীয় কায়দায় অব্যাহতভাবে অসত্য তথ্য প্রদান করে চলেছে।
● পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডসহ সকল উন্নয়ন কার্যক্রমের সমন্বয় ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের। কিন্তু আঞ্চলিক পরিষদকে পাশ কাটিয়ে সরকার উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সরাসরি বরখেলাপ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। এখনো পূর্বের মতো উপর থেকে চাপিয়ে দেয়া উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রয়েছে।
● পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার পরিবর্তে এসব পরিষদগুলোকে অথর্ব অবস্থায় রাখা হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে ক্ষমতাসীন দলের শাখা অফিস ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করা হয়েছে। জনগণের প্রতি পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহের নেই কোন দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা। পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি নিয়োগে চলছে সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম। তা সত্ত্বেও সরকার এসব দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে কোন কার্যকর পদক্ষেপ তো গ্রহণ করেনি, উপরন্তু আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে চলেছে।
● পার্বত্য চুক্তিতে আঞ্চলিক পরিষদ কর্তৃক তিন পার্বত্য জেলার সাধারণ প্রশাসন, আইন শৃংখলা ও উন্নয়নের সমন্বয় সাধন ও তত্ত্বাবধানের বিধান থাকলেও তিন পার্বত্য জেলার ডেপুটি কমিশনারসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ এবং পুলিশ প্রশাসনের পুলিশ সুপার ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা চুক্তির এ বিধান লঙ্ঘন করে চলেছে। উল্লেখ্য যে, এসব কর্মকর্তারা প্রায় সকলেই পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসী নন। তাই তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অধিকাংশ ক্ষেত্রে চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী। ফলত: এ যাবৎ আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদকে পাশ কাটিয়ে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে লঙ্ঘন করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ সাধারণ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন ইত্যাদি কার্যাবলী চালিয়ে যাচ্ছে, যা সামগ্রিক পরিস্থিতিকে আরো অনিশ্চিত করে তুলেছে।
● পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত গোয়েন্দা বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ক্ষমতাসীন দলের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী ভূমিকা পালন করে চলেছে। জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ের ন্যায্য আন্দোলনকে সন্ত্রাস হিসেবে চিত্রিত করে অপপ্রচার, দমন-পীড়ন, নির্যাতন অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। অপারেশন উত্তরণের বদৌলতে পার্বত্য অঞ্চলের প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা, উন্নয়নসহ সকল ক্ষেত্রে উপনিবেশিক কায়দায় হস্তক্ষেপ করে চলেছে। বলাবাহুল্য চাকরিতে কর্মরত অবস্থায় সেনাবাহিনীর অনেক কম্যান্ডার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সভা-সমিতিতে বক্তব্য প্রদান ও পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করে থাকেন। সর্বোপরি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কার্যক্রম সমর্থন না করতে ও কার্যক্রমে জড়িত না হতে জুম্ম জনগণকে হুমকি দিয়ে থাকেন। ফলশ্রুতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের জীবনধারা নিরাপত্তাহীন হয়ে উঠেছে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক ও অত্যন্ত নাজুক। পার্বত্যবাসীরা বিশেষত জুম্ম জনগণ নিরাপত্তাহীন ও অনিশ্চিত এক চরম বাস্তবতার মুখোমুখী হয়ে কঠিন জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছে। জুম্ম জনগণ এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে আজ সংকল্পবদ্ধ। বস্তুত পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান সমস্যা রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই। দীর্ঘ আড়াই দশক ধরে রক্ত-পিচ্ছিল সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জুম্ম জনগণ তথা পার্বত্যবাসীর অধিকার সনদ এই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অর্জিত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে গড়িমসি ও কালক্ষেপণের মধ্য দিয়ে দেশের শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে আবারও জটিলতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নস্যাৎ করার যে কোন ষড়যন্ত্র এবং জুম্ম জনগণের এই চুক্তি বাস্তবায়নের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ফ্যাসীবাদী কায়দায় দমন-পীড়নের যে কোন চক্রান্ত দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কখনোই শুভ ফল বয়ে আনতে পারে না। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় জুম্ম জনগণের পিঠ আজ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাদের আর পেছনে যাওয়ার কোন রাস্তা নেই। ফলশ্রুতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের যে কোন অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির জন্য সরকারই দায়ী থাকবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের স্বার্থে চুক্তি-পরিপন্থী ও জুম্ম স্বার্থ বিরোধী যে কোন ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করতে জুম্ম জনগণ আজ দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আবারো দ্ব্যর্থহীন ভাষায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ঘোষণা করছে-
• ২০১৬ সালে ঘোষিত দশদফা কর্মসূচির ভিত্তিতে অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাওয়া।
• পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী সকল কার্যক্রম প্রতিরোধ করা।
• পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলন সংগঠিত করা।
পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য দেশের গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।
আপনাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
(জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা)
সভাপতি
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি।





চট্টগ্রাম বিভাগ এর আরও খবর

মিরসরাই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন নুরুল আমিন মিরসরাই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন নুরুল আমিন
চিৎমরম বৌদ্ধবিহারে  কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পন্ন চিৎমরম বৌদ্ধবিহারে কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পন্ন
বেণুবন উওমানন্দ ধর্মবন বৌদ্ধ বিহারে কঠিন চীবর দানোৎসব ও সংবর্ধনা বেণুবন উওমানন্দ ধর্মবন বৌদ্ধ বিহারে কঠিন চীবর দানোৎসব ও সংবর্ধনা
বনরূপা ব্যবসায়ী সমিতির নতুন কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ বনরূপা ব্যবসায়ী সমিতির নতুন কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ
কাপ্তাইয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শনে বিভাগীয় কমিশনার জিয়াউদ্দিন কাপ্তাইয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শনে বিভাগীয় কমিশনার জিয়াউদ্দিন
পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠনের ১৫ সদস্য বিশিষ্ট রাঙামাটি পৌরসভার ০৮ নং ওয়ার্ড কমিটি পূর্ণগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠনের ১৫ সদস্য বিশিষ্ট রাঙামাটি পৌরসভার ০৮ নং ওয়ার্ড কমিটি পূর্ণগঠন
রাজাভুবন বিদ্যালয় পরিদর্শনে হুমাম কাদের চৌধুরী রাজাভুবন বিদ্যালয় পরিদর্শনে হুমাম কাদের চৌধুরী
মিরসরাইয়ে পারিবারিক কলহের জেরে বড় ভাইয়ের হাতে ছোট ভাই খুন মিরসরাইয়ে পারিবারিক কলহের জেরে বড় ভাইয়ের হাতে ছোট ভাই খুন
বেতবুনিয়া সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু বেতবুনিয়া সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু
বৃহত্তর বনরূপা ব্যবসায়ি কল্যাণ সমবায় সমিতি এর শুভেচ্ছা বিনিময় বৃহত্তর বনরূপা ব্যবসায়ি কল্যাণ সমবায় সমিতি এর শুভেচ্ছা বিনিময়

আর্কাইভ