সোমবার ● ৬ মে ২০১৯
প্রথম পাতা » জাতীয় » নতুন সাজে সেজেছে রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য বিশ্বকবির পতিসর
নতুন সাজে সেজেছে রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য বিশ্বকবির পতিসর
আত্রাই প্রতিনিধি :: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৮তম জন্মবার্ষিকী ৮মে বুধবার ( ২৫ বৈশাখ) উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে নওগাঁর আত্রাইয়ে বিশ্বকবির পতিসরের কাচারি বাড়ি। বিশ্বকবির জন্মকে নতুন চিত্তে ভাবার জন্য ধুয়ে-মুছে প্রস্তুত করা হচ্ছে বিশ্বকবির আত্রাইয়ের পতিসরের কাছারি বাড়িকে।
সাজানো হচ্ছে অপরূপ বর্ণিল সাজে। প্রতি বছরের মতো এবারেও এখানে আসবেন সরকারের মন্ত্রী, এমপি, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ দেশবরেণ্য শিল্পী, সাহিত্যিক ও রবীন্দ্রভক্তরা। নাচ, গান আর কবির রচিত কবিতা আবৃত্তি করে উদযাপনের আয়োজন করা হয়েছে বিশ্বকবির জন্মোৎসব।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও কবিগুরুর নিজস্ব জমিদারি তার স্মৃতি বিজড়িত নওগাঁর পতিসর কাছারি বাড়ি প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয়েছে দিনব্যাপী নানা উৎসবের।
প্রতি বছরই পতিসরে নামে রবীন্দ্রভক্তের ঢল। পরিণত হয় মানুষের মহামিলন মেলায়। সরকারিভাবে একদিনের কর্মসূচি নিলেও এ মিলনমেলা চলে প্রায় পুড়ো সপ্তাহজুড়ে। দূর-দূরান্ত থেকে কবিভক্তরা ছুটে আসেন তাদের প্রিয় কবির পতিসর কাছারি বাড়ি প্রাঙ্গণে। একে অপরের সান্নিধ্যে এসে স্মৃতিচারণে লিপ্ত হন কবিভক্তরা।
কবিগুরুর ১৫৮তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এবার ব্যাপক প্রস্তুতি হাতে নেয়া হয়েছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য কবির নিজস্ব জমিদারি পতিসর যেন পর্যটনের অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। কাছারি বাড়িতেই কবিগুরুর ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। পতিসরে নাগর নদের পাড়কে মনমুগ্ধকর করে তোলা হয়েছে। কবিগুরুর নিজস্ব জমিদারি এলাকা কালিগ্রাম পরগনার সদর দফতর এই পতিসর। আর এই পতিসর নওগাঁর আত্রাই উপজেলার মনিয়ারি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত একটি গ্রাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ মাধুর্যঘেরা কবির স্মৃতিবিজড়িত পতিসর আজও সাহিত্যের অঙ্গণে সাড়ম্বরে বিরাজিত। কবির যখন ভরা যৌবন এবং কাব্য সৃষ্টির প্রকষ্ট সময়, তখন তিনি সময় কাটিয়েছেন এই পতিসরে।
নওগাঁ জেলা সদর থেকে ৩৬ কিলোমিটার ও আত্রাই উপজেলা সদর হয়ে ৫৫ কিলোমিটার আঁকাবাঁকা পাকা সড়ক চলে গেছে নিঝুম-নিস্তব্ধ-নিভৃত পল্লীতে, কবিগুরুর কাছারি বাড়ি জেলার আত্রাই উপজেলার মনিয়ারি ইউনিয়নের পতিসর গ্রামে। তিনি যে আমাদের প্রাণের কবি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। নওগাঁ এবং আত্রাই থেকে মাইক্রোবাস, বাস, সিএনজি, টেম্পু, চার্জার, ভটভটিসহ বিভিন্ন যানবাহন যোগে পতিসরে যাওয়া যায়।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন উপলক্ষে প্রতি বছরই সপ্তাহ খানেক জুড়ে চলে রবীন্দ্রমেলা। এ সময় স্থানীয় ও এলাকাবাসীর বাড়িতে ভিড় জমায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা কবি ভক্ত, আত্মীয়-স্বজন, অতিথিরা। গ্রামের মানুষ মেয়ে-জামাইকে নাইওরে আনে এই উৎসবে। ঘরে ঘরে পড়ে যায় পিঠা-পায়েসসহ উন্নত মানের খাবার তৈরির ধুম।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজরিত পতিসরে এবার কবির ১৫৭তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ইতোমধ্যে নওগাঁ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় এখানে সরকারিভাবে একদিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
পতিসরে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে, ২৫ বৈশাখ বুধবার সকাল ১০টায় রবীন্দ্র কাছারি বাড়ির দেবেন্দ্র মঞ্চে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, সকাল সাড়ে ১০টায় ‘একুশ শতকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রাসঙ্গতা’ শীর্ষক স্মারক আলোচনা অনুষ্ঠান, বিকেল ৩টায় রয়েছে, নাটক, আবৃত্তি, নাচ-গানসহ মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবেন নওগাঁসহ দেশের প্রথিতযশা শিল্পীরা।
জানা গেছে, ১৯৩৭ সালে ২৭ জুলাই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাজার হাজার প্রজাকে কাঁদিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে পতিসর তথা বাংলাদেশ থেকে শেষ বিদায় নিয়েছিলেন।
শেষ বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখার জন্য কবির ৭৬ বছর বয়সের একটি উন্মুক্ত ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে পতিসরে। স্থাপন করা হয়েছে রবীন্দ্র সংগ্রহশালা। এই কাছারি বাড়িতে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে কবির ব্যবহৃত বিভিন্ন আসবাবপত্র।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নওগাঁর আত্রাইয়ের এই পতিসরে এসে তার কাছারি বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া আঁকাবাঁকা নাগর নদকে নিয়ে লিখেছিলেন, ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে’।
এছাড়াও তার বিখ্যাত কবিতা তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, ‘দুই বিঘা জমি ও সন্ধ্যাসহ অসংখ্য সাহিত্যকর্ম রচনা করেছেন এই পতিসরের কাছারি বাড়িতে বসে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর তার পুরস্কারের অর্থ তিনি এই পরগনার প্রজাদের মাঝে বিলিয়ে দেয়ার জন্য ৭৫ হাজার টাকা তৎকালীন সময়ে এখানে স্থাপিত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠিয়েছিলেন।
এই প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকার প্রজাদের মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেয়ার লক্ষে কবি ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে পতিসরে এসে তার পুত্র রথীন্দ্রনাথের নামে কাগ্রিাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশন স্থাপন করেন এবং এই প্রতিষ্ঠানের নামে ২শ’ বিঘা জমি দান করেন।
এ ব্যাপারে আত্রাই থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: মোবারক হোসেন জানান, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন মহান ও উদার মনের মানুষ। এই পরগনাসহ দেশের জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে তিনি অন্তর দিয়ে দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ছানাউল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও আগামী ২৫ বৈশাখ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৮তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হবে।