

সোমবার ● ২৮ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » হিজড়াদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট সাধারণ মানুষ
হিজড়াদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট সাধারণ মানুষ
আকতার হোসেন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি :: হিজড়াদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট মিরসরাই ও জোরারগঞ্জ থানাধীন এলাকার সাধারণ মানুষ।
গরীব নাকি সামর্থ্যবান, অসহায় নাকি অপারগ, কোনকিছুই তোয়াক্কা করেনা, কোনপ্রকার ওজর-আপত্তি, অনুরোধ (রিকুয়েষ্ট) গ্রহণ করেনা বরং তারা তাদের ডিমান্ড, চাহিদা বা দাবীতে অটল। বিয়ে, জন্মদিন, আকিকা, মুসলমানি বা অন্য যেকোন সামাজিক অনুষ্ঠানে দলবল নিয়ে এসে হাজির। কখনো হোটেল, রেস্টুরেন্ট, বাসাবাড়ি বা কমিউনিটি সেন্টারে।
এ যেন মগের মুল্লুক। এমনভাবে দাবী করে যেন এটা তাদের প্রাপ্য, ন্যায্য অধিকার। তাদের কথাবার্তা আর বাক-ভঙ্গিতে মনে হয় আগেই তারা টাকা জমা দিয়ে রেখেছে। সুন্দর করে বলে, বিশেষ অনুরোধ, অনুনয়-বিনয় করে ৫০০ টাকা দিলেও নিবেনা। অনেক বাকবিতন্ডার পরে মান-সম্মানের ভয়ে ২০০০, ২৫০০, ৩০০০, ৫০০০ টাকা দিয়ে কোনভাবে দায় মুক্তি। অনেক ক্ষেত্রে ২ হাজার, ৫ হাজার, ১০ হাজার কিংবা তার-ও বেশি চাঁদা দাবি করে এবং দিতে হয়, না হয় জামাইকে বা নতুন বউকে নাজেহাল করার হুমকি দেয়। অনেক সময় বাধ্য হয়ে পুলিশ প্রশাসনের দারস্থ হয়ে থানায় কল দিতে হয়। তাতেও কোন সুরাহা হয়না বরং হুমকি ও চাঁদা দেওয়ার বিষয়ে আল্টিমেটাম দিয়ে যায়।
এ-ই সব বিষয় নিয়ে বরপক্ষ ও কনে পক্ষ এবং ভুক্তভোগীদের মধ্যে টেনশন ও পেরেশানি কাজ করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) দুপুরে এমনই একটি ঘটনা ঘটছে মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থানাধীন হিঙ্গুলী ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের উত্তর ইসলামপুর গ্রামের মোস্তফা মিস্ত্রির বাড়িতে।
ভুক্তভোগী ও ওমান প্রবাসী ফোরকান হোসেন জানান, ২৭ জুলাই রবিবার আমার বিবাহের দিন ধার্য ছিলো। শনিবার দুপুরে হিজড়াদের একটি টিম আমার বাড়িতে এসে চাঁদা দাবি করে এবং উসৃঙ্খল আচরণ করে। তখন জোরারগঞ্জ থানায় মুঠোফোনে বিষয়টি অবগত করার পরে তাঁরা ক্ষিপ্ত হয়ে হুমকি দিয়ে চলে যায় আর বলে যায় নতুন বউ কিভাবে ঘরে উঠাও দেখে নিবো। এরপর বিয়ের দিন আবারও আরও বেশি করে দলবল নিয়ে এসে বেশি চাঁদা দাবি করে। মানসম্মানের ভয়ে ১৮০০ টাকা দিয়ে কোনভাবে পার পাই। তবে এভাবেই চলতে দেয়া যায় না। এটার একটা বিহিত হওয়া জরুরী।
সালমান বিন বাশার নামে একজন জানান, তাঁর ভাইয়ের বিয়েতে ৫০০০ টাকা দিতে হয়েছে, মোঃ দাউদ নামে আরেকজন জানান তাদের একটা বিয়েতে ৫০০০ টাকা নিয়ে গেছে।
শুধু ফোরকান, বাশার আর দাউদ নয় হিজড়াদের চাঁদাবাজির ঘটনায় অভিযোগ অহরহ।
বকশিস, সম্মানি বা সেলামী নামের এ চাঁদাবাজি থেকে মুক্তি চায় জোরারগঞ্জ ও মিরসরাইবাসী।
এছাড়াও এইসব হিজড়া’রা শুধু চাঁদাবাজি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয় মাদকের রমরমা বাণিজ্যের সাথেও তাঁরা জড়িত। সম্প্রতি এমনই একটি ঘটনা ঘটছে মিরসরাইয়ে। গত ১৩ জুলাই বিপুল পরিমাণ ইয়াবা (সাড়ে ১১ হাজার পিস ইয়াবা) সহ আটক হয়েছে ৬ জন হিজড়া।
হিজড়াদের চাঁদাবাজি’র বিষয়ে জানতে চাইলে জোরারগঞ্জ থানার ওসি আবদুল হালিম বলেন, চাঁদাবাজি’র বিষয়ে কোন ছাড় নেই, কোথাও হিজড়াদের চাঁদাবাজির ঘটনায় যদি কেউ অভিযোগ দায়ের করে সেই প্রেক্ষিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং মামলা দিয়ে তাদেরকে কোর্টে চালান করে দেওয়া হবে। এছাড়াও চাঁদাবাজি করতে গেলে নিজেরা আইন হাতে তুলে না নিয়ে থানায় অবগত করার পরামর্শ দেন।