শুক্রবার ● ১২ জানুয়ারী ২০১৮
প্রথম পাতা » কৃষি » নওগাঁয় মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌ-চাষীরা : স্বাবলম্বি হচ্ছে বেকার যুবকরা
নওগাঁয় মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌ-চাষীরা : স্বাবলম্বি হচ্ছে বেকার যুবকরা
নওগাঁ প্রতিনিধি :: (২৯ পৌষ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.৪৬মি.) দিগন্ত জুড়ে ফসলের মাঠ। যতদুর চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ রঙে মাখামাখি। এযেন সৃষ্টিকর্তার পাঠানো হলুদ গাঁদার খামে মোড়ানো একখন্ড চিঠি। সরিষা ফুলের হলুদ বরণে সেজেছে নওগাঁর মান্দা উপজেলার ফসলের মাঠ।
সরিষার ক্ষেতের পাশে মৌ-চাষীদের মধু সংগ্রহের বাক্স স্থাপন করে ভ্রাম্যমান কৃত্রিম পদ্ধতিতে মধু সংগ্রহ শুরু করেছেন বেকার শিক্ষিত যুবকরা। সচেতনতা বৃদ্ধি, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং ঋণের সুবিধা দিলে আগামীতে বাণিজ্যিক ভাবে মধু সংগ্রহ করা সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা, এ বছর জেলায় ২৭ হাজার হেক্টর জমিতে উন্নত জাতের সরিষার আবাদ করা হয়েছে। জেলার মান্দা উপজেলার সরিষার মাঠে প্রায় ২ হাজার মৌবাক্স স্থাপন করা হয়েছে। গত বছর জেলায় ২৩ হাজার কেজি মধু আহরণ করা হয়েছিল। এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত প্রায় ২হাজার কেজি মধু আহরণ করা হয়েছে।
জেলার মান্দা উপজেলার ভারশোঁ, বাঁকাপুর, কৈইকুড়িসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ফসলের মাঠে সরিষা ফুল থেকে কৃত্রিম পদ্ধতিতে মধু সংগ্রহ করছেন মৌ-চাষিরা। তবে স্থানীয় ভাবে মধু সংগ্রহ না হলেও রাজশাহী জেলার মোহনপুর উপজেলার দর্শনপাড়া থেকে এসে মধু সংগ্রহ করছেন দুই মৌ-চাষী। সরিষা ক্ষেত এলাকায় অভিনব পন্থায় ইউরোপিয়ান মেলিফেরা জাতের মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায় তাদের। ক্ষেতের পাশে ৬০ টি মধুবাক্স স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি বক্সে ৮টি করে ফ্রেম সাজানো আছে। সপ্তাহ পর পর ফ্রেম থেকে সংগ্রহ করা হয় মধু। গত ২০দিনে প্রায় ১০ মণ মধু সংগ্রহ হয়েছে। সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি বসায় ফসলের ক্ষতি হচ্ছে এমন ভ্রান্ত ধারনা আছে কৃষকদের মাঝে। ফলে অনেক স্থানে মৌ-চাষীদের বসতে দেওয়া হয়না। এছাড়া সরিষা ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করা হয়। ফুলে মৌমাছি বসায় মৌমাছি মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
উপজেলার দোডাঙ্গী গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম এর প্রতিনিধিকে বলেন, এ বছর তিন বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। বিগত বছরগুলোতে সরিষা ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করতে হতো। গত বছর থেকে আমাদের মাঠে মৌ-চাষীরা ফসলের ক্ষেতের পাশে মৌবাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ শুরু করছে। ক্ষেতে মৌমাছির বিচরণ হওয়ায় পরাগায়ন হয়। কীটনাশক স্প্রে করতে হয়নি। রোগবালাই তেমন নাই। ফলে সরিষার আবাদও ভাল হয়েছিল। এবছর ফলন ভাল হবে বলে আশা করছেন এই কৃষক।
গত এক মাস আগে উপজেলার কৈইকুড়ি গ্রামের মাঠে মৌবাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করছেন মৌচাষী আরিফ হাসান। রাজশাহী নিউ ডিগ্রী কলেজে অর্নাস শেষ বর্ষে পড়াশুনা করছেন তিনি। ২০১৩ সালে মৌ-চাষের উপর বিসিক থেকে এক মাসের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর ৭০০ টাকা করে ৩৫টি ফ্রেম কিনে আনুষঙ্গিক প্রায় ৩৫ হাজার টাকা খরচ করে মৌচাষ শুরু করেন। খামারের নাম দিয়েছেন ‘বরেন্দ্র মৌ খামার’। ২০১৬ সালে কয়েকটি জেলায় প্রায় ৫২ মণ মধু সংগ্রহ করে প্রায় ৪ লাখ টাকার মতো বিক্রি করেছিলেন। আর খরচ হয়েছিল প্রায় ৮০-৯০হাজার টাকা। এছাড়া মৌমাছি বিক্রি করেছিলেন ৭০-৮০ হাজার টাকা। এ বছর প্রায় ৫ লাখ টাকার মতো মধু বিক্রি করবেন বলে জানান তিনি।
মৌ-চাষী রুস্তম আলী বলেন, রাজশাহী, দিনাজপুর, পাবনা, নাটোর ও নওগাঁ জেলায় প্রায় ৭মাস মধু সংগ্রহ করেন। বাকী সময় মৌ-মাছিকে রয়েল জেলী খাওয়াইয়ে পুষতে হয়। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ হয়। মুলত সরিষা, কালাই জিরা ও লিচু ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করেন। সরিষা ও লিচুর মধু পাইকারি ২৫০ টাকা ও খুরচা ৩০০ টাকা কেজি এবং কালাই জিরা মধু পাইকারি ৪০০ টাকা ও খুরচা ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেন। বেঙ্গল কোম্পানি সহ বিভিন্ন প্রসাধনী তৈরী কোম্পানির কাছে পাইকারী করেন। আমাদের মতো ক্ষুদ্র যারা খামারি আছেন তাদের উন্নত প্রশিক্ষন এবং স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হলে আগামীতে বাণিজ্যিক ভাবে মধু সংগ্রহ সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
মান্দা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম এর প্রতিনিধিকে বলেন, কৃষকদের মধ্যে একটি ভুল ধারনা আছে এবং সচেতনতার অভাব। সেটা হচ্ছে মৌমাছি ফুলে বসলে হয়তো ফসলের ক্ষতি হয়। মৌ-চাষীদের কৃষকরা ক্ষেতের পাশে মৌবাক্স স্থাপনে নিষেধ করেন। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। মৌমাছি ফুল থেকে রেণু সংগ্রহ করে। এতে ফুলের পরাগায়ন হয়। ফসলের জন্য এটি খুবই উপকারি এবং ফলন বৃদ্ধি করে। আগামীতে নওগাঁ জেলাকে মধু উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে পরিচিত পাবে।
তিনি আরো বলেন, স্থানীয় ভাবে যারা বেকার এবং যুব সমাজ আছে তারা এখনো মৌচাষে উদ্বুদ্ধ হতে পারেনি। উদ্যোগক্তা তৈরী হলে আমরা কৃষি বিভাগের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারব। বিশেষ করে বেদে জাতী (ভ্রাম্যমান বসবাস) যদি প্রশিক্ষন নিতে চায় তাদেরও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। একটি প্রকল্প আছে প্রশিক্ষণের জন্য এবং স্থায়ী ঠিকানা হলে স্বল্পকালীন ঋণের ব্যবস্থা করা হবে।





আত্রাইয়ে পাট চাষে দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা
কাউখালীতে কৃষি অধিদপ্তরের পার্টনার ফিল্ড স্কুল কংগ্রেস অনুষ্ঠিত
কাউখালীতে জাতীয় ফল মেলা অনুষ্ঠিত
ঝালকাঠিতে আম বাগান হয়ে উঠেছে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত
বাগেরহাটে লবণাক্ত পতিত জমিতে মাঠজুড়ে সূর্যমূখীর হাঁসি ঝিলিক
আত্রাইয়ে বেড়েছে পেঁয়াজের বীজ চাষ
শরীরের জন্য পুষ্টি, তাপ ও শক্তি যোগাতে পুষ্টিকর খাবারে কোনো বিকল্প নেই : মনিরুজ্জামান খান
ফটিকছড়িতে বোরো চাষে নারী শ্রমিকরা
রাউজানে সরিষা ক্ষেতে হলুদের হাতছানি
সুরাইয়া বিলকিসের বিষমুক্ত ছাদ বাগান