শুক্রবার ● ২২ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » বেদে সম্প্রদায়ের বসবাসের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে ৫৯টি আধা পাকা বাড়ি
বেদে সম্প্রদায়ের বসবাসের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে ৫৯টি আধা পাকা বাড়ি
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদহে কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জগন্নাথপুর গ্রামের মাজদিয়া বাঁওড়ের ধারে নির্মল পরিবেশে বেদে সম্প্রদায়ের বসবাসের জন্য ৫৯টি আধা পাকা বাড়ি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আবাসনের বিশাল নির্মাণযজ্ঞ শুরু করেছে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া এই উপহারের বুঝিয়ে দেওয়া হবে। ৫৯ পরিবারের প্রায় ৩০০ লোকের বাসস্থানের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নির্মাণ করা হবে মসজিদ ও শিশুদের জন্য খেলার মাঠ। দেশের ইতিহাসে বেদে সম্প্রদায়ের জন্য এটাই সবচেয়ে বড় পল্লি হতে যাচ্ছে। সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে পল্লিটি নির্মাণ করা হচ্ছে জলাধারের পাশেই। ঘরের চারপাশে কিছু খোলা জায়গা রাখা হচ্ছে। এসব খোলা স্থানে তারা যাতে গবাদি পশু পালন এবং গাছ লাগানোর কাজে ব্যবহার করবে। আগামী জুনের মধ্যেই এ বাড়িগুলো বেদে সম্প্রদায়ের লোকজনের কাছে হস্তান্তর করতে পারবে বলে মনে করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের অধীন গৃহহীন ও ভূমিহীন বেদে সম্প্রদায়ের জন্য নির্মিত প্রত্যেক পরিবারের জন্য দুই শতক জমির উপর দুইটি রুম, রান্না ঘর ও একটি টয়লেট প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রতি পরিবারের ঘর তৈরিতে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা। এখন ঘর পাওয়ার আগাম খবরে খুশিতে আত্মহারা বেদে পরিবারগুলো। নতুন ঘরে কীভাবে থাকবেন, কীভাবে ঘর সাজাবেন এমন স্বপ্নে সময় পার করছেন তারা। প্রকল্প কাজ পরিদর্শনে গিয়ে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা আবু তালেব ও রুহুল আমিনের সাথে। তারা জানান, যে এলাকায় বেদে সম্প্রদায়ের জন্য গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে সেটা একেবারেই নিরিবিলি পরিবেশ। ওই এলকায় স্থানীয় দুই একটি পরিবারের বসবাস থাকলেও সেখানে রাস্তা ছিল না। এখন সেখানে ঘর নির্মাণের আগেই রাস্তা করা হচ্ছে। এখানে তাদের বসবাস শুরু হলে ব্যবসা বানিজ্য ও জীবন মানের উন্নয়ন হবে মনে করেন তারা। ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নের বাদেডিহি গ্রামের বেদে পল্লীতে বাঁশের কঞ্চি আর পলিথিন দিয়ে তৈরি তাবুতে বসবাস করছেন ৩১ বেদে পরিবার। এই পল্লীতে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে নেই স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট বা গোসলখানা। তাবুর ঘরগুলো এতটাই ছোট যে, হাঁটু গেড়ে তাবুর ভেতরে ঢুকতে হয়। ভেতরে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর জায়গা নেই। এখানে এমন পরিবারও রয়েছে, স্বামীকে নিয়ে বাবা-মা, ভাই-বোনদের সঙ্গে ছোট্ট এই খুপড়ি ঘরে বসবাস করে আসছেন পরিবারের বিবাহিত মেয়েরা। বিবাহিত ছেলেও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ছোট্ট তাবুতে বাবা-মার সঙ্গে থাকেন। বেদে পল্লি যুব সমাজের সরদার মনিরুল ইসলাম জানান, আমাদের বেদে সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেক পরিবার আছে ভূমিহীন। যে সব পরিবার তাদের সদস্যদের নিয়ে বনে বনে ঘুরে বেড়াই। সাপের খেলা, ম্যাজিক আর ভিক্ষার উপার্জনে যাদের সংসার চলে। বাঁশের ফালি, কঞ্চি আর পলিথিনের তাবুই তাদের ভরসা। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এসব পরিবারের কষ্টের সীমা থাকে না। এরকম পরিবারের জন্য সরকার পাকা ঘর দিচ্ছে। তালিকা করে নিয়ে গেছে, এখন এসব পরিবার স্থায়ী মাথা গুজার ঠাই পাবে। বেদে পল্লির একজন ফুলমতি। দুই ছেলে, দুই মেয়ে আর স্বামীকে নিয়ে ৬ জনের সংসার। বাবা মা দু’জনই সাপ ও বানরের খেলা দেখিয়ে যা পায় তা দিয়ে সংসার চলে। পলিথিনের ছোট্ট একটি তাবুতে তাদের বসবাস। এখন নিজেদের জমি আর পাকা ঘর পাওয়ার সংবাদে ঈদের আনন্দ চলছে। তারা স্থায়ী নিরাপদ এক বাসস্থানের স্বপ্নে বিভোর হয়ে অপেক্ষা করছে। এদেরই আরেকজন জুবাইদা আক্তার। কথা হয় তার সাথে। তিনি জানান, আমার দুই সন্তান আর স্বামীকে নিয়ে ভাসমান সংসার। ছোট্ট এই খুপড়ি ঘরেই জীবন। বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি থাকেন পাশেই। আর তাবুর জায়গা ছোট হওয়ায় রাতে একজনকে থাকতে হয় তাবুর বাইরে। প্রধানমন্ত্রী নাকি আমাদের ঘর দিবে, কখনো ভাবিনি নিজের একটা ঘর হবে। প্রধানমন্ত্রীর উপহার আমাদের জীবনের সবথেকে বড় উপহার বলে জানান জুবাইদা। বেদে পল্লির আরেক বাসিন্দা আওলাদ হোসেন। স্ত্রী কহিনুর ও এক ছেলে রাহুলকে নিয়ে সংসার। অন্যেদের মতো সাপ ধরেন, সাপ ও বানর খেলা দেখান। তার স্ত্রী গ্রামে গিয়ে সিঙ্গা দেন ও দাঁতের পোকা তোলেন। । যা আয় হয়, তাতেই সংসার চলে না। ঘর করার স্বপ্ন দেখিনি কখনও। কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন তারও নাম, ঠিকানাসহ যাবতীয় কাগজপত্র নিয়েছে। নির্মাণ কাজ শেষ হলে তিনিও ঘর পাবেন, এই আনন্দে আত্মহারা আওলাদ ও তার পরিবার। কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ-হেল আল মাসুম জানান, কালীগঞ্জ পৌর এলাকার কাশিপুর ও বারবাজার ইউনিয়নের বাদেডিহি গ্রামের ৫৯ বেদে পরিবার রয়েছে, যাদের জমি ও ঘর কোনটাই না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করে আসছে। তাই আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে সারাদেশের গৃহহীন ও আশ্রয়হীন পরিবারের জন্য নির্মিত ঘরের মতো কালীগঞ্জেও ২ একর খাস জমিতে তাদের জন্য ঘরগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া জেরিন বলেন, বেদে সম্প্রদায় কালীগঞ্জ উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছে। মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি একটি পরিবারও গৃহহীন থাকবে না। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা প্রশাসন কালীগঞ্জ বেদে সম্প্রদায়ের ৫৯ পরিবারকে চিহ্নিত করেছে। জলাধারের সঙ্গে তাদের যে জীবনযাপন ইতিহাস-ঐতিহ্য আছে তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি পরিবেশ আমরা নির্ধারণ করেছি। স্থান নির্বাচনে বেদে সম্প্রদায়ের মানুষরা আমাদের সহযোগীতা করেছে। তাদের পছন্দে জায়গা নির্ধারন করা হয়েছে। এখানে প্রায় ২ একর জমি অবৈধ দখলদারদের কাছে ছিল। আমরা দখলমুক্ত করেছি। এখন সেখানে বাড়ি নির্মানের কাজ চলছে। এখানে পুনর্বাসন সম্পন্ন হলে তাদের নতুন প্রজন্ম শিক্ষা স্বাস্থ্যের পাশাপাশি নাগরিক সুবিধা গ্রহণ করে একটি উন্নত প্রজন্ম পাবে বলে মনে করেন এই নারী ইউএনও।





ঝিনাইদহে পিকাপের ধাক্কায় নসিমন ড্রাইভার নিহত
কুষ্টিয়া গণপূর্ত অফিসেই ১৮ বছর’ আ’লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত অনুপ কুমার সাহা
কুষ্টিয়া সিভিল সার্জনে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে দুদক
ঝিনাইদহে দীর্ঘ ২৩ বছর পর পৈত্রিক জমি ফিরে পেলেন সাবেক প্রকৌশলী
চুয়াডাঙ্গার শিক্ষা প্রকৌশলী কমিশন বাণিজ্যে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়
কুষ্টিয়ায় হাসপাতালের পুকুর থেকে যুবতীর লাশ উদ্ধার
কুষ্টিয়ায় বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত
কুষ্টিয়া চেম্বারের ‘এ’ গ্রুপের পরিচালক পদে নির্বাচন সম্পন্ন
জাকির এর উদ্যোগে কুষ্টিয়া শহর নতুন রূপে সেজেছে
কুষ্টিয়ার আদালতে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে পালাল নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ