

রবিবার ● ২২ জুন ২০২৫
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » আব্দুল্লাহপুর ইউপি স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রসূতি সেবায় দৃষ্টান্ত রাখছে
আব্দুল্লাহপুর ইউপি স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রসূতি সেবায় দৃষ্টান্ত রাখছে
মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম (চট্টগ্রাম) ফটিকছড়ি প্রতিনিধি :: চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির আবদুল্লাহপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র প্রসুতি সেবায় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠছে।
যেটি এখন শুধু স্বাস্থ্যকেন্দ্র নয়, প্রসূতিদের কাছে নিরাপদ প্রসবের এক অনন্য ঠিকানা।
একসময় অযত্নে পড়ে থাকত ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। নামমাত্র সেবা দেওয়া হতো এখানে। অন্য রোগীদের মতো প্রসূতিরাও সব সময় ছুটে যেতেন উপজেলা কিংবা শহরের দিকে। এখন বদলে গেছে এই কেন্দ্রের সেবা কার্যক্রম। প্রসূতি সেবাদানে কেন্দ্রটি এখন অনন্য এক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।
ইতিমধ্যে এটির সুনাম ছড়িয়েছে পুরো ইউনিয়নজুড়ে। এখানে ২৪ ঘণ্টা প্রসূতিরা আসেন নিরাপদে সন্তান প্রসবের জন্য। বিনা খরচে প্রসব শেষে হাসিমুখে ফেরেন বাড়িতে।
সন্তান সম্ভাবা স্ত্রীর প্রসব পরবর্তী খরচের কথা চিন্তা করে ১০ হাজার টাকা জমান পার্শ্ববর্তী দিনমজুর আমীর হোসেন। সব খরচ মিলিয়ে হাজার খানেকে সব মিটে যাওয়ায় বেজায় খুশি তিনি। স্থানীয়দের পরামর্শে স্ত্রীকে ওই কেন্দ্রে ভর্তি করিয়েছিলেন। তিনি জানালেন, ‘নিজের সন্তান এখানে জন্ম নেয়। এতে আমি খুশি। আমি আবিভূত।’
শুধু আবদুল্লাহপুরের প্রসূতিরা নন, আশপাশের গ্রাম ও উপজেলার প্রসূতিরাও আসেন এখানে। ইতিমধ্যে গত কয়েকবছর ধরে উপজেলায় মডেলের স্বীকৃতিও পেয়েছে কেন্দ্রটি। কেন্দ্রটিতে গত মাসে ১২ জন নরমাল শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। এএনসি ১১ ও পিএনসি সেবা নিয়েছেন ৭ জন। ২.৩ কিলোমিটার আয়তনের এই ইউনিয়নটিতে লোকসংখা ৬ হাজার ৮১৩ জন।
কীভাবে হলো এমন চিত্র। দীর্ঘ ১১ বছর ধরে সেবা দেওয়া সেই মানুষটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) ইন্দিরা বড়ুয়া। যার ছোঁয়া পেয়ে প্রসূতিরা হয়ে যান সুস্থ। পান দারুণ পরিচর্যার ছোঁয়া।
উপজেলা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে আবদুল্লাহপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র। বাইরে ছিমছাম পরিবেশ। ভেতরে ঢুকতেই মন জুড়ানো দৃশ্য। প্রসূতি মায়েদের ডেলিভারি কক্ষটি দারুণ। প্রসূতিদের কাউন্সেলিং-এর কক্ষটিও বেশ পরিপাটি।
ঘুরে ঘুরে দেখা হয়, সব কিছুই যেন ঝকঝকে। এখানে ডপলার মেশিন, পালস অক্সিমিটার, অক্সিটক্সি ইনজেকশন, প্রেশার যন্ত্র, ওজন যন্ত্র, নেবুলাইজার, বেবি টেবিল থেকে শুরু করে মায়েদের প্রসব-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সব সুবিধা রয়েছে।
পরিবার কল্যাণ কার্যালয় সূত্র মতে, উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের সব ক’টিতেই প্রসূতি সেবার সব সুবিধা রয়েছে। সম্প্রতি সেবার মান বাড়ানো হয়েছে। কেন্দ্রেটিতে একজন মেডিকেল অফিসার, সাকমো মো. আবুল বাশার, এফপিআই উৎপল বড়ুয়া, মাঠকর্মী নিপা বড়ুয়া, সুচিত্রা বড়ুয়া, লাকী রানী আচার্য্য ও আয়া কর্মরত। খালি ফার্মাসিস্ট ও নৈশ প্রহরীর পদ।
কথা হয় সেই পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ইন্দিরা বড়ুয়ার সাথে। তিনি বলেন, ‘প্রতি মাসে ১০-১৫ শিশুর জন্ম হয় এখানে। ফলে প্রসূতি নারীদের জন্য এখন নির্ভরতার জায়গা হয়ে উঠেছে কেন্দ্রটি।’ ইন্দিরা বলেন, ‘চেষ্টা করি গর্ভবতীকে এখানে সেবা দিতে। কিন্তু অনেকে সদরের ক্লিনিকগুলোর প্রতি আস্থা দেখান। তিনি দাবী করেন, ‘গেল ঈদুল আজহায় আমরা সর্বোচ্চ দিয়েছি। মানুষ ছুটিতে আমোদপূর্তি করলেও দায়িত্বের খাতিরে আমরা সেবাটাকে ব্রত হিসেবে দেখেছি। নবজাতকদের আমাদের সন্তান মনে করেছি। এটাই আমাদের বড় প্রাপ্তি।’
ইন্দিরা জানান, ‘কেন্দ্রে আমার থাকার ব্যবস্থা আছে। যে কারণে দিন-রাত সে চিন্তা করতে হয় না। তিনি মনে করেন এখানে যদি একজন নিয়মিত চিকিৎসক দেওয়া হয়, ভালো হবে। প্রসূতিরা সেবার পাশাপাশি অন্যান্য সেবাও বাড়বে।’
আবদুল্লাহপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. অহিদুল আলম বলেন, ‘চেষ্টা করি সরকারি এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেন সেবাটা ঠিক হয় সেটা বোঝানোর। ইন্দিরাও যথেষ্ট সেবা দেন। ফলে দিনে দিনে কেন্দ্রটির সুনাম ছড়িয়ে এখন সর্বত্র।’
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কাউসার আকতার পপি বলেন, ‘পুরো উপজেলায় মডেল কেন্দ্র এটি। প্রতিনিয়তই এখানে সেবাগ্রহীতা প্রসূতির সংখ্যা বাড়ছে। মান বাড়িয়ে সার্বিক তত্ববধানে সেখানে মানুষ ভালো সেবা পাচ্ছেন।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘দেশে স্বাস্থ্যসেবার মান অনেক বেড়েছে। বেড়েছে মানুষের চাহিদাও। প্রসূতি সেবাদানে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি মডেল হিসেবে স্বীকৃত। আশা করি এ ধারা অব্যাহত থাকবে।’
ফটিকছড়িতে বাসচাপায় মোটরবাইক আরোহী নিহত
ফটিকছড়ি :: চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বাসচাপায় মোহাম্মদ রাজু (২৫) নামে এক মোটরবাইক আরোহী নিহত হয়েছেন।
রবিবার (২২ জুন) দুপুরে ফটিকছড়ি উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নের হেয়াকো কড়ই বাগান এলাকার ঢাকা-খাগড়াছড়ি মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত রাজু দাঁতমারা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাংলাপাড়া এলাকার সাইদুল হক প্রকাশ লাকি’র পুত্র।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বারইয়ারহাট থেকে মোটরবাইকে করে নিজ বাড়ি হেঁয়াকো ফিরছিলেন রাজু। পথে কড়ই বাগান এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা খাগড়াছড়িগামী ইকোনো বাস সার্ভিসের একটি বাস তাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. কামাল উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।