

শনিবার ● ২৮ জুন ২০২৫
প্রথম পাতা » ময়মনসিংহ » ঈশ্বরগঞ্জে হামলায় আহত আব্দুল্লাহ ফকিরের মৃত্যু
ঈশ্বরগঞ্জে হামলায় আহত আব্দুল্লাহ ফকিরের মৃত্যু
উবায়দুল্লাহ রুমি, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :: ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ সোহাগী ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী সম্মেলন থেকে ফেরার পথে বিএনপি ভক্ত আব্দুল্লাহ ফকির মারধরের শিকার হয়ে ১মাস ৪দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে। ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার দিবাগত রাত ১০টায় জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানের আব্দুল্লাহ’র লাশ দাফন করা হয়।
জানা যায়, গত ২৪ মে অনুষ্ঠিত উপজেলার সোহাগী ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী সম্মেলনে যান হাটুলিয়া গ্রামের বিএনপি ভক্ত দিনমজুর আব্দুল্লাহ ফকির (৬৫)। প্রতিবেশীরা জানান, তিনি ছিলেন একজন দিনমজুর-সারাদিন খেটে পেট চালাতেন, আর বুকে লালন করতেন বিএনপির আদর্শ। আস্থাশীল একজন নিঃস্ব ভক্ত ছিলেন বিএনপির।
বিএনপির কর্মী সম্মেলনে অংশ নিতে গিয়েছিলেন নিজের কষ্টের টাকা জমিয়ে, পায়ের উপর ভরসা করে। তিনি কোনো বড় নেতা ছিলেন না, ছিল না কোনো পদ কিংবা প্রভাব—ছিল শুধু দলের প্রতি ভালোবাসা। সেই টানেই সে দিন তিনি বিএনপির কর্মী সম্মেলনে যোগ দেন। কিন্তু ফেরার পথটা আর সহজ হলো না তাঁর। নির্মম হামলার শিকার হয়ে রাস্তার পাশে লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা মুর্মুষ অবস্থায় উদ্ধার করে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। এসময় আব্দুল্লাহ ফকিরের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পরে দীর্ঘ ১মাস ৪দিন পর চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার মৃত্যু বরণ করেন। ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার দিবাগত রাত ১০টায় জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানের আব্দুল্লাহ’র লাশ দাফন করা হয়। আব্দুল্লাহ’র জানাযায় ছিল মানুষের ঢল। জানাযায় আসা মানুষের মুখে ছিলো অর্থাভাবে আব্দুল্লাহকে উন্নত চিকিৎসা না করাতে পারার আক্ষেপ।
প্রতিবেশী মোস্তফা জামান জানাযার পূর্বে উপস্থিত মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্যে বলেন, আব্দুল্লাহ ছিল একজন বিএনপির একনিষ্ট কর্মী। সোহাগী ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী সম্মেলন থেকে বাড়ি ফেরার পথে হামলার শিকার হয়ে দীর্ঘ ১মাসের উপর চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো আব্দুল্লাহকে স্থানীয় এলাকাবাসী আর্থিক ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করলেও দলীয় কোন সহযোগিতা পাননি। এমনকি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও পুলিশের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। পুলিশ আসামি ধরতে গড়িমসি করায় স্থানীয় এলাকাবাসী মিলে আসামি ধরে পুলিশে সোপর্দ করতে হয়েছে।
আব্দুল্লাহ ফকিরের একমাত্র ছেলে লালন ফকির বলেন, আব্বাকে যেদিন মারধর করা হয় ওইদিন ছিল সোহাগি ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী সম্মেলন। সেদিন তিনি সোহাগী ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক প্রার্থী আনোয়ারুল কবীর হীরুর নেতৃত্বে কর্মী সম্মেলনে যোগদান করেন। সম্মেলন শেষে সন্ধ্যার পর বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের নেতা ইদ্রিস আলী অতর্কিত হামলা করে। হামলায় আব্বা অজ্ঞান হয়ে পড়ায় মারা গেছে ভেবে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় ইদ্রিস আলী। পরে বাবাকে হাটুলিয়া গ্রামের খোকন মিয়া ও কাইয়ুম বেপারী রাস্তার পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়দের সহযোগিতায় হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে অজ্ঞান অবস্থায় দীর্ঘ ১৩ দিন চিকিৎসার পর কিছুটা জ্ঞান ফিরলে বাবার সাথে কথা হয়। ওইসময় তিনি ইদ্রিস আলীর কথা জানান। বিষয়টি নিয়ে আমি বাদী হয়ে (৫জুন) ঈশ্বরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। লালন আক্ষেপ করে বলে, আমার ভাবতে কষ্ট হয়। আব্বা বিএনপির নিঃস্বার্থ কর্মী ছিলেন। বিএনপির কর্মী সম্মেলনে গিয়ে তিনি আহত হলেও বিএনপির কোন নেতা কর্মী বাবাকে হাসপাতালে দেখতে পর্যন্ত যাননি।
আব্দুল্লাহ’র জানাযায় উপস্থিত উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আমিরুল ইসলাম ভুঁইয়া মনি বলেন, আব্দুল্লাহ সেদিন বিএনপির কর্মী সম্মেলনে যোগ দিয়ছিলেন। বাড়ি ফেরার পথে অজ্ঞান অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করা হয়। আমরা ভেবেছিলাম তিনি সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। পরবর্তীতে তার জ্ঞান ফিরলে তাঁর উপর হামলার বিষয়টি জানতে পারি। তাঁকে খুন করা হয়েছে। আমরা বিএনপির একজন একনিষ্ট কর্মীকে হারিয়েছি। যারা তার খুনের সাথে জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করার দাবী জানাচ্ছি।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ওবায়দুর রহমান জানান, এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্তকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। হামলায় জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। বিষয়টি আমরা গুরুত্বে সাথে দেখছি।