

বুধবার ● ২ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » ঝালকাঠি » তেল খরচ লাখ টাকা, ভেটেরিনারি ক্লিনিক এর চিকিৎসা কোথায় ?
তেল খরচ লাখ টাকা, ভেটেরিনারি ক্লিনিক এর চিকিৎসা কোথায় ?
গাজী মো গিয়াস উদ্দিন বশির, ঝালকাঠি :: আপনার গরু কি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে? পশুচিকিৎসকের প্রয়োজন ? চিন্তা নেই। কারণ আপনার দরজায় আসবে সরকারি মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক।
হ্যাঁ, সরকার এমনই বলেছিল। কিন্তু বাস্তবে অন্য কিছু। প্রতিদিনই সড়ক দাপিয়ে চিকিৎসার গাড়ি যাচ্ছে। কিন্তু গন্তব্য সেবা গৃহীতার বাড়ি নয়, ব্যক্তিগত কাজে অন্য কোথাও। যেটা আইনগতভাবে পুরোপুরি অবৈধ।
দরিদ্র খামারির ডাক উপেক্ষা করে এই সেবার গাড়ি ব্যস্ত কেনাকাটায়, ভ্রমণে, এমনকি সরকারি দপ্তরের অজুহাতে ব্যক্তিসেবায়।
যে গাড়িতে থাকার কথা ছিল ঔষধ, পশু চিকিৎসার সরঞ্জাম আর ভ্যাকসিন। সেই গাড়িতে আজ বোঝাই হচ্ছে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। কার গাফিলতি? কার লোভ? আর কতখানি বিকৃত হয়েছে জনসেবার মান? লাখ লাখ টাকার তেল খরচ কিন্তু চিকিৎসা কোথায়?
ঝালকাঠি পশু হাসপাতালের ভ্রাম্যমান ক্লিনিকটি ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্প থেকে চালু হওয়া একটি বিশেষ উদ্যোগ। যার লক্ষ্য ছিল পশু চিকিৎসাকে সহজ সুলভ করে তোলা।
ভ্রাম্যমান ভেটেরিনারি ক্লিনিক শুধু একটি গাড়ি নয়, এটি ছিল চিকিৎসার গন্তব্যে পৌঁছানোর প্রতিশ্রুতি।
ঝালকাঠিতে সেই ক্লিনিক এখন জনসেবার বদলে হয়ে উঠেছে ব্যক্তিসেবার বাহন।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে ভ্রাম্যমাণ পশু চিকিৎসা ইউনিট মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিকটি চালু করেছিলো ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্প। যা ছিলো পশুপ্রেমিক খামারিদের জন্য চিকিৎসার আশার আলো। গবাদি পশুর জরুরি চিকিৎসা, রোগ নির্ণয়, ভ্যাকসিনেশন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা পৌঁছানো।
প্রতিটি ইউনিটে থাকার কথা ছিল চিকিৎসক, সহকারী, ওষুধ ও যন্ত্রপাতিসহ একটি সাজানো ভ্রাম্যমাণ ইউনিট। কিন্তু বাস্তবে তা ভিন্ন?
খামারিরা বলছেন, ঝালকাঠি জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের বরাদ্দ পাওয়া মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক নিয়মিত জনসেবা দিচ্ছে না। খামারিদের একাধিক অভিযোগ অনুসারে, গাড়িটি ব্যবহার হচ্ছে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামানের ব্যক্তিগত সফরে।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন। এই ছয় মাসে জ্বালানি খরচের তথ্য সংগ্রহ করেছে এ প্রতিবেদক। যা দেখে আপনার মাথা ঘুরে যাবে। সংগৃহীত তথ্য বলছে, ঝালকাঠি সদরে ১লক্ষ ১হাজার ৭০০ টাকা।
রাজাপুর উপজেলায় ১লক্ষ ১হাজার ৭০০ টাকা। নলছিটিতে ১লক্ষ ১হাজার ৭০০ টাকা এবং কাঠালিয়া উপজেলায় ৫৯ হাজার ৩০০ টাকা।
অথচ খামারিরা বলছেন ঐ সময়ের মধ্যে তাদের কাছে এই গাড়ি পৌঁছায়নি একবারও। তাহলে প্রশ্ন থেকেযায় এই তেল গেল কোথায়?
শুধু তাই নয়, মন্ত্রণালয়ের সরাসরি নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করে গাড়ির সামনে পতাকার দন্ড লাগিয়ে সড়ক ও মহাসড়কে দাপিয়ে ঘুড়ে বেড়ায় এই গাড়ি।
ভ্রাম্রমান ক্লিনিক সম্পর্কে। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জারিকৃত একটি নোটিশের কপি সংগ্রহ করেছে। ঐ নোটিশে বলা হয়েছে।
“প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় যে সকল উপজেলায় মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক দেয়া হয়েছে সে সকল মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক এ কোন ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড লাগানো যাবে না। অধিক্ষেত্র ও প্রাণি চিকিৎসা কাজ ব্যতিত অন্যত্র মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক ব্যবহার করা যাবে না। বিষয়টি কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশ প্রদান করা হলো।”
এখন প্রশ্ন হল : এই খরচ কী সেবার জন্য, নাকি অর্থলোপাটের ফাঁদ?
অন্যদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দে ঝালকাঠির পশু হাসপাতাল ও অফিস সংস্কারের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ইতিমধ্যেই ফেরত পাঠানো হয়েছে। যার বাজেটকৃত অর্থের পরিমাণ : জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়: ৩ লক্ষ টাকা,।জেলা ভেটেরিনারি হাসপাতাল: ৩ লক্ষ টাকা, সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস: ৫ লক্ষ টাকা, এবং কাঠালিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় ৫ লক্ষ টাকা।
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভবনের সীমানা প্রাচীর ও সংস্কারের জন্য এই বরাদ্দ এসেছিল। কিন্তু দায়িত্বশীলতা ও তদারকির অভাবে পুরো বাজেট ফেরত গেছে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘একবার ফেরত গেলে ভবিষ্যতে বরাদ্দ পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে।’
এমন অভিযোগের মধ্যেই সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে যোগ দিয়েছেন নতুন কর্মকর্তা (ইউএলও) ডা. ফারুক হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘গাড়িটি এখনো আমি বুঝে পাইনি। বুঝে নিলে আমি নিশ্চিত করবো এটি কেবল চিকিৎসার জন্যই ব্যবহার হবে। প্রত্যন্ত গ্রামেও এটি পাঠানো হবে রুটিন করে।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ডিএলও) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে তা সত্য নয়। গাড়িতে জিপিএস ট্রাকার লাগানো আছে, মন্ত্রণালয় ট্র্যাক করতে পারে। কোথায় যাই সবই রেকর্ড হয়।’
জিপিএস ট্রাকার খুলে গাড়ি চালানো হয় কিনা সে প্রশ্নে নিরব থাকেন ক্লিনিক গাড়ির চালক।