

বৃহস্পতিবার ● ২ অক্টোবর ২০২৫
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » ইউপিডিএফ-এর ভয়ঙ্কর চক্রান্তের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ সমাবেশ
ইউপিডিএফ-এর ভয়ঙ্কর চক্রান্তের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ সমাবেশ
মো. কামরুল ইসলাম :: চট্টগ্রাম, ০২ অক্টোবর, ২০২৫: পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করার নতুন এক চক্রান্তের প্রতিবাদে আজ উত্তাল হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণ। ধর্ষণের ‘মিথ্যা অভিযোগ’কে কেন্দ্র করে সশস্ত্র উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইউপিডিএফ (ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট)-এর সাম্প্রতিক সহিংসতা, অবরোধ, সশস্ত্র হামলা, মসজিদে অগ্নিসংযোগ এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দেওয়ার জঘন্য অপতৎপরতার বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) ও যুব পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি এক বিশাল মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ-এর আয়োজন করে।
হাজারো প্রতিবাদী জনতার অংশগ্রহণে এই সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে ইউপিডিএফসহ সকল বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা এবং প্রত্যাহারকৃত সেনা ক্যাম্পগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠার জোরালো দাবি জানান। এটি পাহাড়ের সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে এক সুস্পষ্ট বার্তা তারা আর সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি হয়ে থাকতে রাজি নয়।
ষড়যন্ত্রের নীলনকশা ও জঘন্য কর্মকাণ্ড সাম্প্রতিক সময়ে খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ তাদের পুরনো কৌশল অনুযায়ী আবারও পাহাড়ের সামাজিক সম্প্রীতিকে ধ্বংস করার জন্য ভয়ঙ্কর কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। বক্তাদের অভিযোগ, ধর্ষণের একটি ‘ভিত্তিহীন’ অভিযোগকে পুঁজি করে তারা অবরোধের নামে নিরীহ সাধারণ মানুষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর উপর প্রকাশ্যে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর চেয়েও জঘন্য কাজ হলো, তারা দোকানপাট লুটপাট, মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় মসজিদে অগ্নিসংযোগ এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দেওয়ার মতো কাজ করেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের (পিসিএনপি) চেয়ারম্যান কাজী মজিবর রহমান এই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি তার বক্তৃতায় বলেন, পাহাড়ে আজ এক ভয়ংকর ষড়যন্ত্র চলছে। ভারতের কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ সরাসরি এই ষড়যন্ত্রে জড়িত এবং তাদের নির্দেশেই ইউপিডিএফসহ বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীরা পাহাড়ে অশান্তি ছড়াচ্ছে।” তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, বিদেশী শক্তির মদদে পরিচালিত সন্ত্রাসীরা যতই শক্তিশালী হোক না কেন, রাষ্ট্রের দৃঢ় পদক্ষেপ ও জনগণের ঐক্যের কাছে তারা কোনোদিন সফল হতে পারবে না।
মিথ্যা নাটকের আড়ালে সত্য আড়াল করার চেষ্টা বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, ধর্ষণের মতো সংবেদনশীল একটি বিষয়কে ব্যবহার করে ইউপিডিএফ আন্তর্জাতিক মহলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ মেডিকেল রিপোর্ট এবং ডিএনএ পরীক্ষায় প্রমাণ হয়েছে যে অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
ছাত্র পরিষদের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন কায়েস বলেন, পাহাড়ের প্রকৃত সমস্যা উন্নয়ন, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও মৌলিক অধিকার। অথচ সন্ত্রাসীরা এসব দাবি থেকে জনগণকে সরিয়ে নিতে বিভ্রান্তিকর আন্দোলনের ফাঁদ তৈরি করছে। সময় এসেছে পাহাড়ের সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে এই ভুয়া আন্দোলনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর।
যুব পরিষদের সভাপতি এডভোকেট নূর হোসেন ইউপিডিএফ-এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দেওয়ার চক্রান্তের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, পাহাড়ি-বাঙালি বিভাজন তৈরি করে ইউপিডিএফ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দিতে চাইছে। সম্প্রতি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় মসজিদে অগ্নিসংযোগের ঘটনা তারই প্রমাণ। এটি শুধু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত নয়, বরং সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়ানোর একটি জঘন্য প্রচেষ্টা। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, রাষ্ট্রের ভিতরে আরেকটি রাষ্ট্র তৈরি করার নীলনকশা কোনোদিন সফল হতে দেওয়া হবে না।
৫ দফা দাবিতে আলটিমেটাম মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বক্তারা সরকারের কাছে পাহাড়ের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে ৫ দফা দাবি উত্থাপন করেন। এই দাবিগুলো হলো:
১. অবিলম্বে ইউপিডিএফসহ সকল বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন নিষিদ্ধ করতে হবে।
২. প্রত্যাহারকৃত সেনা ক্যাম্প পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে পাহাড়ে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. সাধারণ মানুষের উপর হামলা, লুটপাট, মসজিদে অগ্নিসংযোগ এবং ধর্ষণের মিথ্যা নাটক সাজানোদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
৪. পাহাড়ে বসবাসরত সকল মানুষের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
৫. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় প্রশাসনকে কঠোর নজরদারি ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
জনগণের ঐক্যই শান্তির একমাত্র পথ সমাবেশে উপস্থিত পিসিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা এডভোকেট পারভেজ তালুকদার, পিসিসিপি সাধারণ সম্পাদক হাবীব আজম এবং যুব পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আফসার রনিসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধভাবে এই বার্তা দেন যে, সরকার যদি দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়, তবে পাহাড়ের শান্তিপ্রিয় মানুষ আর নিরাপদ থাকবে না।
প্রধান অতিথি কাজী মজিবর রহমান জোর দিয়ে বলেন, “পাহাড়ের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনা ক্যাম্প পুনঃস্থাপন এখন সময়ের অপরিহার্য দাবি।
বক্তারা ঘোষণা করেন, জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই পাহাড় থেকে সন্ত্রাস উচ্ছেদ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ। ছাত্র পরিষদ ও যুব পরিষদ এই জাতীয় স্বার্থের সংগ্রামে যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত বলে অঙ্গীকার করে। এই প্রতিবাদী জনতা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তারা আর সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি হয়ে থাকতে চায় না। পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর নিষিদ্ধকরণ এবং সেনা ক্যাম্প পুনঃস্থাপন এখন আর বিলম্ব করার মতো বিষয় নয়, জনগণ সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের অপেক্ষায়।