

রবিবার ● ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » খাগড়াছড়ির সহিংসতায় তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন রয়েছে : সুপ্রদীপ চাকমা
খাগড়াছড়ির সহিংসতায় তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন রয়েছে : সুপ্রদীপ চাকমা
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :: খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার সহিংসতার ঘটনায় তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন রয়েছে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা মন্তব্য করেছেন।
রবিবার ২৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
খাগড়াছড়িতে চলমান উদ্ভূত পরিস্থিতি উত্তরণের উপায় নিয়ে বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা।
সভায় পার্বত্য উপদেষ্টা উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পাহাড়ি-বাঙালি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
তিনি পাহাড়ে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি রোধ ও পরিস্থিতি শান্ত রাখতে আইনশৃঙ্খলা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান।
তিনি আরও বলেন, পাহাড়ের শুধুমাত্র সরকারি বাহিনীর কাছেই অস্ত্র থাকবে। এর বাইরে কারো কাছে অস্ত্র থাকতে পারবে না। চাঁদাবাজির কারণেই এ এলাকায় উন্নয়নে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। প্রশাসনকে এ বিষয়ে আরও কঠোর অবস্থান নিতে হবে।
এদিকে, রোববার সকাল থেকে খাগড়াছড়ি পৌর শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন দেখা যায়। এ ছাড়াও খাগড়াছড়িতে জেলা সদরে মোতায়েন করা হয়েছে সাত প্লাটুন বিজিবি। সকাল থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে চলাচলকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।বন্ধ রয়েছে শহরের দোকানপাট।
খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন মো. ছাবের বলেন, দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় অন্তত ২৩ জন আহত হয়। এদের মধ্যে ২১ জন প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেছে। দুজন খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল কালবেলাকে বলেন, শনিবার দুপুরের পর উপজেলা ইউএনও সংলগ্ন এলাকায় দুপক্ষের মধ্যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। পরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ নিরাপত্তায় যৌথভাবে কাজ করছে। পরে সাউন্ড গ্রেনেড দিয়ে উত্তেজিত দুপক্ষকে আমরা সরিয়ে দিই। নতুন করে যাতে সহিংসতার ঘটনা না ঘটে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানিয়েছেন, পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা বহাল থাকবে।
প্রসঙ্গত, শনিবার দুপুরে সদর উপজেলা পরিষদ, মহাজন পাড়া, নারিকেল বাগান, চেঙ্গী স্কোয়ার ও শহীদ কাদের সড়কে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। স্বনির্ভর ও নারিকেল বাগান এলাকায় কিছু দোকানে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খাগড়াছড়ি পৌরসভা, সদর ও গুইমারা উপজেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। বিজিবির সাত প্লাটুন সদস্য ছাড়াও সেনাবাহিনী ও পুলিশ শহরের বিভিন্ন সড়কে টহল দিচ্ছে।
এসব সহিংসতায় অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া, রাতে খাগড়াছড়িতে বৌদ্ধ বিহারে নাশকতার প্রস্তুতিকালে তিন যুবককে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ ঘটনার কারণে সাজেক ভ্রমণে যাওয়া প্রায় দুই হাজার পর্যটক আটকা পড়েন। পরে বিশেষ নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তারা খাগড়াছড়ি শহরে ফিরে এসে রাতেই নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা হন। তবে এখনো খাগড়াছড়ির বিভিন্ন হোটেলে বিপুল সংখ্যক পর্যটক দুর্ভোগে রয়েছে।
‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে শনিবার সকাল ও সন্ধ্যায় সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় জেলার বিভিন্ন স্থানে গাছের গুড়ি ফেলে ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করা হয়। আলুটিলায় একটি অ্যাম্বুলেন্স এবং নারানখাইয়া এলাকায় একটি অটোরিকশা ভাঙচুর করা হয়।
বর্তমানে এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।