বুধবার ● ৯ ডিসেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » এক্সক্লুসিভ » মানবাধিকার উন্নয়ন ও সংরক্ষণে পুলিশ ও গণমাধ্যমের ভূমিকা
মানবাধিকার উন্নয়ন ও সংরক্ষণে পুলিশ ও গণমাধ্যমের ভূমিকা
লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল :: মানুষ পৃথিবীতে স্বাধীনভাবে মানবিক মর্যাদাসহ বেঁচে থাকার জন্যে এবং তাঁর স্বাভাবিক গুণাবলী ও বৃত্তির প্রকাশ ঘটাতে প্রয়োজনীয় অধিকারগুলোকেই বলা হয় মানবাধিকার ৷ মানুষের এ অধিকারগুলো বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ৷ ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এই মানবাধিকার ঘোষিত হয়৷ একে বলা হয়, মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র”৷ বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য ৷ তাই আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার মূল দলিল “সংবিধান” এ মানবাধিকারকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে ৷ ফলে মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্যে সরকার তৈরী করেছে বিভিন্ন আইন৷ যথা- শিশু অধিকার আইন, বাধ্যতামূলক প্রাথমিকশিৰা আইন, শিশু ও নারী নির্যাতন রোধ আইন ইত্যাদি ৷
মানবাধিকারের বিশ্বজনীন ঘোষণা সত্ত্বেও প্রায়ই আমাদের মানবাধিকার ক্ষুন্ন হয় ৷ রেডিও, টেলিভিশন ও সাংবাদপত্রের পাতায় আমরা এরকম ঘটনা প্রায়ই শুনি ও দেখি ৷ আমাদের দেশে এ রকম কয়েকটি উলেস্নখযোগ্য ঘটনা হলো- শিশুশ্রম, নারী ও শিশু পাচার, এসিড নিৰেপ, সড়ক দূর্ঘটনা, সামপ্রদায়িকতা, ও যৌতুকের কারণে অত্যাচার ইত্যাদি ৷
উল্লেখিত মানবাধিকার বিরোধী কাজ সম্পর্কে সকলকে সচেতন হতে হবে এবং প্রতিকার করার জন্যে বিদ্যমান আইনের কার্যকর প্রয়োগ আবশ্যক ৷ এ ক্ষেত্রে পুলিশ ও গণমাধ্যমের ভূমিকা ব্যাপক ৷ আইনের প্রয়োগিক প্রক্রিয়ায় মানবাধিকার নিশ্চিত করার কাজটি যেমন পুলিশ বিভাগকে করতে হচ্ছে তেমনি এই বিষয়ে জনমত তথা গণসচেতনতা তৈরীর দায়িত্ব প্রধানত গণমাধ্যমের ৷ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মৌলিক মানবাধিকার রক্ষা এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে ৷ এই সকল সাংবিধানিক লক্ষ অর্জনের জন্যেই মূলত পুলিশ ও গণমাধ্যম তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে ৷ রাষ্ট্রের স্বার্থে, সমাজ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করায় মূলত পুলিশ ও গণমাধ্যমের দায়িত্ব ৷
মানবাধিকার উন্নয়ন ও সংরক্ষণে পুলিশ ও গণমাধ্যমের সমন্বয় আবশ্যক ৷ এতে রাষ্ট্র, সমাজ এবং জনগণ অধিক সেবা ও সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন ৷
আমরা যদি উন্নত বিশ্বের দিকে তাকিয়ে দেখি তাহলে দেখতে পাব যে, গণতন্ত্র প্রচলিত আছে এইরূপ সকল দেশেই পুলিশ ও গণমাধ্যম সমূহের মধ্যে সৌহার্দ্যের সম্পর্ক ও সমন্বয় বিদ্যমান রয়েছে ৷ ফলে এই সকল প্রতিষ্ঠানের সাথে সেখানের জনগণেরও সু-সম্পর্ক বিরাজমান৷ ফলে শান্তি- শৃঙ্খলা রৰা, অপরাধ দমন, আইনের প্রয়োগ এবং জনস্বার্থে যে কোন কার্যক্রম পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে তারা পালন করেন ৷ তাই সেখানে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিরাপদ থাকে ৷ পুলিশ ও গণমাধ্যমসমূহ অন্যায়ের বিরুদ্ধে, সত্যের পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে দেশ ও জনগণের কল্যাণে দায়িত্ব পালন করছেন, তবে তাদের মধ্যে আরো অধিক সমন্বয় থাকা আবশ্যক৷ কারণ সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে নিম্নবর্ণিত সুবিধাবলী লাভ করা সম্ভব ৷
যথাঃ
১৷ রাষ্ট্র, সমাজ ও জনগণের অধিক সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে ৷
২৷ জনগণের প্রয়োজনে পুলিশ দ্রুত তাদের সেবা প্রদান করতে পারবেন৷
৩৷ দেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা সুদৃঢ় হবে ৷
৪৷ মানবাধিকার সমূহ প্রতিষ্ঠা ও সংরৰণ করা সহজতর হবে ৷
৫৷ পুলিশবাহিনী গণমুখী তথা জনগণের বন্ধু হওয়ার সুযোগ পাবে ৷
৬৷ নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠভাবে কাজ করা সহজ হবে ৷
৭৷ দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন অর্থাত্ সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে ৷
মানবাধিকার উন্নয়ন ও সংরক্ষণে পুলিশ ও গণমাধ্যমসমূহের কার্যক্রমে সমন্বয় খুবই প্রয়োজন ৷ তবে সমন্বয়ের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি উল্লেখিত প্রতিষ্ঠান দুটিকে আরো কতিপয় সাধারণ শর্ত পালন করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে৷ যথাঃ
১৷ পুলিশ ও গণমাধ্যম সমূহকে সর্বদা দলমতের উর্ধে থাকতে হবে ৷
২৷ সর্বদা নিরপেক্ষ ও নিভীক থাকতে হবে ৷
৩৷ সর্বক্ষেত্রে সমঅধিকার, আইনগত অধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে ৷
৪৷ পারস্পারিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কার্যকরভাবে অপরাধ রোধ, উদঘাটন, দমন, সামাজিক শান্তি ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে ৷
৫৷ পুলিশ বাহিনীর সদস্য ও গণমাধ্যম কর্মীদের দক্ষ, কর্মনিষ্ঠ ও আধুনিক করে তোলার জন্যে যুগোপযোগী ও বিজ্ঞানসম্মত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে ৷
৬৷ কারো অনভিপ্রেত অন্যায় নির্দেশ বা ক্ষুদ্র স্বার্থ চিন্তা তাকে যেন ক্ষমতা অপব্যবহারে লিপ্ত না করে তা নিশ্চত করতে হবে ৷
৭৷ কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে ৷
৮৷ জনগণের বিশ্বাস কিংবা আস্থা অর্জনে কাজ করতে হবে ৷
৯৷ নিয়মানুবর্তিতা, সততা ও নিষ্ঠার সাথে স্বীয় দায়িত্ব পালন করতে হবে ৷
১০৷ জনগণের চাহিদা মোতাবেক গণমুখী ভূমিকা পালন করতে হবে ৷
১১৷ জনগণের ডাকে দ্রুত সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে ৷
১২৷ বিজ্ঞান ভিত্তিক আধুনিক অনুসন্ধান কিংবা তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতির ব্যবহার করতে হবে ৷
১৩৷ দুনীতি দমনে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে ৷
১৪৷ রাষ্ট্র, সরকার ও জনগণের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে কাজ করতে হবে ৷ দেশে সুদৃঢ় গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পুলিশ ও গণমাধ্যমের কার্যক্রমে সমন্বয় থাকা বাঞ্চনীয় ৷ মানবাধিকার উন্নয়ন ও সংরক্ষণে পুলিশ বাহিনী ও গণমাধ্যমকে সর্বদা নিরপেক্ষ, সততা ও নিষ্ঠার সাথে স্বীয় দায়িত্ব পালন করতে হবে ৷ এতে রাষ্ট্র, সরকার, সমাজ ও জনগণ সবাই অধিক উপকৃত হবেন ৷
লেখক : লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল
(শিক্ষক, কলাম লেখক ও মানবাধিকার কর্মী)
উপদেষ্টা, সামাজিক পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা৷
ফোন : ০১৫৫২৬৩১১১৮ ই- মেইল :