বুধবার ● ৮ ডিসেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » কৃষি » টানা ৩দিনের বৃষ্টিতে ঝিনাইদহে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, বিপাকে চাষীরা
টানা ৩দিনের বৃষ্টিতে ঝিনাইদহে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, বিপাকে চাষীরা
![]()
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে গত ৩ দিনের একটানা বৃষ্টিতে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। বিশেষ করে পেঁয়াজ চাষিদের মাথায় হাত। এ ছাড়াও কৃষকের ক্ষেতে কেটে রাখা পাকা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষতি হয়েছে উঠতি ফসলসহ গমের। ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে কাজ করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। শৈলকুপা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর শৈলকুপা উপজেলায় পেঁয়াজ ৭৮৯০ হেক্টর,রশুন ১৭৫৫ হেক্টর,গম ৩১৯০ হেক্টর, আমনধান ১২২২৫ হেক্টর,মশুর ডাল ৩০৯০ হেক্টর,সরিষা ২৭৮৫ হেক্টর,অন্যান্য ডাল ২৫০ হেক্টর,শীতকালিন সব্জি ৩৪১০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার অধিক চাষ করা শুরু হয়েছিল। কিন্তু টানা বৃষ্টির কারণে কৃষকের সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হতে চলেছে। ক্ষেতে কেটে রাখা পাকা ধান তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির কারণে ক্ষেতেই এ ধান হতে কল বেরিয়ে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।গতবছরের তুলনায় এ উপজেলায় বেশী পেঁয়াজ চাষের লক্ষমাত্রা নিয়ে কৃষক অক্টোবর মাসের শেষদিকে আগাম জাতের পেঁয়াজের বীজ বীজতলায় ফেলতে শুরু করে। কিন্তু নভেম্বর মাসে ১২ তারিখ থেকে তিন দিনের অতি বৃষ্টির কারণে ক্ষেতেই এ বীজ বিনষ্ট হয়। নতুন উদ্যোমে আবারও বীজ তলায় পেঁয়াজ বীজ বপন করে। গত ৫ই ডিসেম্বরে আবারও তিন দিনের টানা বর্ষনে সে বীজগুলোও বিনষ্ঠ হয়ে গেছে। পর পর দুই বার বৃষ্টির কারণে বীজতলাতেই কৃষকের স্বপ্ন তলিয়ে যায়। যার কারণে বেশীর ভাগ কৃষক এবারে পেঁয়াজ চাষ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। অনেকে বিকল্প ফসল চাষের কথা ভাবছেন। দেশের আভ্যন্তরিন পেঁয়াজের চাহিদার তুলনায় শতকরা ২০ ভাগ পেঁয়াজ এ উপজেলাতেই উৎপাদন হয়। পেঁয়াজ মৌসুমে এ এলাকা থেকে প্রতিদিন শতশত ট্রাক পেঁয়াজ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায়। এবারের এই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য কৃষকদের মাঝে দ্রুত সময়ের মধ্যে সার ও বীজ প্রদান করলে কিছুটা ক্ষতিপুরণ হবে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা। এ ব্যাপারে ধলহরাচন্দ্র গ্রামের কৃষক শফিউল ইসলাম জানান তিনদিনের বৃষ্টিতে আমার জমির পাকাধান ওরোপনকৃত পেঁয়াজের বীজতলা তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দামুকদিয়া গ্রামের কৃষক হোসেন শেখ জানান, বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হলেও এলাকায় কোন কৃষিকর্মকর্তার দেখা মিলছেনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকরাম হোসেন জানান, বৃষ্টির কারণে ফসলের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে। ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে উপজেলা সদর, হিতামপুর, হাজরামিনা, বিজুলিয়া, মনোহরপুর, পাইকপাড়া, দামুকদিয়া, হরিহরা, সাধুহাটি, বকদিয়া, ধলহরাচন্দ্র, ধাওড়া, শিতালি, হাটফাজিলপুরসহ উপজেলার সকলগ্রামেই কমবেশী পেঁয়াজ সহ সকল রবীশষ্য চাষ করা হয়ে থাকে। অসময়ে ২০ দিনের ব্যাবধানে টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে এখন শৈলকুপা উপজেলা জুড়ে কৃষকের মাঝে শুধুই কান্না। বর্তমানে কৃষকরা পথে বসার উপক্রম হয়েছে। অনেকে এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে পেঁয়াজ চাষ শুরু করে। এখন যে অবস্থা, এই ঋণ পরিশোধ করার পথ খুঁজে পাচ্ছে না ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেফালি বেগম বলেন, নিন্মচাপ জাওয়াদের প্রভাবে তিনদিনের বৃষ্টিতে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের তালিকা তৈরি করতে বলেছি। এদিকে ঘুর্ণিঝড় জাওয়াদের ঝড় না লাগলেও গত দুই দিনের প্রবল বৃষ্টি পাতের কারণে শষ্য ভান্ডার হিসাবে খ্যাত ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় বোর বীজতলা ,আমন ধান, পেয়াজ,মাস কলাই ,আলু ,শরিষা ও ভুট্টা ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষেত গুলো এখনও পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। মহেশপুর পৌর এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে কৃষকরা জমিতে আমন ধান কাটলেও সে গুলা ঘরে তুলার আগেই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া বোর ধানের অধিকাংশ বীজ তলা পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। গাড়াবাড়ীয়া গ্রামের কৃষক নুর হোসেন জানান, তার ৫বিঘা জমির ধান ও তিন বিঘা জমির ভুট্টা ক্ষেত পানির নিচে। তিনি জমির আইলে দাঁড়িয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন। একই চিত্র পাতিবিলা গ্রামের মাঠেরও। পুরন্দপুর গ্রামের মাহফুজ খান জানান, তার ৫বিঘা জমিতে আলুর চাষ ছিলো। আলু কয়েকদিন পরেই বাজারে উঠার উপযোগি। কিন্তু দুই দিনের অতি বৃষ্টিতে আলুর জমি ডুবে গেছে। তাতে তার প্রায় দুই লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে। এ ব্যাপারে মহেশপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হাসান আলী জানান, অতি বৃষ্টির কারণে মহেশপুরে আমন ধান ও বোর বীজতলা সহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি সাধন হয়েছে। আমরা ক্ষতির পরিমান জানার চেষ্টা করছি। আবার অসময়ে বৃষ্টির কারণে কৃষকের স্বপ্ন ভেস্তে গেল। এই তো সেদিন আগাম পাকা আমন ধানের খেত দেখে কৃষক স্বপ্নে ভাসছিল কিন্তু নিন্মচাপে লাগাতার বৃষ্টিতে পচে নষ্ট হয় আমন ধান। এরপর কৃষকেরা তাকিয়েছিলেন আমনের নাবি ধানের দিকে। কিন্তু চলমান নিন্মচাপের প্রভাবে দুই দিনের বৃষ্টিতে সেই নাবি ক্ষেতের ধানও পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। এ বছর আমন মৌসুমে দফায় দফায় প্রকৃতির এমন খামখেয়ালিতে চরম ক্ষতিতে পড়েছেন আমন চাষিরা। সারা মাঠে পানি থই থই করছে। অপেক্ষাকৃত বেশি নিচু জমির ধান পানিতে ভেসে চলে যাচ্ছে। কৃষকেরা আটকাতে চেষ্টা করছেন কিন্তু শীতের হিম শীতল বৃষ্টিতে ভিজে কৃষক অল্পতেই কাবু হয়ে পড়ছেন। বাধ্য হয়ে ধানের আশা মলিন হয়ে পড়ছে তাদের। মহেশ্বরচাঁদা,একতারপুর, সিংদহ. কোলা,খালকুরাসহ বিভিন্ন গ্রামের মাঠে দেখা যায়, বৃষ্টি পড়ছে, কৃষকেরা মাঠ থেকে ধান বাড়ি নিতে মহাব্যাস্ত গরুর গাড়ি সারি বেঁধে মাঠে মাঠে। অন্য ইঞ্জিনচালিত বিভিন্ন ধরনের গাড়িও মাঠে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই শুরু ভারি বৃষ্টি। আর ওই রাত থেকেই লাগাতর বৃষ্টি। মঙ্গলবার মাঠের পর মাঠের ধান পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। কৃষকেরা কেউ কেউ ধান বাঁচানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ধানের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। এবছর আমন নিয়ে কৃষকদের ঝামেলা যেন কোনভাবেই পিছু ছাড়ছে না। অনেকের ধান পানির স্রোতে ভেসে চোলে গেছে বিভিন্ন ক্ষেত ও বিল এলাকায়। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে এ উপজেলার ধানচাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু চাষ হয়েছে ১৮ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫০ হেক্টর বেশি জমিতে আমন চাষ হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ জমির ধান কৃষক ঘরে তুলতে পেরেছেন। বাকি ধানের ১০ ভাগ বাড়িতে এনে পালা দিয়ে রেখেছেন, বাকিগুলো খেতেই পানিতে ডুবে গেছে। কালীগঞ্জ উপজেলার খেদাপাড়া (ঘোষপাড়া) গ্রামের কৃষক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ জানান, প্রথম যখন আগাম আমন ধান কেটেছিলাম তখনও বৃষ্টিতে ধান খেতেই নষ্ট হয়েছিল। আবার নাবি ধান কেটেছি এর পরদিন থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সকালে দেখলাম খেতে কেটে ফেলে রাখা ধান পানিতে একাকার হয়ে গেছে। নিজের জমি কোনটি পানির জন্য চেনার উপায় নেই। এবছর আমনের একটি ধানও ঘরে উঠবে না।খড়িকাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, এ বছর ৫ বিঘা জমিতে আমনের চাষ করেছিলাম। আগে ২ বিঘা জমির ধান বাড়িতে এনে মাড়াই শেষ করেছি। বেশ ভালো ফলন হয়েছে। মাঠে আরও যে খেতগুলো রয়েছে সেগুলোর ধান আরও বেশি ভালো ছিল। কিন্তু এ খেতগুলো পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার মোহায়মেন আক্তার জানান, চলমান বৈরি আবহাওয়ায় শেষ মুহুর্তে আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেলো। এমন অবস্থায় কারও কিছু করার নেই কারণ প্রকৃতিতে কারও হাত নেই।





আত্রাইয়ে পাট চাষে দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা
কাউখালীতে কৃষি অধিদপ্তরের পার্টনার ফিল্ড স্কুল কংগ্রেস অনুষ্ঠিত
কাউখালীতে জাতীয় ফল মেলা অনুষ্ঠিত
ঝালকাঠিতে আম বাগান হয়ে উঠেছে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত
বাগেরহাটে লবণাক্ত পতিত জমিতে মাঠজুড়ে সূর্যমূখীর হাঁসি ঝিলিক
আত্রাইয়ে বেড়েছে পেঁয়াজের বীজ চাষ
শরীরের জন্য পুষ্টি, তাপ ও শক্তি যোগাতে পুষ্টিকর খাবারে কোনো বিকল্প নেই : মনিরুজ্জামান খান
ফটিকছড়িতে বোরো চাষে নারী শ্রমিকরা
রাউজানে সরিষা ক্ষেতে হলুদের হাতছানি
সুরাইয়া বিলকিসের বিষমুক্ত ছাদ বাগান