শনিবার ● ৭ জানুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » শুঁটকি উৎপাদনে বরগুনা তালতলীর বৈচিত্রময় চিত্র
শুঁটকি উৎপাদনে বরগুনা তালতলীর বৈচিত্রময় চিত্র
মুতাসিম বিল্লাহ,বরগুনা প্রতিনিধি :: (২৪ পৌষ ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.০১মি.)এখন শুঁটকি তৈরি করার মৌসুম তাই মোগো এই পল্লীর সবাই ব্যস্ত মাছ শুকিয়ে শুঁটকি করার পাইন্যে- আঞ্চলিক ভাষায় এমনটিই বলেন বরগুনা জেলে তালতলীর শুটকি পল্লীর বাসিন্দা - বজলুর রহমান।
বরগুনা জেলার অন্যতম পেশাদার অঞ্চল তালতলী উপজেলার শুঁটকি পল্লী অঞ্চল।
মৎস আহরন করে জীবিকা নির্বাহকারী জেলেরা শুঁটকি মাছের উৎপাদনের মাধ্যমে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলার সাথে সাথে এর প্রভাব ঘটাচ্ছে সারাদেশে। এখান থেকে উৎপাদিত শুঁটকি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
যার দ্ধারা মানুষের দৈনিক চাহিদা মিটছে মৎস অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায় চলতি বছর এখান থেকে উৎপাদিত প্রায় ৪৫-৬০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন করা সম্ভব হবে যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় আনুমানিক কোটি টাকার উপরে।
বরগুনা জেলা মৎস অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বরগুনায় চলতি বছরে তালতলী উপজেলা যে পরিমান শুঁটকি উৎপাদন করা হচ্ছে তাতে প্রায় ছেয়ে গেছে এই অঞ্চলটি । মৎস্য সম্পদের পরিসরতায় তালতলী এলাকার মৎস্যজীবীদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে এই শুঁটকি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
সাগরের মাছ স্বাদ যুক্ত হওয়ায় এ মাছের শুঁটকির চাহিদাও বেশি।
সরেজমিনে এ এলাকার কিছু অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে তালতলীর এসব পল্লীর শুঁটকি শুকানোর অন্যতম মাধ্যম চাতালে গিয়ে দেখা যায় দলবেধে শিশু,নারী ও পুরুষ শ্রমিকেরা সবাই এখন শুঁটকি শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে।
এসব অঞ্চলে দেখা মিলছে শুঁটকি চাষীদের নানা রুপি বৈচিত্র। এ অঞ্চলের কাউকে দেখা গেছে চড়া রৌদ্দের মধ্যে শুঁটকি ওলট পালট করে দিতে আবার কাউকে দেখা যাচ্ছে ভাল-মন্দ,ছোট-বড়, এবং কাচকি বাদে শুঁটকি আলাদা করার মাধ্যমে ব্যস্ত সময় পার করছে।
এসব অঞ্চল ঘুরে বিশেষ করে বর্তমানে দেখা মিলে বাজার না হলেও অস্থায়ী বাজারের মতো।
যেখানে দুর দুরান্ত থেকে আগত ব্যবসায়িরা শুটকি কিনতে ব্যস্ত ।
এমনই বরিশাল সদর থেকে আসা একজনের সাথে কথা বলে জানা গেল তার নাম মো: রফিকুল ইসলাম, তাকে প্রশ্ন করা হলো এখানে কেন এসেছেন? সে বললো এখান থেকে আমি প্রতিবছর শুটকি পাইকারি মূল্যে ক্রয় করি তারপর সেটা বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়ে দিই।
বৈচিত্রময় তালতলীর এই শুটকি পল্লীর বর্তমান চিত্র যেমন নগরীর চিত্রের মতই এখানে দেখা যাচ্ছে বেশ অনেক গুলো মালবাহী ট্রাক-ভ্যান, এ সম্পার্কে ট্রাক চালক রহিমকে জিজ্ঞাসা করলাম এখানে এতো ট্রাকের সমষ্টি কেন?
তিনি বলেন এখন শুটকির ক্রয় বিক্রয়ের সময় তাই বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়িরা ট্রাক নিয়ে এই পল্লীতে আসে শুটকি ক্রয়ের জন্য। তালতলীর শুঁটকি পল্লীর অন্য এক শুঁটকি ব্যবসায়ী কাঞ্চন মিয়া বলেন, এহোন শুঁটকি করার সিজোন এই সিজোনে মোগো পল্লীর সবাই মাছ শুকাইয়া শুঁটকি বানায় এইহ্যার পর তা আড়তদারের আইয়্যা কিন্যা নেই।
শুটকির মূল্য সম্পর্কে তার কাছে জানরত চাইলে তিনি বলেন, এই ধরেন মোরা তো পাইকারি দিই তাতে শুঁটকি ভালো হইলে প্রত্যেক কেজি প্রায়(১৫০-২০০)টাকা
বেচতে পারি।
তালতলি শুটকি পল্লী এলাকার সুংকার দেব বলেন এখান থেকে উৎপাদিত শুঁটকি কোন ঔষুদ বা ফরমালিন না ব্যবহার করেই তৈরি করা হয়। যার কারনে এ অঞ্চলের শুঁটকির চাহিদা প্রায় তুঙ্গে।
রুপকার বৈচিত্রময় এই পল্লীর বর্তমান দৃশ্যটা যেন চোখ জুড়ানো। কেউ থেমে নেই, সবাই পার করছে ব্যস্ত সময়, আবার কাউকে দেখা যায় এখান থেকে চলাচলরত স্থানীয়রাও গাড়ি থামিয়ে বিভিন্ন ধরনের শুঁটকি কিনছেন।
এই শুটকি পল্লীর সংরক্ষণের জন্য জেলা প্রসাশকের কোন পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক ড.মহাম্মদ বশিরুল আলম বলেন আমি কিছু দিন আগে এই পল্লী ঘুরে এসেছি, এখানের পরিবেশ অত্যন্ত কোমল,
সারা দেশে এখানের শুঁটকির চাহিদা মোটামুটি ভালোই। তবে এ অঞ্চলে
একটা শুঁটকি সংরক্ষণাগার দরকার, অতএব, আমরা এ পল্লীতে কিছুদিনের মধ্যেই শুঁটকি সংরক্ষণাগারের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।